এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় সরকারি চাকরিজীবীরা টানা ১০ দিন ছুটি পাবেন। গতকাল মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, টানা এত বড় ছুটি কতটা যৌক্তিক।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে ৭ জুন, শনিবার। সরকারি ছুটি শুরু হবে ৫ জুন বৃহস্পতিবার, শেষ হবে ১৪ জুন।

ঈদুল আজহায় সাধারণত তিন দিন ছুটি থাকত। অন্তর্বর্তী সরকার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছুটি বাড়িয়ে দেয়। সে অনুযায়ী এবারের ঈদুল আজহায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল ছয় দিন। তবে গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তা বাড়িয়ে ১০ দিন করা হয়েছে। অবশ্য ঈদের ছুটি শুরুর আগে ১৭ মে ও ২৪ মে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার সব সরকারি অফিস খোলা থাকবে।

সাবেক সচিব ও বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) সাবেক রেক্টর এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে কোনো সরকারের আমলে এত বেশি ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। বেশি ছুটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য খুশির খবর। দীর্ঘ ছুটি যদি রাষ্ট্রের উৎপাদনব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে, তাহলে সেটা ভালো খবর হবে না।

আরও পড়ুনঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন, শুরু ৫ জুন১৫ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে দুই ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যান। এতে রাস্তায় যানজট ও যানবাহন না পাওয়ার ভোগান্তি হয়। এ কারণে কয়েক বছর ধরেই দুই ঈদে ছুটি বাড়ানোর দাবি উঠছিল।

গত ঈদুল ফিতরে নির্ধারিত ছুটি ছিল পাঁচ দিন। পরে এক দিন নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে যুক্ত হয় সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে গত ঈদুল ফিতরে ৯ দিন ছুটি পেয়েছিলেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে ঈদযাত্রায় যানজট কম হয়েছে, মানুষের ভোগান্তিও কম ছিল।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ১০ দিনের মধ্যে দুই দিনের ছুটি মূলত বিনিময় করা হচ্ছে। ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে ঈদের ছুটি ঘোষণা করবে।

আরও পড়ুনঈদুল আজহার ছুটি শুরু ৫ জুন, আগের দুই শনিবার অফিস খোলা১৮ ঘণ্টা আগে

উৎসবে কোন দেশে কত দিন ছুটি থাকে

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় দুই ঈদে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ-এ গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গত ঈদুল ফিতরে সরকার চার দিন ছুটি ঘোষণা করেছিল।

সেখানে অবশ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছুটির কথা উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট-এর গত বছরের ১৬ জানুয়ারির এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, সৌদি মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই ঈদে চার দিন ছুটি দেওয়া যাবে। প্রয়োজনে এক দিন বাড়ানো যেতে পারে।

গালফ নিউজ-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুয়েতে গত ঈদুল ফিতরের আগে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে তিন থেকে পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কাতারে ছুটি ছিল ৯ দিন। বাহরাইনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল তিন দিন।

মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম দেশটির সরকারি সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে দুই ঈদে দুই দিন করে ছুটি।

চীনে এ বছর নববর্ষে টানা আট দিন (২৮ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি) ছুটি দেওয়া হয় বলে জানা যায় গ্লোবাল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে। যুক্তরাজ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের সময় সরকারি ছুটি দুই দিন।

প্রথম আলোর লন্ডন প্রতিনিধি জানান, যুক্তরাজ্যে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় ছুটি থাকে। পরিবারের কর্মজীবীরা তাঁদের বার্ষিক ছুটি ওই সময় কাটান। সরকারি অফিসে টানা অনেক দিনের ছুটি থাকে না।

আরও পড়ুন৩ এপ্রিলও ছুটি, এবার ঈদে টানা ৯ দিন সরকারি ছুটি২০ মার্চ ২০২৫

‘বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে’

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর সপ্তাহে এক দিন ছুটি কার্যকর ছিল, রোববার। ১৯৮৪ সালেরই ১৫ মার্চ এরশাদ সরকার ছুটির দিন বদলিয়ে শুক্রবার করে, তা কার্যকর হয় ওই বছর ১ এপ্রিল থেকে।

ছুটির দিন নিয়ে আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত এসেছিল ১৯৯৭ সালের ২৯ মে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। সেদিন বলা হয়েছিল, ৩১ মে থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হবে দুই দিন—শুক্র ও শনিবার।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে ছুটি কমিয়ে এক দিন করে (শুক্রবার)। তবে বিএনপিই ২০০৫ সালে ৫ সেপ্টেম্বর আবারও ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার নির্ধারণ করে দেয়। ঈদের ছুটি দীর্ঘদিন ধরে একই ছিল। এ বছর সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হলো।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈশ্বিকভাবে সংযুক্ত। এ দেশে টানা ১০ দিন ছুটি থাকলে সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। সরকারকে বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আবুল কাসেম খান আরও বলেন, ছুটির ১০ দিন যদি ব্যাংক বন্ধ থাকে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সেটা হলে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।

আরও পড়ুনঈদের ছুটিতে ৭ দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ৭ লাখ সিমধারী০৫ এপ্রিল ২০২৫

দেশে সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। তাঁরা এবার ঈদে বড় ছুটি পাবেন। ঈদের ছুটিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা বাদে অন্যান্য চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার কম হয়। অন্যান্য জরুরি সেবায় জনবল কমে যায়।

বেসরকারি খাতে ছুটি নির্ভর করে মালিকপক্ষের ওপর। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণত চার-পাঁচ দিন ছুটি দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে তিন দিনের বেশি ছুটি থাকে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এত বড় ছুটি যৌক্তিক নয়। সরকারের এটি একটি জনতুষ্টিমূলক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে। মুসলিমপ্রধান অন্য দেশগুলোয় এত বড় ছুটি নেই।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা বড় ছুটি কাটাবেন, বেসরকারি খাতে কম ছুটি থাকবে, এটাও একধরনের বৈষম্য।

আরও পড়ুনসাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে ছুটি ও ঐচ্ছিক ছুটি কী, কখন কাদের জন্য এসব ছুটি হয়১৯ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ঈদ র ছ ট চ কর জ ব উপদ ষ ট সরক র র ব সরক র র জন য ১০ দ ন দ ই ঈদ র ঈদ ল বড় ছ ট এক দ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্মের মর্মবাণী মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সকল ধর্মের মর্মবাণী মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম।  

রবিবার ( ২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন কর্তৃক শুভ মহালয়া ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সকল ধর্মই আমাদের অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা যোগায়।  আমাদের আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। মানবসেবা ও দেশাত্মবোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে।’’ 

শারদীয় দুর্গোৎসবকে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আবহমানকাল ধরে শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে আসছে। এটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, বাংলাদেশের সকলের উৎসব। এ উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে নিবিড় বন্ধন রচিত হয়, সমাজের সকল মানবসৃষ্ট ভেদাভেদ, বৈষম্য  দূরীভূত হয় এবং সকলের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরিত হয়।’’ 

দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এ সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব আনন্দমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। একইসঙ্গে দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অপচেষ্টা চালাতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে  সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন। 

অনুষ্ঠানে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের  সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমার দেশকে চিনতে পারছি না’, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জোলি
  • ভ্রাতৃত্ব ও অসাম্প্রদায়িকতায় জবিতে মহালয়া উৎসব
  • ধর্মের মর্মবাণী মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
  • ছয় ম্যাচে ছয় জয় রিয়ালের, বার্নাব্যুতে উৎসব হলো অন্য কারণেও
  • ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর ভাদ্রোৎসব ‘কারাম’
  • সরকারের নীরবতার কারণেই সংখ্যালঘুদের ওপর বারবার আক্রমণ হচ্ছে
  • গরিবের কাছে স্বপ্নের মতো একটুকরো ইলিশ
  • মনিকার প্রেম ভাঙল
  • বিজ্ঞানকে জয়ের সংকল্পে বরিশালে চলছে বিজ্ঞান উৎসব
  • নানা আয়োজনে দিনভর উৎসবের আমেজ