রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় দুই পা হারালেও মনোবল হারাননি আমজাদ
Published: 11th, May 2025 GMT
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি শোকের দিন বললে ভুল হবে না। সাভারের রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান প্রায় এগারো শ শ্রমিক, আহত হন আরও প্রায় আড়াই হাজার। ভবনটিতে কাজ করা কর্মী ও তাঁদের পরিবারের জীবনে নেমে আসে মানবিক বিপর্যয়।
এই ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন ভবনটিতে কাজ করা কুড়িগ্রামের আমজাদ হোসেনও। যদিও প্রাণে বেঁচে যান তিনি, কিন্তু চিরতরে হারিয়ে ফেলেন দুটি পা। পরিবারের কর্মক্ষম মানুষটি মুহূর্তের মধ্যেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন, সমাজ ও পরিবারের গ্লানিতে পরিণত হন। জীবন যেন থমকে যায়।
প্রথম এক বছর পঙ্গুত্ব আর হতাশার মধ্যেই কাটে আমজাদের। নিজের ভবিষ্যৎ, পরিবারের দায়িত্ব—সবকিছু নিয়ে ছিল দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তা।
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রায় দেড় বছর লেগে গেছে। আগে সুস্থ ছিলাম, দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতাম। যেখানে খুশি সেখানে ঠিকভাবে যাওয়া যেত। কিন্তু দুর্ঘটনার পর বাড়িতে আসার পর আর সেরকমটা করা হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম, শুয়ে শুয়ে ভাবতাম এখন কী করব। কী করলে জীবন চলবে। সংসার চলবে।’
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা সত্ত্বেও থেমে যাননি আমজাদ। প্রবল মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে নতুনভাবে পথচলার। আর এই যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়ায় বেসরকারি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংক। ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে তাঁর নতুন জীবনের শুরু।
আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দোকান শুরু করার পর ভাবি, কোন জিনিসটি করলে দোকান সবচেয়ে ভালো চলবে। তারপর ভাবছিলাম রিচার্জের ব্যবসা কীভাবে করা যায়। নিজে নিজেই ভাবছিলাম কার কাছ থেকে এই সিমগুলো পাওয়া যাবে। কার মাধ্যমে এই সিমগুলো নিলে ব্যবসা করা যাবে.
স্মৃতি হাতড়ান আমজাদ, ‘বাংলালিংকের মনু নামের একজন ছিলেন, মারা গেছেন। উনি একদিন আমার দোকানে এসে বলেন, কী ব্যাপার, তোমার দোকানে কি রিচার্জের সিম নেই? আমি বলি, না ভাই, নেই। তখন তিনি বলেন, তাহলে তোমাকে বাংলালিংকের একটা সিম দিই? আমি রাজি হই। রিচার্জের সিম দেওয়ার কিছুদিন পরেই উনি পোস্ট কোড করে দেন। তখন টপ-আপ আমার কাছে ছিল না। বাংলালিংকের সঙ্গে প্রথম কাজ শুরু করি, আমি রিচার্জের কাজ করব বাংলালিংকের—যেন অন্য রকম একটি ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করতে থাকে।’
বর্তমানে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মোবাইল রিচার্জ বিক্রিকারী দোকানের মালিক আমজাদ। মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন এই দোকান থেকে। শুধু অর্থনৈতিক সাফল্যই নয়, সামাজিকভাবেও তিনি হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় একজন ব্যক্তি।
গ্রামের অনেকেই জানান, এলাকায় আগে তাঁরা এ ধরনের সেবা পাননি। আমজাদ হোসেনের কারণেই এই সেবা পাচ্ছেন। বাংলালিংকের সহায়তায় এবং আমজাদের ইচ্ছাশক্তির জোরেই আজ তিনি সফল।
নিজের জীবন বদলে দিয়ে অন্যদেরও অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘যদি মনোবল শক্ত না থাকত তাহলে আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না।’
আমজাদের মতে, বাংলালিংক কেবল একটি মোবাইল অপারেটরই নয়, বরং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি প্ল্যাটফর্ম। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসংখ্য মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করে আসছে বাংলালিংক। আর প্রতিনিয়ত তৈরি করছে ‘দিনবদলের গল্প’।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমজ দ হ স ন পর ব র র দ র ঘটন ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগেবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে