জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ৩৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘জুলাই ঐক্য’ নামে একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এই জোটের শরিকদের মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ-আপ বাংলাদেশ, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই রেভল্যুশনারি জার্নালিস্ট অ্যালায়েন্স, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-পুনাব, এসএডি (স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি), প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ-পুসাব, জুলাই মঞ্চ ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের দমন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, লুটপাট ও গণতন্ত্র হরণের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব এক জাগরণে সংঘটিত হয় ছাত্র-জনতার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানে জীবন দিতে হয় দুই হাজারে বেশি মানুষকে। আহত হন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ।

মুসাদ্দিক আলী দাবি করেন, ‘ওই সময় রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দ্বারা পরিচালিত হামলা আন্তর্জাতিক মহলে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু আমরা দেখছি, জুলাই বিপ্লবের আট মাস পেরিয়ে গেলেও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারপ্রক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত।’

জুলাই ঐক্যের এই সংগঠক বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন দেশে স্বাভাবিক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার শামিল। সেই সঙ্গে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। জুলাই বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা বিভিন্ন দাবি তুলে জুলাইয়ে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের বিতর্কিত করতে চায়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই আমরা বিভিন্ন মতাদর্শের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে আজ “জুলাই ঐক্য” নামে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় জোটের ঘোষণা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের প্রতিনিধি ফাতিমা ঝুমা বলেন, ‘জুলাই–পরবর্তী সময়ে যখন আমাদের কথা ছিল, আওয়ামী লীগের বিচারটা সবার আগে নিশ্চিত হবে, সেখানে আমরা কোনো বিচারিক কার্যক্রম তো দূরে থাক, এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতিই দেখতে পাইনি।’

আপ বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্লাবন তারিক বলেন, ‘দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ইস্যুকে একেবারেই এড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা জেলে যাওয়ার কয়েক দিন পর ছাড়া পেয়ে আবার তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না: ইমরুল

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে ১২ হাজার টাকায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। যদিও শুরুর দিকে বিসিবি আমিনুলকে নিজেদের ব‌্যবস্থায় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে রেখেছিল। পরবর্তীতে বিদেশি কোচরা যেখানে থাকেন সেখানে থাকার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু আমিনুল নিজের ইচ্ছাতে বিসিবির কোনো ব‌্যবস্থায় না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ায় থাকে তার পুরো পরিবার। ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে তার বেড়ে ওঠা। এখন সেখানে থাকার সুযোগ নেই। ঢাকায় অল্প কয়েকদিনের জন‌্য এলে আত্মীয়দের বাসাতেই উঠেন। এবার দেশে আসার পর তাকে দেওয়া হয় বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব। ফলে স্থায়ীভাবেই তাকে কয়েকমাস কাটাতে হচ্ছে বাংলাদেশে। 

বিসিবি তার আবাসনের ব‌্যবস্থা করছে, এমন কথা শোনার পর নিজ থেকে সরে আসেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে কম কথা হয়নি। পরবর্তী ১২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ব‌্যাপাক সাড়া ফেলেছে।

তবে এসবের আড়ালে একজন সম্মানিত ব‌্যক্তিকে অসম্মান করা হয়েছে বলে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে এক স্ট‌্যাটাসে ইমরুল নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

দীর্ঘ স্ট‌্যাটাসে ইমরুল লিখেছেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে একটা বিষয় হয়তো আপনারা অনেকেই দেখেছেন—যে বিসিবি সভাপতি বর্তমানে মাত্র ১২ হাজার টাকার ভাড়ার একটি বাসায় থাকছেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে হয়নি।’’

‘‘একজন মানুষ, যিনি নিজের স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন, তাঁকে যদি এমন একটি বাসায় থাকতে হয়—তাহলে সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।’’

‘‘আমার জানা মতে, বিসিবি শুরুতে তাঁকে ভালো মানের একটি থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং কিছু দুষ্টচক্র সেই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি শুরু করে, যা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করে। আর সেই সম্মানের খাতিরেই তিনি আজ এত সাধারণভাবে থাকছেন।’’

‘‘আমরা দেখে থাকি বিসিবি কত টাকা খরচ করে বিদেশি স্টাফ এবং কোচদের পেছনে, যার হিসাব কোটি টাকায় গড়ায়। অথচ, অন্যদিকে একজন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড সভাপতিকে মাত্র ১২ হাজার টাকার একটি হোটেলে রাখা হচ্ছে। আমরা না হয় ব্যক্তি বুলবুলকে মূল্যায়ন না-ই করলাম, কিন্তু তাঁর মেধাকে তো অন্তত মূল্যায়ন করা উচিত, তাই না? নাকি আগের মতো যেভাবে সব কিছু চলেছে, সেভাবেই চলবে?’’

‘‘আসলে আমরা কবে শিখব একজন ভালো মানুষ কিংবা ভালো কিছুর সঠিক মূল্যায়ন করতে? কবে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের উন্নয়নে যারা কাজ করছে, তাদের পাশে দাঁড়াব?’’

‘‘এমন কিছু সংখ্যালঘু মানুষ সব সময়ই থাকে—যারা শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, বরং গোটা দেশেরই ক্ষতি করে। যেমনি করে বুলবুল ভাই নিজেই বলেছেন, কিছুদিন পর তিনি চলে যাবেন।’’

‘‘দুঃখের বিষয়, আমরা অনেক সময় সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিহ্নিত গণহত্যাকারীদের ছবি প্রদর্শন করে ঢাবিকে কলঙ্কিত করেছে শিবির, বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়ন
  • জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায় স্বীকারের আহ্বান ৩২ বিশিষ্ট নাগরিকের
  • আমরা সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না: ইমরুল
  • মসজিদে নববি ছিল শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আশ্রম
  • ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলের ‘পেলে’
  • চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের
  • সাবেক ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল গংদের বিচারের দাবিতে শহরে মানববন্ধন  
  • একাত্তরের গণহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের বিক্ষোভ
  • দায়িত্ব পালনে অনীহা বা শৈথিল্য প্রদর্শনে বিভাগীয় ব্যবস্থা, এসিল্যান্ড পদের পদায়ন নীতিমালা জারি
  • অবশেষে সংশয়ই সত্যি হলো, মাঠের বাইরে মেসি