শিল্পে সংকট কাটিয়ে উঠতে এ খাতে বাড়তি ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, শিল্পে বাড়তি এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে বাড়তি আমদানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। ব্রিফিংকালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, জ্বালানি সচিব মো.

সাইফুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, নিট পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রমুখ।

শিল্প খাতে গ্যাস সংকট বাড়ায় বেশ কিছু দিন ধরে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যান।

বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক. পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস এখন শিল্প খাতে দেওয়া হবে। দুই. মে থেকে আগস্ট—এই চার মাসে চার জাহাজ বাড়তি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হবে। এতে আরও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে শিল্পের জন্য ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উপদেষ্টা জানান, বাড়তি এই গ্যাস বরাদ্দ দেওয়া হবে শিল্পঘন এলাকায়। কোথায় কোথায় গ্যাস দিতে হবে, তা ব্যবসায়ীরা ঠিক করে দেবেন। সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে নজরদারি বাড়ানো হবে।

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আজকের বৈঠকে শিল্পোদ্যোক্তারা আরেকটি কথা জানিয়েছেন, অবৈধ সংযোগের কারণে অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া যায় না। অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। দ্রুত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপ করার কারণে শিল্পের প্রতি এই সরকার খুবই সংবেদনশীল ও সতর্ক বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিনিয়তই কমছে। এ কারণে এলএনজির আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। আবার দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানাও গড়ে উঠছে। এর মধ্যেও সরকার শিল্প খাত থেকে গ্যাসের সরবরাহ কমায়নি।

বাড়তি গ্যাস আমদানি করলে ভর্তুকির চাপ বাড়বে কি না, বা গ্যাসের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, চার জাহাজ এলএনজি আমদানির ফলে ১১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। তবে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হলে সেটির ক্ষতি হবে আরও বেশি। এ জন্য সরকার একটি ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘সরকার বেশি দামে গ্যাস এনে কম দামে সরবরাহ করছে; তবু জনস্বার্থ ও শিল্পের স্বার্থে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে না।’

ভবিষ্যতে গ্যাসের সংকট হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা সরকার দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সরকার এমন গ্যারান্টি দিতে পারে না। এই সংকট বর্তমান সময়ে হয়নি। এটা আগে থেকে চলে আসছে। এটার সমাধান করতে হবে। আমরা স্বল্প মেয়াদে দায়িত্বে এসেছি। তবু চেষ্টা করছি।’

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমালে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘তখন আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালাব। এখনো চালানো হচ্ছ। তখন আরও বেশি পরিমাণে চালানো হবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রমজানে অগ্রাধিকার দিয়েছে বিদ্যুৎ ও সেচে। এখন অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে শিল্প খাতে।

দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার এই বছর ৫০টি কূপ অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছর ১০০টি কূপ অনুসন্ধান করা হবে। ভোলায় নতুন কূপ অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। পুরোনো কূপ সংস্কার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, যা ইতিমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে এ কে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সমস্যাগুলো আমরা সময়ে–সময়ে উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, পেট্রোবাংলাকে জানিয়েছি, তিতাসকে জানিয়েছি। তাঁরা জানেন। আজ উপদেষ্টা যে সমাধান দিয়েছেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট। উনি যে ব্যাকআপ প্ল্যান দিয়েছেন, সেটি উনি বলেছেন। আমি মনে করি, এটা যদি অব্যাহত রাখতে পারেন, আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘনফ ট গ য স ব যবস য় উপদ ষ ট সরবর হ আমদ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে হামলায় যেসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারত

ভারত মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রত কাশ্মীর জুড়ে সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ভারতীয় বিমান, নৌ এবং স্থলভিত্তিক তিন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বালোকোট অভিযানের পর এটি ভারতের দ্বারা পরিচালিত সবচেয়ে বিস্তৃত আন্তঃসীমান্ত নির্ভুল হামলা।

পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে ভারতীয় বাহিনী ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৭০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করার দাবি করেছে।  

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে ৭০ জনকে হত্যার দাবি ভারতের

ভারত সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: অমিত শাহ

‘অপারেশন সিঁদুর’-এ যেসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারত

এনডিটিভ জানিয়েছে, ভারত এই অভিযানে উচ্চ-নির্ভুলতা, দূরপাল্লার স্ট্রাইক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ছিল ‘স্ক্যাল্প’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, নির্ভুল বোমা ‘হামার’ এবং লোটারিং যুদ্ধাস্ত্র।

* স্ক্যাল্প (স্টর্ম শ্যাডো): স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্রটি স্টর্ম শ্যাডো নামেও পরিচিত। এটি দূরপাল্লার, আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যার পাল্লা ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি এবং গভীর-আক্রমণ ক্ষমতার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

* হ্যামার (হাইলি এজাইল মডুলার মিনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ): হ্যামার স্মার্ট বোমাটি লস্কর এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) কর্তৃক প্রশিক্ষণ ও সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত সুরক্ষিত বাঙ্কার এবং বহুতল ভবনের মতো সুরক্ষিত অবকাঠামো আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। হ্যামার হলো একটি নির্ভুল-নির্দেশিত, স্ট্যান্ডঅব যুদ্ধাস্ত্র যা উৎক্ষেপণের উচ্চতার উপর নির্ভর করে ৫০-৭০ কিলোমিটার পরিসরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।

* কামিকাজে ড্রোন: মূলত নজরদারি চালানোর কাজে ব্য়বহৃত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না লক্ষ্য নির্ধারণ হচ্ছে, ততক্ষণ উড়ে বেড়ায় এই ড্রোন। এই ড্রোনকে কামিকাজে ড্রোন বা আত্মঘাতী ড্রোনও বলা হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবেও উড়তে পারে এই ড্রোন, আবার রিমোটের মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি, এই ড্রোনে বিস্ফোরক বা পেলোডও বসানো যায়। ড্রোনের মাধ্যমেই আঘাত হানা যায় লক্ষ্যে।

পাকিস্তানে যেসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ভারত

ভারত তাদের ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে চারটি পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে এবং পাঁচটি পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। বরং নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।

* মারকাজ সুবহানআল্লাহ, বাহাওয়ালপুর: জৈশ-ই-মোহাম্মদের সদর দপ্তর হিসেবে পরিচিত। এখানে সিনিয়র সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

* মারকাজ তাইবা, মুরিদকে: লস্কর-ই-তৈয়বার শিক্ষা, রসদ ও পরিকল্পনার জন্য ব্যবহৃত ২০০ একর জমির একটি কম্পাউন্ড। এটি অভিযানে আঘাত করা সবচেয়ে সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি ছিল।

* মারকাজ আব্বাস, কোটলি: এই ক্যাম্পটি জৈশ-ই-মোহাম্মদের সদস্যদের আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র বিতরণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। 

* সৈয়দনা বিলাল ও শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্প, মুজাফ্ফরাবাদ: জৈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্যদের অনুপ্রবেশ পয়েন্ট এবং স্লিপার সেলগুলোর প্রশিক্ষণ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

* মারকাজ আহলে হাদিস, বার্নালা: লস্কর-ই-তৈয়বার একটি সহায়তা কেন্দ্র এবং আঞ্চলিক সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।

* সরজাল, তেহরা কালান: জৈশ-ই-মোহাম্মদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যদের শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

* মেহমুনা জোয়া, শিয়ালকোট: হিজবুল মুজাহিদিনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কাশ্মীর উপত্যকায় এই গোষ্ঠীর উপস্থিতি হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও এখনও সক্রিয়।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে রক্তপাত হলেও গতকাল দিনশেষে বাড়ল ভারতের সূচক
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: যশোরে ‘কাচ্ছি ভাই’সহ তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
  • এবারের এপ্রিলে লোডশেডিং কেন কমল
  • যুদ্ধের নেপথ্যে বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে: নচিকেতা
  • শি‌ল্পে ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়া‌নো হ‌চ্ছে: জ্বালা‌নি উপ‌দেষ্টা
  • শি‌ল্পে ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়া‌নো হ‌চ্ছে
  • তোপের মুখে পোস্ট সরালেন নচিকেতা
  • যুদ্ধ মানেই মুনাফার খেলা কেন বললেন নচিকেতা
  • পাকিস্তানে হামলায় যেসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে ভারত