ভারতে মুসলমানদের ওপর দমনপীড়ন সীমা ছাড়িয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিনিয়ত তাদের বাড়িঘর, মসজিদ, খানকাহ, কবরস্থান গুঁড়িয়ে দিচ্ছে উগ্রবাদীরা। এ পরিস্থিতিতে উপমহাদেশের মুসলমানদের নিরাপত্তার স্বার্থেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্ব অপরিহার্য।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা ও দায়’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিমত দেন বক্তারা। বাংলাদেশ-পাকিস্তান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি এ সেমিনারের আয়োজক।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আবু বকর রফিক বলেন, ‘ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করা ইমানি দায়িত্ব। বাংলাদেশ-পাকিস্তান বন্ধুত্ব উপমহাদেশের মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্যই অপরিহার্য।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে আয়োজক সংগঠনের সেক্রেটারি এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলো ভারতবর্ষের প্রত্যেক মুসলমানদের রক্ত, ঘাম, শ্রম ও ত্যাগের ফসল। ভারতের যেসব অঞ্চলের মুসলমানরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলেও তাদের ভূখণ্ড দেশটির অঙ্গ হবে না জেনেই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেওয়ায় সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা ১৯৪৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে থেকে যাওয়া মুসলমানদের ওপর চরম দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। উগ্র হিন্দুদের অত্যাচার থেকে তাদের উদ্ধারের দায় রয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলমানের। এ জন্যই বাংলাদেশ-পাকিস্তান বন্ধুত্ব এখন সময়ের দাবি।’

দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির চেয়ারম্যান শিব্বির মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র সাংবাদিক জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তৃতা করেন রাওয়া ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.

) আবদুল হক, কর্নেল (অব.) আশরাফ-আল-দ্বীন, মাছিহাতা দরবার শরিফের পীরজাদা সাইয়েদ মুহাম্মদ আহসান, কবি জাফর উল্লাহ জাফের প্রমুখ।

বক্তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা এবং নিপীড়িত মুসলমানদের মুক্তির জন্য চীনের সঙ্গে দেশ দুটিকে কৌশলগত মিত্রতা করার তাগিদ দেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল দ শ প ক স ত ন বন ধ ত ব র ম সলম ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ফেরত পাঠানো হলো অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ‘পুশ ইন’ করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়। তবে সোনালী বিবির স্বামীকে ফেরত নেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে চার সপ্তাহের মধ্যে সোনালী বিবিদের ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলা থেকে কাজের সন্ধানে সোনালী বিবি ও তাঁর পরিবার দিল্লি গিয়েছিল। গত জুন মাসে বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের ধরা হয়। তারপর সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। গত ২০ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আলীনগর থেকে সোনালী বিবি, তাঁর স্বামী, সন্তানসহ ভারতের ছয় নাগরিককে আটক করে পুলিশ। ওই ছয় ভারতীয় নাগরিক হলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ধিতোরা গ্রামের দানিশ শেখ (২৮), তাঁর স্ত্রী সোনালী বিবি (২৬), তাঁদের ৮ বছর বয়সী ছেলে এবং সুইটি বিবি (৩৩) ও তাঁর ১৬ ও ৬ বছর বয়সী ছেলে। তাঁদের মধ্যে সোনালী বিবি অন্তঃসত্ত্বা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ জানান, ওই ছয়জনের মধ্যে সোনালী বিবির স্বামী দানিস শেখসহ বাকি চারজনকে ফেরত নেয়নি বিএসএফ।

বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পুশ ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তাঁর ৮ বছরের সন্তানকে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন।
হস্তান্তর শেষে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশ ইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশ ইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

২০ আগস্ট ওই ছয় ভারতীয়কে আটকের পর দুটি শিশু ছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১ ডিসেম্বর আদালত ওই চারজনকে জামিন দেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে রাত আটটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তাঁরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলা এলাকার বাসিন্দা সোনালী বিবির আত্মীয় ফারুক হোসেনের জিম্মায় তাঁদের জামিন দেওয়া হয়। তবে জামিনে মুক্তির দেড় ঘণ্টা পর ওই দিনই রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।

ভারতীয় নাগরিক হওয়ার যাবতীয় প্রমাণ সাপেক্ষে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট সোনালী বিবিদের ফেরত আনার নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তেমন উদ্যোগী হচ্ছিল না। এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মানবিক কারণে সোনালী বিবিদের দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দেন। গত বুধবার সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতির কথা জানান। এরপর আজ শুক্রবার সোনালী বিবি ও তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে নিল ভারত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ