ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট চলছে। এতে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। সিরিঞ্জ, ক্যানুলাসহ জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে বললে অনেক সময় রোগীর স্বজনদের তোপের মুখে পড়ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাসপাতালে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করত দলীয় সিন্ডিকেট। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী ঘরানার ঠিকাদারেরা আত্মগোপনে চলে যান। এখন তাঁরা ঠিকমতো চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করছেন না। এ অবস্থায় মাসখানেক ধরে স্যালাইন সেট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জ, হ্যান্ডগ্লাভসসহ নানা ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়ার্ডগুলোতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৫০ হাজার ক্যানুলা প্রয়োজন হয়; কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৫-৩০ হাজার। মাসে ১৪-১৫ হাজার স্যালাইন সেটের দরকার হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ৮-১০ হাজার। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ল্যাব মিলে ১০, ৫ ও ৩ সিসি সিরিঞ্জ প্রতি মাসে দরকার প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো। ওই অবস্থায় ল্যাবগুলোতে সিরিঞ্জ সরবরাহ ঠিক থাকলেও ওয়ার্ডের রোগীদের কিনতে হচ্ছে।

গত রোববার বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের ৬, ৭, ৮ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে কথা হয় অন্তত ১০ জন রোগী ও তাঁদের স্বজনের সঙ্গে। জামালপুরের মেলান্দহ থেকে আসা মো.

বাদশা (৪৫) ভর্তি আছেন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বড় একধরনের সিরিঞ্জ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় অন্য সব ওষুধ দিচ্ছে।

এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৫০ হাজার ক্যানুলা প্রয়োজন হয়; কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২৫-৩০ হাজার। মাসে ১৪-১৫ হাজার স্যালাইন সেটের দরকার হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে ৮-১০ হাজার। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ল্যাব মিলে ১০, ৫ ও ৩ সিসি সিরিঞ্জ প্রতি মাসে দরকার প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর এলাকার রাকিবুল ইসলামের স্ত্রী মারিয়া আক্তার গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভর্তির সময় স্যালাইন সেট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জও বাইরে থেকে এনে দিতে হয়েছে। ওষুধও বাইরে থেকে আনতে হয়েছে।

জরুরি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী কিনে আনতে বলায় রোগীর স্বজনদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে নার্স ও চিকিৎসকদের। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা শনিবার হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক করেন। এতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস, উপপরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) শেখ আলী রেজা সিদ্দিকী, সিনিয়র স্টোর অফিসার ঝন্টু সরকার উপস্থিত ছিলেন। অন্য চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন মো. শাদাব ইবনে শরাফত, বেনজীর আহমেদ, ইফতেখার হায়দার, আরিফ মাহবুব, খায়রুল জুয়েল, মো. আনিসুর রহমান, মহিউদ্দিন মাহি, জাহিদ সোহান, সোহেল রানা হিমেল, তুবাউল লিমাত প্রমুখ।
এ সময় চিকিৎসকেরা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জাম নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহের জন্য হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। এ ছাড়া তাঁরা হাসপাতালের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধ করার দাবিসহ বিভিন্ন দাবি জানান।

হাসপাতালের কিডনি বিভাগের চিকিৎসক মো. শাদাব ইবনে শরাফত প্রথম আলোকে বলেন, একজন মুমূর্ষু রোগী এলে যে জরুরি জিনিসগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলোর চাহিদামতো সরবরাহ হচ্ছে না। এতে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে জিনিস কিনে আনতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মাসখানেক রোগীদের জন্য অতীব জরুরি স্যালাইন সেট, ক্যানুলা, সিরিঞ্জ না থাকায় চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম রোগীরা হাসপাতাল থেকে প্রাপ্য। হাসপাতালের ৮০ শতাংশ রোগী দরিদ্র হওয়ায় তাঁদের জন্য কিনে আনাটাও কষ্টকর।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, যেন দ্রুত সমস্যা নিরসন করা হয়। এ ছাড়া হাসপাতাল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখা, দালালদের দৌরাত্ম্যসহ অন্যান্য বিষয়ও তুলে ধরা হয়েছে।’

একজন মুমূর্ষু রোগী এলে যে জরুরি জিনিসগুলো প্রয়োজন হয়, সেগুলোর চাহিদামতো সরবরাহ হচ্ছে না। এতে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকে জিনিস কিনে আনতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যাচ্ছে।মো. শাদাব ইবনে শরাফত, কিডনি বিভাগের চিকিৎসক

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদারেরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া। তাঁরা গা ঢাকা দেওয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসপত্র সরবরাহ করছিলেন না। বারবার চিঠি দেওয়া হলেও তাঁরা প্রয়োজনের তুলনায় কম জিনিস সরবরাহ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা চালিয়ে নিলেও মাসখানেক কিছুটা এমন পরিস্থিতি হয়। সেটা ওভারকাম করে ফেলেছি। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে। এ ছাড়া চিকিৎসকেরা যেসব বিষয় উত্থাপন করেছেন, সেগুলো নিরসনে কাজ চলছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স য ল ইন স ট চ ক ৎসক র ৩০ হ জ র পর স থ ত ল ইসল ম র চ লক র জন য দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) শিক্ষক ও জনবল নিয়োগসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকালে পাঠ কার্যক্রম বন্ধ রেখে একাডেমিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি করা হয়।

নগরের মাসকান্দা এলাকায় আইএইচটির অবস্থান। কোনো জনবল নিয়োগ না হলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগে ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে ১৫৬ শিক্ষার্থী আছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান। গত ৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হন। এরপর প্রশাসনিক দায়িত্বে আর কেউ নেই। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষক সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ক্যাম্পাসে আছে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন, একটি পুরুষ ও একটি নারী আবাসিক হল ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আবাসন। পুরো চত্বরে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলময় পরিস্থিতি। একাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে আছে প্যাকেটবন্দী কিছু জিনিসপত্র। নিচতলার একটি কক্ষকে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার ও একটি টেবিল রয়েছে। এ ছাড়া পুরো ভবনে কক্ষ থাকলেও নেই আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগভিত্তিক কোনো শিক্ষক না থাকায় ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ প্রায় ছয় মাস। ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক কোনো যন্ত্রপাতি ও ক্লাসে পর্যাপ্ত আসবাব, যেমন চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ নেই। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আসবাব, বিছানা, চেয়ার ও টেবিল নেই; নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী। ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ৯ লাখ টাকা বকেয়ার কারণে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। পরে অবশ্য আবার সংযোগ দেওয়া হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষাজীবন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকা শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন।

আজ পাঠ কার্যক্রম বর্জন করে সকাল ১০টা থেকে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের চারটি দাবির মধ্যে আছে, অবিলম্বে অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ও মানসম্মত ক্যাম্পাস করতে হবে এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আজ মানববন্ধনের পর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে স্মারকলিপি ও পরে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুফিদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী ৮ ঘণ্টা আগে

শিক্ষার্থী দেবী দেবনাথ বলেন, ‘সরকারের আছে আমাদের প্রশ্ন, যদি শিক্ষার সুব্যবস্থা না দিতে পারে, তাহলে এত টাকা খরচ করে, এত সুন্দর ভবন কেন করা হলো। ভর্তি হওয়ার সময় অনেক টাকা খরচ করে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। আমরা যদি জানতাম, এখানে এসে ক্ষতি হবে, তাহলে ভর্তি হতাম না। রাষ্ট্র কেন আমাদের এত ক্ষতি করল? আমাদের সঙ্গে একপ্রকার দুর্নীতি করা হচ্ছে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদদীন আহমদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল কাঠামো অনুমোদন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • ঘরে ঢুকে প্রাক্তন স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, পরে আত্মহত্যা
  • নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর সাবেক স্বামীর আত্মহত্যা
  • সাবেক স্ত্রীকে খুনের পর মেয়েকে দলিল বুঝিয়ে দিয়ে আত্মহনন
  • পাকুন্দিয়ায় নৌকা ডুবি, নিহত ১ নিখোঁজ ২
  • ঈশ্বরগঞ্জে কমিটি গঠন
  • ঢাকা ও ময়মনসিংহে চালু হচ্ছে সব ধরনের অনলাইন জিডি
  • ঢাকা-ময়মনসিংহে চালু হচ্ছে অনলাইন জিডি
  • শিক্ষক–জনবল নিয়োগসহ ৪ দাবিতে ময়মনসিংহ আইএইচটি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • ডেঙ্গু: চলতি বছরে মৃত্যু ৪২, একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৩