ভারত-পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের দাবার গুটি কাশ্মীর: মতিউর রহমান চৌধুরী
Published: 10th, May 2025 GMT
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেশি দিন চললে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের রাজনীতিতে, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি প্রস্তাব রাখবো, অধ্যাপক ইউনূস যেন সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন।
শনিবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র অয়োজনে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ইতিহাস যুদ্ধ করে না। যুদ্ধ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। কিন্তু ইতিহাসের দরকার আছে। ইতিহাসকে বাদ দেওয়া যাবে না। নতুন ইতিহাস লিখতে হলে পুরনো ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। ভারতীয় গণমাধ্যমেই দেখেছি যে, ভারতে সামনে দুটো নির্বাচন আছে। বিহার ও পশ্চিববঙ্গে। দুটোই রাজনৈতিক দিক থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য চ্যালেঞ্জ। এই যুদ্ধ পাকিস্তানকেও রক্ষা করতে পারে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা কিন্তু নির্বাচিত নন। ইমরান খান এখন জেলে। তার এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইমরান খান ও রাজনৈতিক নেতাদেরও ফয়সালা হয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সামনের কাতারে চলে আসছে। পাকিস্তানের জনগণ এখন কী বলবে? তারা বলবে দেশ রক্ষা করেছে আমাদের সেনাবাহিনী। সেজন্য দুই দিকেই রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। রাজনীতি বাদ দিয়ে ঐতিহাসিক কারণ লেখা যাবে না। আর ইতিহাস লিখতে হলে রাজনীতি লিখতে হবে।
মানবজমিন প্রধান সম্পাদক বলেন, এবারের যুদ্ধের দুটো দিক। ভুয়া সংবাদ অন্যতম। আরেকটা হচ্ছে এআই। আমরা নিজেরা যাচাই বাছাই করে দেখতে পাচ্ছি এবার যুদ্ধ হচ্ছে এআই’র মাধ্যমে। এটার একটা ব্যবসা আছে। এই যুদ্ধ যদি চলতে থাকে আমরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব। এই যুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে বেশি। কারণ আমাদের কোনো একটা বক্তব্য, কোনো একটা সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেটা আমরা আশা করি না। আশা করি যে, আমরা সতর্ক থাকবো। পুশ ইন চলছে। পুশ ইনকে বাধা দিতে গিয়ে আমরা এমন কোনো কাণ্ড না ঘটাই যেটা সামাল দিতে পারবো না।
তিনি বলেন, রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সবকিছু। বাংলাদেশে একটা টালমাটাল অবস্থা চলছে। শেয়ার বাজার কলাপস করেছে। আমদানিতে বিরাট চাপ। আমাদের সামনে একটা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এমনিতেই আছে। আরেকটা তৈরি হতে যাচ্ছে। ইস্টার্ন ফ্রন্টে কিন্তু যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমার আশঙ্কা- এখানে চীন একটা ফ্যাক্টর। ‘সাত কন্যা’র দিকে কিন্তু চীনের নজর রয়েছে। ভূ-রাজনীতিতে এটার প্রভাব অনেক থাকবে। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমরা চলে যাব, ভবিষ্যতে আপনারাও দেখবেন এই যুদ্ধ থামবে না। এই বিরোধ চলতেই থাকবে। কাশ্মীর হচ্ছে রাজনীতির দাবার ঘুঁটি। কাশ্মীর না থাকলে পাকিস্তানের নেতৃত্ব এবং ভারতের নেতৃত্বের ফয়সালা হবে না। ৪৭-এ ভাগ হয়েছে, তারপরও কেন বিরোধ? সরকার বদলায় এই যুদ্ধের কারণে। আগামীতেও তাই হবে।
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ভুয়া সংবাদের কারণে যেকোনো সময়, যেকোনো সিদ্ধান্তে আমাদের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভুয়া খবর থেকে সতর্ক থাকতে হবে। রাজনৈতিক যারা সিদ্ধান্ত নেন তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। দল নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত। তারা এখন পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। কিন্তু জাতিকে টাইম টু টাইম জানাতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। এরমধ্যেই আমাদের খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে কথা বলা, আচার-আচরণ থেকে সব কিছুতে, যাতে কোনো আঁচড় না লাগে। যে আঁচড় থেকে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আমার-আপনার একটা বক্তব্য কিন্তু দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে আমরা পাকিস্তানের দিকে নজর দিচ্ছি, সম্পর্ক গড়ছি। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, ভারত আমাদের বৈরী মনে করে, প্রতিপক্ষ মনে করে। ভারতের সঙ্গেও আমরা সুসম্পর্ক চাই। পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক চাই। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের দেনা-পাওনার বিষয়টিও আসছে। ভারতের অনেক সিদ্ধান্ত আমরা অপছন্দ করি। কিন্তু লক্ষ্য করেছেন যে, ভারতের যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে সব রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি কথা বলেছেন। তার আগের ঘটনা হচ্ছে কংগ্রেস বলেছে, তিনদিন আগেই অর্থাৎ ১৯ এপ্রিল তিনি জানতেন পেহেলগামে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আমি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছি সেনাবাহিনীর ওপর। এটা কি আসল কথা? না এটা আসল কথা না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া সেনাবাহিনী যুদ্ধ শুরু করে না।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভারত অধ্যুষিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু যেমন দুঃখজনক, তেমনই ভারতের হামলায় পাকিস্তানের বেছে বেছে মসজিদ ধ্বংস করাসহ ৩২ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যা করার যে অভিযোগ উঠেছে তাও দুঃখজনক। পেহেলগাম হামলায় নিহতের ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতের সাজানো নাটক বলে দাবি করেছে। ভারত বিশেষ ফায়দা অর্জনের জন্য এই ধরনের নাটক সাজিয়েছে বলে পাকিস্তানের দাবি।
তিনি বলেন, ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যে সকল মসজিদ ধ্বংস হয়েছে সেই সব মসজিদেই ওই দিন পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ব্ল্যাক আউটের মধ্যেই সংহতি প্রকাশের জন্য ফজরের ওয়াক্তে একত্রিত হয়েছিল পুরো এলাকার বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কোনো উসকানিতেই মুসলিম-হিন্দুর যুদ্ধ হিসেবে বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। তবে বিজিপি সরকার কর্তৃক ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করে ভারতীয় মুসলমানদের স্বস্তি প্রদান করা উচিত। তাই এই দুই দেশে অবস্থানকারী মুসলমান ও হিন্দুরা যার যার অবস্থান থেকে ধর্মীয় উত্তেজনা পরিহার করে এই যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। তা না হলে বিশ্ব এই দুই পারমাণবিক শক্তির সংঘাতের ভার বইতে পারবে না।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের মূল কারণ রাজনৈতিক নয় ঐতিহাসিক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন। এতে জয়লাভ করেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান, মাঈনুল আলম, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন ও ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ব ট ফর ড ম ক র স র জন ত ক ন ত এই য দ ধ র র জন ত আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রবিরতির পরেও প্রস্তত ও সতর্ক আছি: ভারতীয় সামরিক বাহিনী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ঘোষণা ও কার্যকর হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পেরেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ‘অনেক মিথ্যা ও ভুয়া খবর প্রচার’ করা হয়েছে বলে অভিযোগও তুলেছে তারা।
সামরিক বাহিনীর বিশেষ বৈকালিক ব্রিফিংয়ে এই প্রথমবারের মতো ভারতীয় নৌবাহিনীর এক সিনিয়র অফিসার হাজির হয়েছিলেন।
নৌবাহিনীর সেই কর্মকর্তা কমোডর রঘু নায়ার বলেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে, সেই নির্দেশ তিন বাহিনীই পালন করবে। তবে বাহিনীগুলো সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ও সজাগ আছে।
‘পাকিস্তানের তরফ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা শক্তি দিয়ে রোখা হয়েছে বা ভবিষ্যতেও যদি আবারও উত্তেজনা বাড়ে, সেক্ষেত্রেও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। রাষ্ট্র রক্ষা করতে যে কোনো প্রয়োজনীয় সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত আছি,’ বলেন কমোডর নায়ার।
সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ‘ব্যাপকহারে মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানো হয়েছিল।
‘ভারতীয় বিমান ও স্থল বাহিনীর যেসব স্থাপনা তারা ধ্বংস করতে বা ক্ষতি সাধন করতে পেরেছে বলে দাবি করেছিল, সে সবই ভুয়া দাবি,’ বলেছেন কর্নেল কুরেশি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনা ও বিমানবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পেরেছে বলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী দাবি করেছে।
বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বারবার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে ভারতীয় বাহিনী নাকি সে দেশের মসজিদ নিশানা করে আক্রমণ করেছে।
‘স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র এবং ভারতের সামরিক বাহিনীগুলো সাংবিধানিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। তারা প্রতিটা ধর্মীয় উপাসনালয়কে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে থাকে। আমাদের অপারেশনগুলোর একমাত্র লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের শিবিরগুলো এবং যেসব স্থাপনাকে ভারতবিরোধী কাজের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল সেগুলো। কোনো ধর্মীয় স্থান ভারতীয় বাহিনীর নিশানায় ছিল না,’ বলেন উইং কমান্ডার সিং। সূত্র: বিবিসি