ভারত–পাকিস্তান সংঘাতের জেরে সুনামগঞ্জ জেলার উত্তরে সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তিন জেলায় কারফিউ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ‘পুশ–ইন’ ঠেকাতে ও নাগরিকদের নিরাপত্তায় টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদারের পাশাপাশি কিছু কিছু বিওপিতে বিজিবি সদস্যদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আজ রোববার সকালেও সুনামগঞ্জ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় বিজিবির বাড়তি টহল দেখা গেছে। তবে সীমান্ত পরিস্থিতি আগের মতোই স্বাভাবিক আছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিজিবি সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলার সঙ্গে ভারতের ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যনগর উপজেলার সাত কিলোমিটার নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নে; ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ২৩ কিলোমিটার সিলেট ব্যাটালিয়নের অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরে ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত সুনামগঞ্জ বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধীন। সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন ৯০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৮৯ কিলোমিটার স্থলসীমা ও ১ কিলোমিটার জলসীমা। সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকা। কিছু কিছু স্থান কাঁটাতারের বেড়াবিহীন রয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পুশ–ইনের অপচেষ্টা চলমান থাকলেও সুনামগঞ্জ সীমান্তে জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করায় এখানে পুশ–ইনের ঘটনা ঘটেনি।

সুনামগঞ্জ বিজিবির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, সিলেটে ৪৮ বিজিবির সীমানা শুরু হয়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকা থেকে। এই উপজেলার বাঁশতলা, পেকপাড়া–বাগানবাড়িতে থাকা বিজিবি ক্যাম্পের ঠিক উল্টো দিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশি নাগরিকেরা অবৈধ পথে যাতে ওপারে না যান, এলাকায় সভা করে সতর্ক ও সচেতন করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী জনগণের নিরাপত্তায় বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত। বিজিবি সীমান্তে টহল বাড়ানোসহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবির পাশাপাশি সিভিল প্রশাসনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। সুনামগঞ্জ সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সুরক্ষিত আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ম ন ত পর স থ ত উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল উড়োজাহাজ নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প: মার্কিন গণমাধ্যম

কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ (বোয়িং জেট) উপহার হিসেবে নেওয়ার কথা ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটিকে তিনি এয়ারফোর্স ওয়ান (প্রেসিডেন্টের সরকারি উড়োজাহাজ) হিসেবে ব্যবহার করবেন এবং প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে চান। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের উপহার নেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম রয়েছে।

গতকাল রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এসেছে।

এ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন করেছে এবিসি নিউজ। প্রতিবেদনে উড়োজাহাজটিকে ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’ অভিহিত করা হয়েছে। এবিসি নিউজ জানায়, বোয়িং ৭৪৭–৮ জাম্বো জেট নামের উড়োজাহাজটি সম্ভবত মার্কিন সরকারের ইতিহাসে পাওয়া সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপহার হতে চলেছে।

তবে কাতার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। দেশটি জানিয়েছে, উড়োজাহাজটিকে উপহার হিসেবে উল্লেখ করা প্রতিবেদনগুলো ‘সঠিক নয়’।

ওয়াশিংটনে কাতার দূতাবাসে কর্মরত জনসংযোগ কর্মকর্তা আলি আল–আনসারি বলেন, এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে সাময়িক ব্যবহারের জন্য একটি উড়োজাহাজ সম্ভাব্য হস্তান্তরের বিষয়ে কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আল–আনসারি।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা কোনো রাজা, যুবরাজ বা বিদেশি রাষ্ট্র থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারবেন না।

তবে ট্রাম্প তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর উড়োজাহাজটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জন্য গড়ে তোলা সংগ্রহশালায় হস্তান্তর করে বিধানটিকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বোয়িং ৭৪৭–৮ জাম্বো জেটটি বছর দশকের পুরোনো। এটির বাজারমূল্য ৪০ কোটি ডলার।

এবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন। এ সফর চলাকালে উড়োজাহাজের বিষয়ে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে।

এদিকে এই উপহার গ্রহণের বিষয়ে নৈতিকতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে সরকারের দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য তৈরি করা আইনকে অবজ্ঞা করা হবে।

ট্রাম্প–ঘনিষ্ঠ কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক লরা লুমার বলেছেন, কাতারের দেওয়া উড়োজাহাজ গ্রহণ করা হলে তা প্রশাসনের ওপর ‘কালিমা’ ফেলবে।

খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে লরা লুমার বলেন, ‘আমরা স্যুট পরা জিহাদিদের কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলারের উপহার গ্রহণ করতে পারি না। কাতারিরা হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো ইরানি ছায়া সংগঠনগুলোকে অর্থের জোগান দেয়। আর এসব সংগঠন মার্কিন সেনাদের হত্যা করেছে।’

তবে হোয়াইট হাউস ও আইন মন্ত্রণালয় মনে করছে, উপহারটি বৈধ এবং এটা কোনো ঘুষ নয়। কেননা, কোনো নির্দিষ্ট সুবিধা বা কাজের বিনিময়ে এটি নেওয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এবিসি নিউজকে এমনটাই জানিয়েছে। সূত্রমতে, এটি অসাংবিধানিক নয়। কারণ, এটি প্রথমে মার্কিন বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরে প্রেসিডেন্টের সংগ্রহশালায় দেওয়া হবে। ফলে এটি ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে না।

এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে এএফপির করা অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি হোয়াইট হাউস।

ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি বলেছে, এ পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসকে ব্যক্তিগত আর্থিক লাভের জন্য ব্যবহার করছেন। কমিটি আরও বলেছে, শ্রমজীবী পরিবারগুলো যখন উচ্চমূল্যের চাপে অতিষ্ঠ, তখন ট্রাম্প নিজের ও তাঁর ধনী পৃষ্ঠপোষকদের সম্পদ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টির একাধিক আইনপ্রণেতা এ পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ