প্রচণ্ড তাপদাহে বিপর্যস্ত নগরজীবন। তীব্র গরমে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ। আর্দ্রতা বেশি থাকায় এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশজুড়ে। অন্তত ৬০ জেলায় বইছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। আগামী সোমবার (১২ মে) থেকে কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস। তবে, সারা দেশকে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুরো সপ্তাহ।

আবহাওয়া অফিস জানায়, তাপমাত্রার পারদ প্রতিদিনই ছাপিয়ে যাচ্ছে আগের দিনের রেকর্ড। আজ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে, গরম অনুভূত হচ্ছে (ফিল লাইক) আরো বেশি। এ অবস্থা থাকবে আরো দুয়েকদিন।

তাপমাত্রা ৩৮-৩৯.

৯ ডিগ্রি হলে সেটাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। সে হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।

আরো পড়ুন:

ঝড়-বৃষ্টি থাকবে কত দিন, জানাল আবহাওয়া অফিস

বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরেছে চা বাগানের

গত তিনদিন থেকেই দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কোথাও মাঝারি, কোথাও মৃদু আবার কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রার এ ঊর্ধ্বগতি রবিবারও (১১ মে) থাকতে পারে। তবে, আশার খবর হলো আগামী সোমবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুর ইসলাম বলেন, ‍“তাপপ্রবাহ ১২ মে বা তার আশেপাশের সময়ে কমে আসতে পারে। তখন দেশের তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। তবে পুরোপুরি তাপপ্রবাহ মুক্ত নাও হতে পারে। বৃষ্টির ধারাটা ১২ তারিখের পরে আস্তে আস্তে বাড়বে। এটা যখন আরো বাড়বে অর্থাৎ পূর্ণ মাত্রায় যাবে বিস্তৃতি বাড়বে; তাপপ্রবাহ ধীরে ধীরে কমে আসবে। ১৬ থেকে ১৮ মের মধ্যে তাপপ্রবাহ মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

তিনি আরো বলেন, “তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে আর্দ্রতা কমে আসে। বাতাসের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম। সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কমে আসলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্দ্রতা বাড়বে। পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরি না হলে বৃষ্টি হবে না। মার্চ, এপ্রিল, মে– এই সময় যে বৃষ্টিটা হয় কালবৈশাখী ঝড় থেকে হয়।”

আবহাওয়া অফিস বলছে, মে মাস ঘূর্ণিঝড় প্রবণ মাস। কিন্তু আগামী ১০ দিনে তেমন কোনো ঝড়ের আশঙ্কা নেই।

ঢাকা/হাসান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গরম

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কিনিরা যে কারণে ৪ জুলাই উদযাপন করে

প্রযুক্তি-প্রাচুর্য-সমৃদ্ধি, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পারমাণবিক শক্তিমত্তা ও প্রতিপত্তির বিচারে যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি ও তিলোত্তমা। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মধ্যে একটি হলো ৪ জুলাই, যেটিকে মার্কিনিরা পালন করে ইন্ডিপেনডেন্স ডে হিসেবে।

৪ জুলাই গ্রীষ্মকালীন বিনোদনের সর্বোচ্চ রূপ। কিছু উৎসব কয়েক দশক আগের। অন্যরা আঞ্চলিক রীতিতে আয়োজন করেন, বড় শহর বা ছোট শহরের চরিত্র ধারণ করে। এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক দলিল Declaration of Independence গ্রহণ করেছিল ১৭৭৬ সালে। এই ঘোষণার মাধ্যমে গ্রেট ব্রিটেন থেকে ১৩টি উপনিবেশ নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। আর শুরু হয় ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার পথচলা।

এদিন আমেরিকার মানুষেরা নানা আয়োজনে তাদের দেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে।

এবারো বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আতশবাজি প্রদর্শনে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে তাদের পোষা প্রাণিদের প্যারেড, ক্লাসিক গাড়ি প্রদর্শনের প্রভৃতি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলসের বিখ্যাত ডিজনিল্যান্ডেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শো ও আতশবাজি প্রদর্শনের বড় রকমের প্রস্তুতি।

১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই ফিলাডেলফিয়ায় দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসের বৈঠকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গ্রহণের স্মরণে এই উৎসব পালিত হয়। সর্বসম্মত এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার ১৩টি মূল উপনিবেশকে বহু বছরের অস্থিরতার পর ব্রিটিশ শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল যা ততদিনে সশস্ত্র সংঘাতের রূপ নিয়েছে।

কী ঘটেছিল ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই?
এই দিনেই Second Continental Congress সর্বসম্মতিক্রমে Declaration of Independence গ্রহণ করে। এই ঘোষণাপত্রের প্রধান রচয়িতা ছিলেন থমাস জেফারসন, যেখানে উপনিবেশগুলোর প্রতি রাজা জর্জ তৃতীয়-এর অবিচারের বিস্তারিত বিবরণ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তুলে ধরা হয়। যদিও ঘোষণাটি ৪ জুলাই গৃহীত হয়, অধিকাংশ প্রতিনিধির স্বাক্ষর পড়ে ২ আগস্ট ১৭৭৬-এ। তবে জন হ্যানকক এবং চার্লস থমসন ৪ জুলাই দিনেই স্বাক্ষর করেন।

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় আমেরিকার যে ১৩টি উপনিবেশ ছিল, সেগুলো একত্রে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করে। এই উপনিবেশগুলো ছিল- নিউ হ্যাম্পশায়ার, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড ও প্রভিডেন্স প্লান্টেশন, কানেকটিকাট, নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, ডেলাওয়ার, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়া। 

নিউ হ্যাম্পশায়ার ছিল ছোট কৃষি ও জেলেদের উপনিবেশ, আর ম্যাসাচুসেটস ছিল বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। রোড আইল্যান্ড ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতীক, যেখানে প্রভিডেন্স নামে একটি মুক্তচিন্তার শহর গড়ে উঠেছিল।

কানেকটিকাট ছিল কৃষিভিত্তিক সমাজ, নিউইয়র্ক ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র, আর নিউ জার্সি ছিল কৃষি ও কারিগর শ্রেণির উপনিবেশ। পেনসিলভানিয়ায় ফিলাডেলফিয়া ছিল ঘোষণা-পত্র স্বাক্ষরের স্থান। ডেলাওয়ার ছিল ছোট হলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবিধান অনুমোদনে প্রথম। মেরিল্যান্ড ছিল ক্যাথলিকদের জন্য প্রতিষ্ঠিত, আর ভার্জিনিয়া ছিল সবচেয়ে পুরনো ইংরেজ উপনিবেশ এবং নেতৃত্বদানকারী অঞ্চল—জর্জ ওয়াশিংটনের জন্মস্থান। 

নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনা ছিল ধনী কৃষিজ সম্পদে ভরপুর উপনিবেশ, আর সবচেয়ে নবীন উপনিবেশ ছিল জর্জিয়া, যা শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে শরিক হয়। এই উপনিবেশগুলো একসঙ্গে মিলেই গড়ে তোলে স্বাধীন আমেরিকার ভিত্তি।

বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর হামলা সার্থকভাবে মোকাবিলা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভের প্রথম দেড়শ’ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিগ্রহে বিশ্বে শীর্ষ স্থান দখল করে। অতঃপর বিশ্বজুড়ে একচ্ছত্র প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। আবার বিশ শতকে আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান-জার্মানি ও হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়। 

এদিকে ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর ৩৫৩টি ইমপেরিয়াল জাপানিজ এয়ারক্রাফট হাওয়াই এবং অপারেশন ওয়ান ও অপারেশন জেডের আওতায় হনলুলুতে আঘাত হানে। পার্ল হারবার নামে সমধিক খ্যাত ওই হামলায় আমেরিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। 

পরবর্তী সময়ে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চোখের নিমেষে কয়েক লাখ লোককে খুন করে এবং পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র-সমৃদ্ধ বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-মহাকাশ অভিযান ইত্যাদির উন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধনের মুখরোচক বুলির আড়ালে সমরাস্ত্র তৈরির পেছনে রাশি রাশি অর্থ ব্যয় শুরু করে। বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র বহুলাংশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

জিডিপি বা অভ্যন্তরীণ স্থূল উৎপাদনের (গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট) বিচারে আমেরিকা বিশ্বের সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত। অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ, রাশি রাশি কৃষিজাত পণ্য এবং শিল্প-কারখানায় সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক নিয়ামক শক্তি হিসেবে স্বীকার করা হয়। বিশ্বজনীন নানাবিধ উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মূলধন তহবিলে আমেরিকার উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রকে মোড়লের মর্যাদা দিয়েছে। 

ইউরোপীয় কলোনিগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমেরিকাই নিজস্ব মাতৃভূমিকে পরাধীনতার লৌহশৃঙ্খল সাফল্যের সঙ্গে ছিন্ন করেছে। আবার সরকার নয়, বরং নাগরিকদের ওপরই দেশের সার্বভৌমত্ব নির্ভর করে নীতিমালার ভিত্তিতে নিজ ভূখণ্ডে প্রথম স্বাধীন জাতি গঠন করেছে।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ