‘শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট’ আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ ও বিচার নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি
Published: 7th, May 2025 GMT
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন–মদদপুষ্ট অনেকে রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আর তাঁরা বহাল তবিয়তে আছেন—এ অভিযোগ এনে এসব ব্যক্তির পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারক নিয়োগের দাবিও জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আজ বুধবার দুপুরে আইনজীবীদের এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও আইনজীবী সমাবেশ’ শিরোনামে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজের ব্যনারে ওই সমাবেশ হয়।
সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান শাসনব্যবস্থা তথা সরকার সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনা এবং তাদের দোসরদের বিচার চায় না। কারণ, যে শেখ হাসিনাকে বিদায় করতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছিল, সেই শেখ হাসিনার সমর্থনপুষ্ট, মদদপুষ্ট এবং শেখ হাসিনার অন্ধভক্ত আজকে রাষ্ট্রের যাঁরা বিচার কর্মকর্তা অনেকে কিন্তু সেখানে (আইন কর্মকর্তা হিসেবে) নিয়োগ পেয়েছেন এবং আগের থেকে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন।’
আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অভিযুক্তের বিপক্ষে যিনি যুক্তি উপস্থাপন করবেন, অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ সেই রাষ্ট্রপক্ষই যদি শেখ হাসিনার সমর্থনপুষ্ট আইনজীবী আইন কর্মকর্তা হন, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কি কোনো বিচার হবে? এখন কিন্তু তাই দেখতে পাচ্ছি। অনেক কর্মকর্তা ছাত্রলীগ করতেন, যুবলীগ করতেন, আওয়ামী লীগ করতেন। আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের জুনিয়র ছিলেন। তাঁরা কিন্তু এখনো ওই ভবনে (অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ভবনের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে) বহাল তবিয়তে বসে আছেন। আমরা সুস্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে অথবা আইন মন্ত্রণালয় আপনিও জানেন তাঁদের বরখাস্ত করুন। অন্যথায় আইনজীবীরা কিন্তু সচিবালয় পর্যন্ত যাবে।’
বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নাকি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারক নিয়োগ করতে হবে। একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সেই অধ্যাদেশের বিষয়ে হাইকোর্ট শুনানি শেষে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আমরা কিন্তু এখনো জানি না কী পর্যবেক্ষণ। আগে পর্যবেক্ষণ দেখব আমরা।…অধ্যাদেশের মেরিট আদালত বিচারাধীন।’
কায়সার কামাল বলেন, ‘এর মধ্যে শুনছি বিচারক নাকি নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই, যা শুনেছি তা অসত্য। যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেই অধ্যাদেশটা পরীক্ষা–নিরীক্ষা হাইকোর্ট বিভাগ করেছেন। পরীক্ষার ফলাফল দেখে রিভিশন–রিভিউ করা যাবে। তার আগেই যদি সেই অধ্যাদেশের আলোকে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু আইনজীবী সমাজ মেনে নেবে না।’
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনছি, ওই দিকে বিচারক নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে। কায়সার কামাল বলেছেন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার আগে গোপনে গোপনে আপনারা কাদেরকে নিয়োগ করছেন? ওই যেভাবে ল অফিসার (আইন কর্মকর্তা) নিয়োগ করছেন, সেভাবে? আইনজীবীরা সেটা হতে দেবে না।’
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আইন সমিতির আহ্বায়ক মনির হোসেন, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পদত য গ আইনজ ব গ করত
এছাড়াও পড়ুন:
হেফাজতে মৃত্যু: এক আসামির যাবজ্জীবন, একজনের ১০ বছর কারাদণ্ড, আরেকজন খালাস
এক দশকের বেশি সময় আগে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন ওরফে জনির মৃত্যুতে করা মামলায় রাজধানীর পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পল্লবী থানার তৎকালীন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল হাসানের সাজা পরিবর্তন করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর বিচারিক আদালতের রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাসেল নামে এক আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন প্রণয়ন করা হয়। ইশতিয়াককে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট মামলা করা হয়। এটা ওই আইনে করা প্রথম কোনো মামলা। এই মামলায় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ।
বিচারিক আদালতের রায়ে পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর, এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে বাদী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
অপর দুই আসামি পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) সুমন ও রাসেলের ৭ বছর করে কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তিন আসামি ২০২০ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। তাঁরা হলেন জাহিদুর, রাশেদুল ও রাসেল।
২০২১ সালে হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে তিন আসামির আপিলের ওপর একসঙ্গে গত ৯ জুলাই হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়। ৭ আগস্ট শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১০ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন।
গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১১টায় রায় দেওয়া শুরু করেন আদালত। মাঝে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরত দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত রায় ঘোষণা চলে। এর ধারাবাহিকতায় আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে অসমাপ্ত রায় ঘোষণা শুরু করেন আদালত, যা দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে শেষ হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য অনুসারে, বিচারিক আদালতে দণ্ডিত পাঁচ আসামির মধ্যে কামরুজ্জামান শুরু থেকে পলাতক। অপর আসামি সুমন সাজা ভোগ করে বেরিয়েছেন।
আদালতে আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মো. সরওয়ার আহমেদ এবং আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ও নাজমুল করিম শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বদিউজ্জামান তপাদার শুনানি করেন। বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম।
রায় ঘোষণার দুই দিন পুরোটা সময় মামলার বাদী নিহত ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ হোসেন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনা সম্পর্কে মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় সেখানে থাকা ইশতিয়াক ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ সুমনকে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে দুই ভাইয়ের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর সুমনের ফোন পেয়ে পল্লবী থানা-পুলিশ এসে ইশতিয়াক ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে ইশতিয়াকের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে ইশতিয়াকের ভাই ইমতিয়াজ তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুরসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন।
বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত এবং পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। তদন্তকালে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
মামলায় ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।