দাম কমেছে, সিঙ্গাপুর থেকে আসছে দুই কার্গো এলএনজি
Published: 7th, May 2025 GMT
সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি থেকে দুই কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ হাজার ১০৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। দুই কার্গো এলএনজি সরবরাহের কাজ পেয়েছে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া লিমিটেড।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন অর্থ উপদেষ্টা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি বর্তমানে ইতালির মিলানে রয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গণখাতে ক্রয় বিধিমালা–২০০৮ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এক কার্গো সমান ৩৩ লাখ ৬০ হাজার মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজি।
জানা গেছে, ভিটল এশিয়া লিমিটেড থেকে এলএনজির প্রতি এমএমবিটিইউ ১১ দশমিক ৪৪৮৮ মার্কিন ডলারে কেনা হচ্ছে। ভিন্ন আরেকটি প্রস্তাবের বিপরীতে এলএনজি কেনা হচ্ছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১১ দশমিক ৫৭৮৮ মার্কিন ডলারে। দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল ১২ দশমিক ৪৭৫ মার্কিন ডলার।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি তৎকালীন সরকার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য আগ্রহী বিক্রেতা বা সরবরাহকারীদের তালিকা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে সাড়া দিয়ে ২৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তাদের মধ্য থেকে ১৭টির সঙ্গে প্রথম দফায় মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) অনুস্বাক্ষর করা হয়।
তবে আইনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার (ভেটিং) পর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পেট্রোবাংলার সঙ্গে এমএসপিএ স্বাক্ষরের অনুমোদন দেওয়া হয় ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে। পরে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অবশ্য ২৩-এ উন্নীত হয়। ভিটল এশিয়া সেই ২৩টিরই একটি।
এদিকে ‘২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগাধীন বিভিন্ন সড়ক, সেতু ও কালভার্টসমূহের জরুরি পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজের দরপত্র পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা।
ক্রয় কমিটিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় তিউনিসিয়া থেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এতে ১৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব আমদ ন র উপদ ষ ট অন ম দ
এছাড়াও পড়ুন:
মুরগির শেডে হাঁস পালনে সফল কামরুন নাহার
ফরিদপুরের কোমরপুর গ্রামের উদ্যোক্তা কামরুন নাহার মুরগির শেডে হাঁস পালন করে সাফল্যের নতুন গল্প রচনা করছেন। বিদেশি ‘পিকিং স্টার ১৩’ জাতের হাঁস পালন করে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। এই হাঁস পানি ছাড়াই খাঁচায় সহজে পালন করা যায়। মাত্র ৪৫ দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি হয় এ হাঁসের ওজন। প্রতি কেজি হাঁস ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করে মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন কামরুন নাহার। বাজারে এ হাঁসের ব্যাপক চাহিদা তার ব্যবসাকে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে।
কামরুন নাহারের এ যাত্রা শুরু হয় প্রতিকূলতা কাটিয়ে। তিনি আগে মুরগি পালন করতেন। কিন্তু, রোগ-ব্যাধির কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। এ সময় সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (এসডিসি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাকে ‘পিকিং স্টার ১৩’ হাঁস পালনের পরামর্শ দেয়।
এসডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেছেন, “কামরুন নাহারের মুরগির খামারে রোগের কারণে ক্ষতি হচ্ছিল। আমরা তাকে প্রশিক্ষণ ও ৫০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করতে সাহায্য করি। দুটি বাচ্চা মারা গেলেও ৪৮টি হাঁস বিক্রি করে তিনি ৪৮ হাজার টাকা আয় করেন। এরপর তিনি ২০০টি বাচ্চা নিয়ে বড় পরিসরে হাঁসের খামার করেন। এখন তিনি ৫০০টি হাঁসের খামারের পরিকল্পনা করছেন।”
কামরুন নাহার রাইজিংবিডি ডটকমের এ প্রতিবেদককে বলেছেন, “মুরগি পালনে ক্ষতির পর আমি ভেবেছিলাম, সব শেষ। এসডিসির সহায়তায় পিকিং স্টার ১৩ হাঁস পালন শুরু করি। এই হাঁস পালন সহজ, কম খরচে লাভ বেশি। এখন ফরিদপুরের হোটেল থেকে শুরু করে অন্য জেলাতেও আমার হাঁস সরবরাহ হচ্ছে। আমি শিগগিরই ৫০০ থেকে ১ হাজার হাঁস পালনের পরিকল্পনা করছি।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেছেন, “কামরুন নাহারের পিকিং স্টার ১৩ হাঁস পালনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা তাকে পরামর্শ, ওষুধ সরবরাহ এবং বাজারজাত করতে সহায়তা দিচ্ছি। তার হাঁস স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে সরবরাহের জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছি। এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের স্বনির্ভরতার পথকে শক্তিশালী করছে।”
কামরুন নাহারের প্রতিবেশীরা তার খামারের প্রতি আকৃষ্ট। তারা বলেন, “কেন দূরে গিয়ে বাড়তি খরচ করব? আমাদের গ্রামেই কামরুন নাহারের আধুনিক খামার থেকে তাজা ও স্বাস্থ্যকর হাঁস সহজে কিনে নিতে পারি।” এই সুবিধা তাকে স্থানীয়দের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
এছাড়া, হাঁস পালনের পাশাপাশি খামারের বর্জ্য থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে অতিরিক্ত আয় করছেন কামরুন নাহার, যা তার উদ্যোগের বহুমুখী সাফল্যের প্রমাণ।
ডা. বিপ্লব কুমার মোহন্ত আরো বলেছেন, “ফরিদপুরের পাঁচটি উপজেলায় আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক ও খামারিদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। কামরুন নাহারের সাফল্য অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।”
কামরুন নাহারের সাফল্য এলাকার অনেককে পিকিং স্টার ১৩ হাঁস পালনে উৎসাহিত করেছে। তার এই অদম্য উদ্যোগ শুধু নিজের জীবনই বদলায়নি, বরং অন্যদের জন্যও স্বনির্ভরতার নতুন পথ দেখিয়েছে, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ঢাকা/রফিক