বিদ্যুতে কিছু কমিয়ে, আমদানি বাড়িয়ে শিল্পে দেওয়া হবে বাড়তি গ্যাস
Published: 7th, May 2025 GMT
শিল্পে সংকট কাটিয়ে উঠতে এ খাতে বাড়তি ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, শিল্পে বাড়তি এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে বাড়তি আমদানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে।
আজ বুধবার সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। ব্রিফিংকালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, জ্বালানি সচিব মো.
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, নিট পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রমুখ।
শিল্প খাতে গ্যাস সংকট বাড়ায় বেশ কিছু দিন ধরে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যান।
বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক. পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস এখন শিল্প খাতে দেওয়া হবে। দুই. মে থেকে আগস্ট—এই চার মাসে চার জাহাজ বাড়তি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হবে। এতে আরও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে শিল্পের জন্য ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, বাড়তি এই গ্যাস বরাদ্দ দেওয়া হবে শিল্পঘন এলাকায়। কোথায় কোথায় গ্যাস দিতে হবে, তা ব্যবসায়ীরা ঠিক করে দেবেন। সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে নজরদারি বাড়ানো হবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আজকের বৈঠকে শিল্পোদ্যোক্তারা আরেকটি কথা জানিয়েছেন, অবৈধ সংযোগের কারণে অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া যায় না। অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। দ্রুত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপ করার কারণে শিল্পের প্রতি এই সরকার খুবই সংবেদনশীল ও সতর্ক বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিনিয়তই কমছে। এ কারণে এলএনজির আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। আবার দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানাও গড়ে উঠছে। এর মধ্যেও সরকার শিল্প খাত থেকে গ্যাসের সরবরাহ কমায়নি।
বাড়তি গ্যাস আমদানি করলে ভর্তুকির চাপ বাড়বে কি না, বা গ্যাসের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, চার জাহাজ এলএনজি আমদানির ফলে ১১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। তবে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হলে সেটির ক্ষতি হবে আরও বেশি। এ জন্য সরকার একটি ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘সরকার বেশি দামে গ্যাস এনে কম দামে সরবরাহ করছে; তবু জনস্বার্থ ও শিল্পের স্বার্থে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে না।’
ভবিষ্যতে গ্যাসের সংকট হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা সরকার দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সরকার এমন গ্যারান্টি দিতে পারে না। এই সংকট বর্তমান সময়ে হয়নি। এটা আগে থেকে চলে আসছে। এটার সমাধান করতে হবে। আমরা স্বল্প মেয়াদে দায়িত্বে এসেছি। তবু চেষ্টা করছি।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমালে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘তখন আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালাব। এখনো চালানো হচ্ছ। তখন আরও বেশি পরিমাণে চালানো হবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রমজানে অগ্রাধিকার দিয়েছে বিদ্যুৎ ও সেচে। এখন অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে শিল্প খাতে।
দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার এই বছর ৫০টি কূপ অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছর ১০০টি কূপ অনুসন্ধান করা হবে। ভোলায় নতুন কূপ অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। পুরোনো কূপ সংস্কার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, যা ইতিমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে এ কে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সমস্যাগুলো আমরা সময়ে–সময়ে উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, পেট্রোবাংলাকে জানিয়েছি, তিতাসকে জানিয়েছি। তাঁরা জানেন। আজ উপদেষ্টা যে সমাধান দিয়েছেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট। উনি যে ব্যাকআপ প্ল্যান দিয়েছেন, সেটি উনি বলেছেন। আমি মনে করি, এটা যদি অব্যাহত রাখতে পারেন, আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঘনফ ট গ য স ব যবস য় উপদ ষ ট সরবর হ আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মরিচের কেজি ১৫ টাকা হতাশ চাষিরা
জমিতে মরিচের ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশায় ছিলেন আদমদীঘি উপজেলার চাষিরা। বাজার দরে সে আশা ভেঙেছে। চলতি মৌসুমে হাটবাজারে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে মরিচ। যার উৎপাদন খরচ গড়ে কেজিপ্রতি ২৫ টাকার মতো বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এতে করে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আদমদীঘি উপজেলার তেঁতুলিয়া, কোমারপুর, মঙ্গলপুর, জিনইর, কাশিমালা, শিবপুর, কড়ই, সালগ্রাম, আমইল, কেশরতাগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে বর্ষা মৌসুমে ৭ শতাধিক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন স্থানীয় চাষিরা।
বিগত বছরে মরিচের দাম বেশি পাওয়ায় এবার মরিচ চাষের পরিমাণ অনেকটাই বেশি ছিল। এখানকার মরিচ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তেঁতুলিয়া গ্রামের মরিচচাষি এনামুল, জিল্লুর রহমান জানান, এবার বেশি জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষে জমি তৈরি, লাগানো, ফসলে খাবার, পোকা দমনে ওষুধ প্রয়োগ, পরিচর্যা, শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। বর্তমানে হাটবাজারে মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে মরিচ বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তোলা সম্ভব হচ্ছে না। জমিতে মরিচ চাষ করে দাম কম পাওয়ায় হতাশায় পড়েছেন তারা।
কাঁচামরিচ পাইকার ব্যবসায়ী সোহেল ও ফারুক হোসেন জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতি হাটবার প্রায় আড়াই হাজার মণ কাঁচামরিচ সরবরাহ করা হয়। বাজারে কাঁচামরিচের বেশি সরবরাহ ও পাইকার কম থাকায় মরিচের দাম কমে গেছে পরে দাম বেশি পাবেন কৃষকরা।