উৎসবে কোন দেশে কত ছুটি, সরকারি অফিস টানা ১০ দিন বন্ধ কতটা যৌক্তিক
Published: 7th, May 2025 GMT
এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় সরকারি চাকরিজীবীরা টানা ১০ দিন ছুটি পাবেন। গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, টানা এত বড় ছুটি কতটা যৌক্তিক।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে ৭ জুন, শনিবার। সরকারি ছুটি শুরু হবে ৫ জুন বৃহস্পতিবার, শেষ হবে ১৪ জুন।
ঈদুল আজহায় সাধারণত তিন দিন ছুটি থাকত। অন্তর্বর্তী সরকার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছুটি বাড়িয়ে দেয়। সে অনুযায়ী এবারের ঈদুল আজহায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল ছয় দিন। তবে গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। অবশ্য ঈদের ছুটি শুরুর আগে ১৭ মে ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার সব সরকারি অফিস খোলা থাকবে।
সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে কোনো সরকারের আমলে এত বেশি ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। বেশি ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য খুশির খবর। দীর্ঘ ছুটি যদি রাষ্ট্রের উৎপাদনব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে, তাহলে সেটা ভালো খবর হবে না।
আরও পড়ুনঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন, শুরু ৫ জুন১৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে দুই ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যান। এতে রাস্তায় যানজট ও যানবাহন না পাওয়ার ভোগান্তি হয়। এ কারণে কয়েক বছর ধরেই দুই ঈদে ছুটি বাড়ানোর দাবি উঠছিল।
গত ঈদুল ফিতরে নির্ধারিত ছুটি ছিল পাঁচ দিন। পরে এক দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে যুক্ত হয় সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে গত ঈদুল ফিতরে ৯ দিন ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে ঈদযাত্রায় যানজট কম হয়েছে, মানুষের ভোগান্তিও কম ছিল।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ১০ দিনের মধ্যে দুই দিনের ছুটি মূলত বিনিময় করা হচ্ছে। ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে ঈদের ছুটি ঘোষণা করবে।
আরও পড়ুনঈদুল আজহার ছুটি শুরু ৫ জুন, আগের দুই শনিবার অফিস খোলা১৮ ঘণ্টা আগেউৎসবে কোন দেশে কত দিন ছুটি থাকে
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় দুই ঈদে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ-এ গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গত ঈদুল ফিতরে সরকার চার দিন ছুটি ঘোষণা করেছিল।
সেখানে অবশ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটির কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট-এর গত বছরের ১৬ জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, সৌদি মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই ঈদে চার দিন ছুটি দেওয়া যাবে। প্রয়োজনে এক দিন বাড়ানো যেতে পারে।
গালফ নিউজ-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুয়েতে গত ঈদুল ফিতরের আগে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তিন থেকে পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কাতারে ছুটি ছিল ৯ দিন। বাহরাইনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল তিন দিন।
মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম দেশটির সরকারি সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে দুই ঈদে দুই দিন করে ছুটি।
চীনে এ বছর নববর্ষে টানা আট দিন (২৮ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি) ছুটি দেওয়া হয় বলে জানা যায় গ্লোবাল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের সময় সরকারি ছুটি দুই দিন।
প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি জানান, যুক্তরাজ্যে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছুটি থাকে। পরিবারের কর্মজীবীরা তাঁদের বার্ষিক ছুটি ওই সময় কাটান। সরকারি অফিসে টানা অনেক দিনের ছুটি থাকে না।
আরও পড়ুন৩ এপ্রিলও ছুটি, এবার ঈদে টানা ৯ দিন সরকারি ছুটি২০ মার্চ ২০২৫‘বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে’
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর সপ্তাহে এক দিন ছুটি কার্যকর ছিল, রোববার। ১৯৮৪ সালেরই ১৫ মার্চ এরশাদ সরকার ছুটির দিন বদলিয়ে শুক্রবার করে, তা কার্যকর হয় ওই বছর ১ এপ্রিল থেকে।
ছুটির দিন নিয়ে আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত এসেছিল ১৯৯৭ সালের ২৯ মে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সেদিন বলা হয়েছিল, ৩১ মে থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হবে দুই দিন—শুক্র ও শনিবার।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ছুটি কমিয়ে এক দিন করে (শুক্রবার)। তবে বিএনপিই ২০০৫ সালে ৫ সেপ্টেম্বর আবারও ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার নির্ধারণ করে দেয়। ঈদের ছুটি দীর্ঘদিন ধরে একই ছিল। এ বছর সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হলো।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। এ দেশে টানা ১০ দিন ছুটি থাকলে সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। সরকারকে বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আবুল কাসেম খান আরও বলেন, ছুটির ১০ দিন যদি ব্যাংক বন্ধ থাকে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সেটা হলে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।
আরও পড়ুনঈদের ছুটিতে ৭ দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী০৫ এপ্রিল ২০২৫দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। তাঁরা এবার ঈদে বড় ছুটি পাবেন। ঈদের ছুটিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা বাদে অন্যান্য চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার কম হয়। অন্যান্য জরুরি সেবায় জনবল কমে যায়।
বেসরকারি খাতে ছুটি নির্ভর করে মালিকপক্ষের ওপর। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণত চার-পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে তিন দিনের বেশি ছুটি থাকে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এত বড় ছুটি যৌক্তিক নয়। সরকারের এটি একটি জনতুষ্টিমূলক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে। মুসলিমপ্রধান অন্য দেশগুলোয় এত বড় ছুটি নেই।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা বড় ছুটি কাটাবেন, বেসরকারি খাতে কম ছুটি থাকবে, এটাও একধরনের বৈষম্য।
আরও পড়ুনসাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে ছুটি ও ঐচ্ছিক ছুটি কী, কখন কাদের জন্য এসব ছুটি হয়১৯ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ঈদ র ছ ট চ কর জ ব উপদ ষ ট সরক র র ব সরক র র জন য ১০ দ ন দ ই ঈদ র ঈদ ল বড় ছ ট এক দ ন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত
‘তারুণ্যের উৎসব–২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিএসইসির উদ্যোগে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা লিংক জাতীয় তথ্য বাতায়নে যুক্ত
সহযোগী কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করবে কনফিডেন্স সিমেন্ট
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয় প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
উদ্বোধনী বক্তব্য শেষে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিশনের প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে কমিশনার, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ ও ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিবেশ ও প্রজন্মবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বিএসইসি।
ঢাকা/এনটি/এসবি