সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন–মদদপুষ্ট অনেকে রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আর তাঁরা বহাল তবিয়তে আছেন—এ অভিযোগ এনে এসব ব্যক্তির পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারক নিয়োগের দাবিও জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আজ বুধবার দুপুরে আইনজীবীদের এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারপতি নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও আইনজীবী সমাবেশ’ শিরোনামে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজের ব্যনারে ওই সমাবেশ হয়।

সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান শাসনব্যবস্থা তথা সরকার সত্যিকার অর্থে শেখ হাসিনা এবং তাদের দোসরদের বিচার চায় না। কারণ, যে শেখ হাসিনাকে বিদায় করতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছিল, সেই শেখ হাসিনার সমর্থনপুষ্ট, মদদপুষ্ট এবং শেখ হাসিনার অন্ধভক্ত আজকে রাষ্ট্রের যাঁরা বিচার কর্মকর্তা অনেকে কিন্তু সেখানে (আইন কর্মকর্তা হিসেবে) নিয়োগ পেয়েছেন এবং আগের থেকে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে আছেন।’

আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অভিযুক্তের বিপক্ষে যিনি যুক্তি উপস্থাপন করবেন, অর্থাৎ রাষ্ট্রপক্ষ সেই রাষ্ট্রপক্ষই যদি শেখ হাসিনার সমর্থনপুষ্ট আইনজীবী আইন কর্মকর্তা হন, তাহলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কি কোনো বিচার হবে? এখন কিন্তু তাই দেখতে পাচ্ছি। অনেক কর্মকর্তা ছাত্রলীগ করতেন, যুবলীগ করতেন, আওয়ামী লীগ করতেন। আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের জুনিয়র ছিলেন। তাঁরা কিন্তু এখনো ওই ভবনে (অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ভবনের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে) বহাল তবিয়তে বসে আছেন। আমরা সুস্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে অথবা আইন মন্ত্রণালয় আপনিও জানেন তাঁদের বরখাস্ত করুন। অন্যথায় আইনজীবীরা কিন্তু সচিবালয় পর্যন্ত যাবে।’

বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নাকি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারক নিয়োগ করতে হবে। একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সেই অধ্যাদেশের বিষয়ে হাইকোর্ট শুনানি শেষে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। আমরা কিন্তু এখনো জানি না কী পর্যবেক্ষণ। আগে পর্যবেক্ষণ দেখব আমরা।…অধ্যাদেশের মেরিট আদালত বিচারাধীন।’

কায়সার কামাল বলেন, ‘এর মধ্যে শুনছি বিচারক নাকি নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করতে চাই, যা শুনেছি তা অসত্য। যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, সেই অধ্যাদেশটা পরীক্ষা–নিরীক্ষা হাইকোর্ট বিভাগ করেছেন। পরীক্ষার ফলাফল দেখে রিভিশন–রিভিউ করা যাবে। তার আগেই যদি সেই অধ্যাদেশের আলোকে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু আইনজীবী সমাজ মেনে নেবে না।’

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনছি, ওই দিকে বিচারক নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু হয়ে গেছে। কায়সার কামাল বলেছেন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার আগে গোপনে গোপনে আপনারা কাদেরকে নিয়োগ করছেন? ওই যেভাবে ল অফিসার (আইন কর্মকর্তা) নিয়োগ করছেন, সেভাবে? আইনজীবীরা সেটা হতে দেবে না।’

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ আইন সমিতির আহ্বায়ক মনির হোসেন, ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পদত য গ আইনজ ব গ করত

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর একটি আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে এসব ছবি-ভিডিও ছড়ানোর পর জেলায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর থেকে চলে গেছেন। তবে তাঁর দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি ছুটিতে গেছেন।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তিনি দাবি করেন, ছবি ও ভিডিওতে থাকা নারী তাঁর আত্মীয়। পরিবারে যাতায়াতের কারণে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রকাশ পাওয়া ছবি ও ভিডিও কিছু সত্য এবং কিছু মিথ্যা। ওই নারী গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর স্বামীকে তালাক দেন।

ছবি ও ভিডিওগুলো শরীয়তপুরে আসার আগের দাবি করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানাভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় ঘুমের ওষুধ ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে আমার ছবি ও ভিডিও ধারণ করত। ব্ল্যাকমেল করে প্রতি মাসে টাকা হাতিয়ে নিত। পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়ার ডকুমেন্ট আছে। সর্বশেষ তিনি চাপ দিতে থাকেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইলের কিছু সংবাদকর্মী ও আইনজীবীদের ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার কেউ রাখে না। এ কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।’

ভিডিওতে থাকা ওই নারীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। আর জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গতকাল কয়েক দফা ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিলেও তিনি উত্তর দেননি।

দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন শরীয়তপুর জজ কোটের একজন আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতেন। আমি দুজনকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিয়ে করার জন্য। কিন্তু ওই নারী রাজি হননি। তিনি সমঝোতার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন। যা পরিশোধের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুনের মধ্যে। ওটা নিয়েই আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই এমন ছবি ও ভিডিও মানুষের সামনে চলে এল।’

গত বছরের নভেম্বরে জেলা প্রশাসক হিসেবে ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শরীয়তপুরে যোগদান করেন। জানতে চাইলে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুল আলম গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার ছুটিতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে রাতে তিনি ঢাকায় গেছেন। তাঁর অবর্তমানে জেলা প্রশাসক হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা লিখিতভাবে কাউকে দিয়ে যাননি। তিনি কবে ফিরে আসবেন, তা–ও আমরা বলতে পারছি না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের শপথ পড়ানোর বিধান নিয়ে রুলের শুনানি ৭ জুলাই
  • জামিনে পেলেন বেরোবির শিক্ষক মাহমুদুল হক
  • রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মাহমুদুল হক জামিনে মুক্ত
  • রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন, শুনানি মঙ্গলবার
  • গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় প্রথম কোনো মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য
  • ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের পরিণতি নির্যাতন, বিচ্ছেদ, মৃত্যু
  • টাকা আদায়ে আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে 
  • ‘বিচারিক স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ নিয়ে সেমিনার রোববার, থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা
  • রোববার থেকে হাইকোর্টের ৪৯ বেঞ্চে চলবে বিচারকাজ
  • শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা