সুনামগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতে কারফিউ, এপারে বিজিবির টহল জোরদার
Published: 11th, May 2025 GMT
ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের জেরে সুনামগঞ্জ জেলার উত্তরে সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তিন জেলায় কারফিউ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ‘পুশ–ইন’ ঠেকাতে ও নাগরিকদের নিরাপত্তায় টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদারের পাশাপাশি কিছু কিছু বিওপিতে বিজিবি সদস্যদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আজ রোববার সকালেও সুনামগঞ্জ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিজিবির বাড়তি টহল দেখা গেছে। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি আগের মতোই স্বাভাবিক আছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলার সঙ্গে ভারতের ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যনগর উপজেলার সাত কিলোমিটার নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নে; ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ২৩ কিলোমিটার সিলেট ব্যাটালিয়নের অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত সুনামগঞ্জ বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধীন। সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ৯০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৮৯ কিলোমিটার স্থলসীমা ও ১ কিলোমিটার জলসীমা। সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকা। কিছু কিছু স্থান কাঁটাতারের বেড়াবিহীন রয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পুশ–ইনের অপচেষ্টা চলমান থাকলেও সুনামগঞ্জ সীমান্তে জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করায় এখানে পুশ–ইনের ঘটনা ঘটেনি।
সুনামগঞ্জ বিজিবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, সিলেটে ৪৮ বিজিবির সীমানা শুরু হয়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকা থেকে। এই উপজেলার বাঁশতলা, পেকপাড়া–বাগানবাড়িতে থাকা বিজিবি ক্যাম্পের ঠিক উল্টো দিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিকেরা অবৈধ পথে যাতে ওপারে না যান, এলাকায় সভা করে সতর্ক ও সচেতন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী জনগণের নিরাপত্তায় বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত। বিজিবি সীমান্তে টহল বাড়ানোসহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবির পাশাপাশি সিভিল প্রশাসনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। সুনামগঞ্জ সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সুরক্ষিত আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ম ন ত পর স থ ত উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
২০১৮ সালের পাতানো নির্বাচনের হোতা নূরুল হুদা: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মোহাম্মদ জুনাইদের আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে বিচারক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে আদালতে উঠানো হয় নূরুল হুদাকে। এসময় তার বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট পরানো ছিল। এজলাসে হাজির করানোর পর তার হেলমেট ও হ্যান্ডকাফ খুলে দেয় পুলিশ। এরপর ৩টা ৪৪ মিনিটের এর দিকে আদালতে শুনানি শুরু হয়।
এদিন আদালতে শুনানি শুরুর আগে তার আইনজীবীদের সাথে অল্প সময় কথা বললেও শুনানি চলাকালে কোনও কথা বলেননি নূরুল হুদা। আদালতে পুরো সময় মাথা নিচু করেছিলেন তিনি। শুনানি চলাকালে তাকে বিমর্ষ থাকতে দেখা যায়।
এদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কোনও নিরাপত্তা ছিল না। বিরোধী দলীয় প্রার্থীর ও ভোটারের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়। এগুলোর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি নূরুল হুদা। ২০১৮ সালে রাত ৩টার মধ্যে ২০১৮ আসনের ফলাফল ঘোষণা করেন তিনি। তিনি কীভাবে এটা করলেন সেটা তাকে জানাতে হবে। এছাড়া রাতে প্রিসাইডিং অফিসারদের বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়াসহ তাদের পাহারায় ও নির্দেশনায় এই রাতের ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এই পাতানো নির্বাচনের হোতা ছিলেন উনি (নূরুল হুদা) এবং তার সচিব ও প্রশাসন কাজ করেছে তার নির্দেশে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সঙ্গে উনার যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের খাতিরেই এসব পলিসি হয়েছে। নির্বাচনের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। এতবড় একটা নির্বাচন ছিল প্রহসনমূলক।
এরপর শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব বলেন, গত ২৩ তারিখের আবেদন ও আজকের আবেদনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এসময় তিনি গত ৪ দিনের রিমান্ডে আসামির থেকে কী কী তথ্য পাওয়া গেছে তা জানতে চান।
তিনি বলেন, এই মামলার ধারাগুলো জামিনযোগ্য ছিল। কিন্তু প্রসিকিউশন পরবর্তীতে আবার নতুন ধারা যোগ করতে আবেদন করেন। আদালতে এখন কথা বলতেই ভয় করে। কারণ এই কথাগুলো শুনেই হয়তো আবার নতুন করে মামলা দেবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে আরও বলেন, এখানে কিছু কিছু ধারা প্রশ্নবিদ্ধ। ধারা কীভাবে সংশোধন করা হয়। নূরুল হুদার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট ও দায় সৃষ্টিকারী কোনও ডকুমেন্টস নেই। রিমান্ডের আবেদনে যেসব তথ্য উপাত্ত থাকা প্রয়োজন সেগুলো নেই। নির্বাচন কমিশনে কী কী অনিয়ম হয়েছে এটা তো একজন এসআই তদন্ত করতে পারেন না। তারা শুধু তথ্য চাইতে পারেন।
এর উত্তরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, আইও তার তদন্ত চালিয়ে যাবেন। এটা তার কাজ। আদালত এই তদন্তের ওপর নির্ভর করে সবকিছু দেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত কী করবেন। নূরুল হুদা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
এদিন শুনানি শেষে বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটের দিকে বিচারক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এজলাস ত্যাগ করেন।
এর আগে গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরে নূরুল হুদার বাড়িতে গিয়ে ‘স্থানীয় জনতা’ তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরদিন আদালতে তোলা হলে তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
প্রসঙ্গত, সাবেক সচিব নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিইসি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের দ্বাদশ সিইসি। তার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের কমিশনের অধীনে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের সব ভোট হয়।