ইয়েমেনের হুদাইদা বন্দরে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, বহু হতাহত
Published: 6th, May 2025 GMT
ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৬ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার (৫ মে) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে হোদেইদাহ বন্দরে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলে হামলা চালানোর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হুতি নিয়ন্ত্রিত হোদেইদাহ বন্দরে হামলা চালানো হয়েছে।
এর আগে, রবিবার (৪ মে) ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দর বেন গুরিয়নের কাছে ইরান সমর্থিত হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এর একদিন পরেই পাল্টা হামলার কথা জানাল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হোদেইদাহ এবং এর আশেপাশের এলাকায় হুতি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে হুতি পরিচালিত সংবাদ সংস্থা সাবা জানিয়েছে, হোদেইদাহ বন্দরে সোমবারের এই হামলায় কমপক্ষে একজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলার পর হুতিরা বন্দর এবং সিমেন্ট কারখানার আশেপাশের এলাকা বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, বন্দরে ক্ষতির পরিমাণ অজানা, তবে হামলা এবং আগুনের তীব্রতা কন্টেইনারের বার্থে মারাত্মক ক্ষতি করেছে।
অন্য দুটি সূত্র বন্দরের পাঁচটি ডক, গুদাম এবং শুল্ক এলাকার ৭০ শতাংশ ক্ষতি অনুমান করেছে। বন্দরের একজন কর্মী জানিয়েছেন, দুটি জাহাজ পণ্য খালাস করার সময় এই হামলা চালানো হয়েছিল, বন্দরে যান চলাচল সম্পূর্ণ স্থবির ছিল।
এডেনের পর লোহিত সাগরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর হলো হোদেইদাহ। ইয়েমেনের খাদ্য আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশের প্রবেশপথ এটি। পাঁচজন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হোদেইদাহ বন্দর এবং হোদেইদাহ শহরের আল সালাকানাহ এবং আল হাওয়াক পাড়া লক্ষ্য করে ১০টিরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে। হোদেইদার পূর্বদিকে একটি সিমেন্ট কারখানাও লক্ষ্য করে চারটি হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে,ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুতিদের বারবার আক্রমণের জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।
রবিবার হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বেন গুরিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সীমানায় আঘাত হানে। যার ফলে একটি রাস্তা ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আটজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে প্যারামেডিকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত উন্নত থাড সিস্টেম ও তেল আবিবের দূরপাল্লার অ্যারো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপাতিত করতে ব্যর্থ হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রবিবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে হুতি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের আল-মোরতাদা হামলার বিষয়ে মন্তব্য করে একটি এক্স পোস্টে বলেছেন, ইসরায়েলের ‘অকল্পনীয়’ ঘটনার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সোমবারের হামলায় মার্কিন বাহিনী সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল না, তবে দুই মিত্রের মধ্যে সাধারণ সমন্বয় রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চ মাসে হুতিদের বিরুদ্ধে বড় আকারের হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে ইয়েমেনে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে মার্কিন বাহিনী। এসব হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ইয়েমেনে তাদের হামলা সীমিত করেছে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে ইরান সমর্থিত হুতিরা। উত্তর ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে এর প্রতিবাদে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে।
হুতি গোষ্ঠী বলছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে এবং তাদের বাহিনী হামলার জবাব দেবে।
এদিকে, রবিবার (৪ মে) ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনের গাজায় সামরিক অভিযানের পরিসর আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। পরিকল্পনার মধ্যে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল ও নিয়ন্ত্রণে আনার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র রব ব র লক ষ য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি সেবায় প্রতি তিনজনের একজন ঘুষ-দুর্নীতির শিকার
গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন এমন নাগরিকের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ এসব সরকারি সেবা গ্রহণে প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের প্রাথমিক ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের ফল প্রকাশ উপলক্ষে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে এদিন সংবাদ সম্মেলন করে বিবিএস। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৬ নম্বর অভীষ্টের ছয়টি সূচক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গত ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই জরিপে দেশের ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
জরিপ অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর পর রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৬১ দশমিক ৯৪, পাসপোর্ট অফিস ৫৭ দশমিক ৪৫ এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
জরিপের ফল বলছে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে এখানে রয়েছে স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নারীর ক্ষেত্রে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলের নিরাপত্তা বোধ ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশের কিছুটা কম। নিজ বাসায় নিরাপত্তা বোধের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি– ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতপ্রকাশ করতে পারেন। অন্যদিকে, ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার চিত্র
গত এক বছরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ সেবার ব্যয়কে সহনীয় মনে করেন। তবে স্বাস্থ্যসেবার মান ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণ ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সময় দেওয়া ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ– এসব ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সন্তুষ্টি দেখা গেছে।
সরকারি শিক্ষায় ইতিবাচক প্রবণতা
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক স্তরে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক বিদ্যালয়ে সহজ প্রবেশাধিকার ও ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ব্যয়কে সহনীয় বলে মন্তব্য করেন। মাধ্যমিক স্তরে এ হার কিছুটা কম– ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। শিক্ষার মান বিষয়ে প্রাথমিক স্তরে ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অন্যান্য সরকারি সেবার মান
পরিচয়পত্র বা নাগরিক নিবন্ধনের মতো সেবায় ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক সেবার প্রাপ্যতা এবং ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তবে কার্যকারিতা ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ, সময়মতো সেবা ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সমআচরণ ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ– এ তিনটি সূচকে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলকভাবে কম।
বিচারপ্রাপ্তি ও বিরোধ নিষ্পত্তি
গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পেরেছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) এবং ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা বা আইনজীবী) প্রক্রিয়ায় সেবা পেয়েছেন।
বৈষম্য ও হয়রানি
জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার ২২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা গ্রামাঞ্চলের ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের চেয়ে বেশি।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ঘুষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তারপরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের কাছে তুলনামূলক ঘুষ কম চাওয়া হয়েছে। তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা ঘুষ দেন বেশি। ঘুষ দিয়ে তারা মূলত সেবা কিনে নেন।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতির তথ্যে হতাশা ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তো এখনও দাঁড়াতেই পারেনি, তারপরও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে। এটি ভালো কথা নয়। আমার জানামতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয়। সেটি বেশির ভাগই বদলিকে কেন্দ্র করে। এখানে মধ্যস্বত্বভোগী অনেক।’ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।