পাখি খুঁজে পেতে তিন হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা
Published: 8th, May 2025 GMT
‘লিও নামের একটি বাজরিগার প্রজাতির বাচ্চা পাখি হারিয়ে গেছে। এর গায়ের রঙ সাদা, নীল ও কালো। পাখিটি কেউ খুঁজে দিলে তাকে তিন হাজার টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে’ এমন একটি পোস্টার দেওয়া হয়েছে উল্লাপাড়া পৌর শহরের বিভিন্ন অফিস, বাড়ি ও সড়কের পাশের দেয়ালে। দু’দিন ধরে চোখে পড়ছে এই পোস্টারটি। পাখিটির মালিক রিয়াদ হাসান। তিনি উল্লাপাড়া পৌর শহরের ঝিকিড়া মহল্লার বাসিন্দা।
অস্ট্রেলিয়ার বাজরিগার জাতের দুটি পাখির বাচ্চা তিনি ঢাকা থেকে কিনে বাড়িতে পোষা শুরু করেন। এর একটির নাম দিয়েছেন লিও, অপরটির নাম কোকো। এদের বয়স প্রায় ৪ মাস।
লিও’র সঙ্গে কোকোর বেশ ভাব। দুজনে রিয়াদ হাসানের ছাদে গিয়ে খেলা করে এবং বাড়ির লোকজনের কাছাকাছি ওরা উড়াউড়ি করে বেড়ায়। কখনও কখনও বাড়ির লোকজনের ঘাড়ে উঠেও বসে থাকে।
লিও নামের পাখিটি ১০ এপ্রিল ছাদ থেকে হারিয়ে যায়। এরপর কোকো এখন সব সময় বিমর্ষ হয়ে থাকে। গোটা বাড়ি ও ছাদে খুঁজে বেড়ায় সঙ্গীকে। কোকো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বাড়ির লোকজনেরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
রিয়াদ হাসান জানান, এক মাস ধরে লিওকে ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন, কিন্তু পাননি। অবশেষে পাখিটির ছবি দিয়ে পোস্টার ছেপে ৩ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করে শহরের বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দিয়েছেন।
পাখিটির সঙ্গে তার হৃদয়ের সম্পর্ক উল্লেখ করে তিনি জানান, পাখিটি ফিরে পাওয়া তার ও পরিবারের জন্য খুবই প্রয়োজন। লিও’র সঙ্গী কোকোকে বাঁচাতেও পাখিটিকে পাওয়া জরুরি।
রিয়াদ হাসান বলেন, লিওকে কেউ খুঁজে দিলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুরষ্কারের টাকা দিয়ে দেবেন। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীসহ তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাজরিগার প্রজাতির পাখি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলসহ সমগ্র বনাঞ্চলে দেখা যায়। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম মেলোপসিটাকাস আনডুলাটাস (Melopsittacus Undulatus).
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রঙিন ছাতা
আজ রোদের ঝাঁজ নেই। বৃষ্টির সম্ভাবনাও কম। তবু সাফওয়ান সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে বেড়ায় একটা রঙিন ছাতা মাথায় দিয়ে। রোদ হোক, মেঘ হোক ছাতা হাতে থাকেই। আজ মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই আকাশে; তবুও ছাতা। তার ব্যাগে বইপত্র, কাঁধে ঝোলানো পানির বোতল আর হাতে সেই বিশাল রঙিন ছাতা। সবাই ঠাট্টা করে, পেছন পেছন আওয়াজ করে– ‘ছাতা মিয়া আসছে! ছাতা মিয়া!’ সাফওয়ানের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নীরবে হাঁটে নিজের মতো। যেন এই পৃথিবীতে তার কোনো তাড়া নেই, কোনো লজ্জা নেই, কোনো ব্যথা নেই।’
আজ ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে সাফওয়ান ছাতা খুলে সামনে রেখে ভেজা স্যান্ডউইচ কামড় দিচ্ছিল, তখনই এলো মিরাজ। মিরাজের হাতে দুই কাপ চা। একটা বাড়িয়ে দিল সাফওয়ানের দিকে। বলল– ভাইরে, সত্যি করে বল, ছাতাটা কিসের জন্য?
সাফওয়ান মুখ তুলে তাকাল, চোখেমুখে এক অদ্ভুত শান্তি। আস্তে বলল, স্মৃতি রক্ষা করি।
মিরাজ হাসল, কার স্মৃতি ছাতায়?
সাফওয়ান কিছু বলল না। এক চুমুকে চা শেষ করে উঠে পড়ল। সেই রঙিন ছাতা খুলে মাথার ওপর ধরল আর হাওয়ায় ভেসে ভেসে চলে গেল কলেজের গেটের দিকে।
মিরাজ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকল। ছেলেটা এমন কেন?
পরের দিন সকালে আবার দেখা হলো। আজ ক্যান্টিনে ছিল রিমি। নতুন ছাত্রী। তার হাতে মোটা মোটা বই আর অগোছালো চুল। রিমি সাফওয়ানের পাশের টেবিলে বসে পড়ল। হঠাৎ তার কলম মেঝেতে পড়ে গেল। সাফওয়ান ছাতা হাতে রেখে নরম গলায় বলল, তোমার কলম।
রিমি মৃদু হাসল। বলল, থ্যাঙ্ক ইউ ছাতা ভাই।
সাফওয়ান লজ্জা পেল। এতদিন পরে কেউ তাকে এই নামে ডাকল না বিদ্রূপ করে। বরং এমনভাবে বলল যেন নামটা আদরের।
রিমি বলল, আপনার ছাতাটা খুব সুন্দর।
সাফওয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর বলল, এটা আমার দাদির ছাতা। দাদি মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন– ‘যখন খুব কষ্ট পাবে, এই ছাতা মাথায় দিও, ছায়া পাবে।’
রিমি চুপ করে গেল। ছেলেটার কথায় যেন বাতাসের ভেতর একটা নরম কষ্ট ছড়িয়ে পড়ল। তারপর থেকে রিমি প্রায়ই সাফওয়ানের পাশে বসত। কখনও ছাতা নিয়ে গল্প করত, কখনও নিজেদের বই বদলে নিত। মাঝেমধ্যে রিমি বলত, ছাতা নিয়ে চল আজ ইউনিভার্সিটির পেছনে বটগাছের নিচে বসি।
এভাবেই কেটে গেল মাস তিনেক। একদিন রিমি এলো না। পরদিনও না। তৃতীয় দিনও না। চতুর্থ দিনে খবর এলো– রিমির বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়েছে।
সাফওয়ান সারাদিন ছাতাটা বন্ধ করে হাতে রাখল। তার মাথার ওপর তখন রোদ্দুর পুড়ছিল, গরমে মাথা ঝিমঝিম করছিল, কিন্তু সে ছাতা খোলেনি। রিমির অনুপস্থিতি যেন তার মাথার ওপর কোনো ছায়া রাখতে পারছিল না।
আরও এক সপ্তাহ কেটে গেল।
হঠাৎ এক বিকেলে মেঘ করে বৃষ্টি এলো। পুরো ইউনিভার্সিটিতে সবাই ছুটছে কোনো ছাদের নিচে আশ্রয় নিতে। ক্যান্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে সাফওয়ান ছাতা খুলে ধরেছে মাথার ওপর। ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা কণ্ঠ– ছাতাটা আমার দিকে দেবে?
পেছন ফিরতেই দেখে, রিমি দাঁড়িয়ে, ভেজা চুল, ভেজা চোখ। সাফওয়ান ছাতাটা তার দিকে এগিয়ে দিল। দু’জন এক ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। বৃষ্টি ঝরছিল অবিরাম। রিমি বলল, আমাকে একটা ছায়া দেবে সারাজীবন?
সাফওয়ান মাথা নিচু করে বলল, আমার ছাতা আছে। ছাতা ভাগ করে নিলে দু’জনেই ছায়ায় থাকব। কান্নাভেজা চোখে হেসে উঠল রিমি।
কলেজের মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে দুটো মানুষ– এক রঙিন ছাতার নিচে নতুন এক গল্প বুনছিল।
সুহৃদ ঢাকা