ফেরদৌস ওয়াহিদ। নন্দিত পপশিল্পী। আজ বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে প্রচার হবে আলাপচারিতার অনুষ্ঠান ‘চেনা মুখ দুঃখ সুখ’। এর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা করেছেন তিনি। নতুন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য প্রসঙ্গে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন এই শিল্পী।

‘চেনা মুখ দুঃখ সুখ’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় আগ্রহী হলেন কেন?
 উপস্থাপনা আগেও করেছি। তবে, অত বড় পরিসরে নয়। কিন্তু এবারই প্রথম বড় আয়োজনে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার সুযোগ হয়েছে। অনুষ্ঠানের ভাবনায় নতুনত্ব রয়েছে। সব মিলিয়ে উপস্থাপনায় রাজি হয়েছি। 

অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব কী? 
অনুষ্ঠানে শুধু সংগীতশিল্পীরা অতিথি হিসেবে হাজির হবেন। ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়। অতিথি তাঁর শিল্পের জীবন নিয়ে কথা বলবেন। চলার পথে দেখা-জানা অভিজ্ঞতা, আনন্দ-বেদনা, সফলতা কিংবা সংগ্রাম সবই উঠে আসবে। এখানে মূল ফোকাস শিল্প ভাবনা আর অভিজ্ঞতা। ফাঁকে ফাঁকে শ্রোতারা শুনতে পাবেন অতিথির গানও। অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ৩৫ মিনিট। এ সময়ের মধ্যে যতটা সুন্দর করা যায়, সে চেষ্টাই থাকবে।  

উপস্থাপকের চেয়ারে বসার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আগেই বলেছি, আয়োজনটি বেশ বড়। বড় পরিসরের কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনার আনন্দই অন্যরকম। এখানে আমার চেনাজানা শিল্পীরাই অতিথি হয়ে এসেছেন। তাদের সঙ্গে গল্প ও আড্ডায় আনন্দময় সময় কেটেছে। ভীষণ উপভোগ করছি। নতুন কাজ, নতুন অভিজ্ঞতা, সত্যিই ভালো লাগছে। প্রযোজক পুনম প্রিয়ম আয়োজনটির জন্য খেটেছেন। আমি আমার মতো করে কাজটি করেছি। কতটা পেরেছি দর্শক তা ভালো বলতে পারবেন।

প্রথম পর্বে পুত্র হাবিব ওয়াহিদকে অতিথি হিসেবে পেয়ে কেমন লেগেছে?
পর্দায় হাবিব ওয়াহিদ একজন কণ্ঠশিল্পী, সংগীত পরিচালক, সুরকার। হাবিবকে সন্তান হিসেবে নয়, সংগীতশিল্পী হিসেবে দেখেছি। আমি আমার মতো করে প্রশ্ন করেছি, হাবিব তার মতো উত্তর দিয়েছে। হাবিবের খুঁটিনাটি তো সবই আমার জানা। যেজন্য তাকে প্রশ্ন করতে সহজ হয়েছে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ছেলের সঙ্গে খুঁনসুটিতে মেতে উঠেছি।   

উপস্থাপনায় কী নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে? 
আমি গানের মানুষ। সারাজীবন গান করেছি। এখনও গানের সঙ্গেই বসবাস। বেশ বিরতির পর অন্যরকম আইডিয়ার একটি অনুষ্ঠান করলাম। ভালো লেগেছে। এমন ব্যতিক্রমী কোনো অনুষ্ঠান উপস্থাপনার প্রস্তাব পেলে অবশ্যই করব। 

একসময় গান ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন তো গানে নিয়মিত.

..
শ্রোতাদের ভালোবাসা উপেক্ষা করা কঠিন। যে কারণে আবার গানে ফিরেছি। এখনকার ব্যস্ততা স্টেজ শো নিয়েই। এ কারণে নতুন গান রেকর্ডিং ও মিউজিক ভিডিওর কাজ কমিয়ে দিয়েছি। স্টেজ শোতে সরাসরি দর্শক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। বেশ উপভোগ করছি। 

নতুন গানের খবর বলুন?
বেশ কয়েকটি গান তৈরি আছে। স্টেজ শোর ব্যস্ততা শেষ হলেই গানগুলো প্রকাশ করার ইচ্ছা রয়েছে। 

সংগীতাঙ্গনের এ সময়কে কীভাবে দেখছেন? 
ভালোই যাচ্ছে। নতুন নতুন গান প্রকাশ হচ্ছে। তরুণ শিল্পী, কম্পোজাররা কাজ করছেন। সিনেমার গানও মানুষ বেশ উপভোগ করছেন। আমরা নানা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই অস্থির সময়ও মানুষ বিনোদন চায়। মাঝেমধ্যে নিজেকে প্রশ্ন করি, এত সমস্যা নিয়ে কেন মানুষ গানের সঙ্গেই আছেন? উত্তরও পেয়ে যাই। আসলে তারা মনের প্রশান্তি পেতে গানের সঙ্গেই থাকতে চান।’ 

সিনেমা নির্মাণের কথা বলেছিলেন?
‘সন্ধ্যা মায়া’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। কাজও অনেকটা গুছিয়ে এনেছি। পরিচালনার পাশাপাশি এতে আমি অভিনয়ও করব। শিগগিরই এর দৃশ্য ধারণ করার ইচ্ছা রয়েছে। এতে নতুন শিল্পীদেরই সিনেমায় বেশি দেখা যাবে।   

ঢাকা ছেড়ে এখন তো গ্রামেই থাকছেন। সময় কাটছে কী করে?
বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে অবস্থান করছি। এখানে মানুষের সঙ্গে হাসি আনন্দে সময়টা পার হয়ে যাচ্ছে। জলে-ডাঙায় মিলে জীবনযাপন করছি। মানে মাঝেমধ্যে নৌকায়ও থাকছি। নিজ গ্রামে কিছুদিন আগে পুত্রের সঙ্গে একটি গানের আয়োজনে অংশ নিয়েছি। গ্রামীণ পরিবেশে মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পেরে ফুরফুরে মেজাজেই থাকি। প্রকৃতির মায়ায় মাঝেমধ্যে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

মবকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে একে উসকে দেওয়া হয়েছে

আমাদের সমাজে মব সহিংসতা (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) কেন ঘটছে? অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমাদের ইতিহাসে আগেও মব সহিংসতার ঘটনাগুলো ছিল। তবে এখন এটা চরম আকার ধারণ করেছে। নানা আকারে হচ্ছে। কারণগুলো বিস্তৃত। সাধারণভাবে আপনি-আমিও কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত দেখলে সোচ্চার হতে পারি। ওই ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে আমরা তুলে দিতে পারি। অপরাধ প্রমাণিত হলে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করবে, পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাধারণ জনগণ হিসেবে পুলিশে সোপর্দ করার দায়িত্ব পালন করা যেতে পারে। তার মানে এই নয় যে যাকে অপরাধী মনে করা হচ্ছে, তাকে গণপিটুনি দেওয়া যাবে, হেনস্তা করা যাবে, নির্যাতন করা যাবে। অথচ এই জিনিসটাই করতে দেখা যাচ্ছে। আপনি একটা মানুষকে গণপিটুনি দিতে পারেন না। আর এটা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনি অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে অপরাধী বা আসামিও বলা যাবে না। আমাদের সংবিধান, ফৌজদারি আইন, দণ্ডবিধি—কোনো আইনে আপনাকে মব সৃষ্টি করে কারও বিচার করার অধিকার দেওয়া নেই। মবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বরং সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যতগুলো মব সৃষ্টি করা হয়েছে, ততবার বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটা কোনো নাগরিকের কাম্য নয়। এটা একধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির সামনে বসে মব তৈরি করতে দেখা গেছে। বাসার ভেতরে গিয়ে মব তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন অফিসে হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে দেখেছি। সবার আগে স্কুল-কলেজে শুরু হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বা প্রভাবশালী কাউকে হেনস্তা করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

তখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, এটা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা মনে করেছেন, এটা মব না, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এভাবে মবের ঘটনাকে অস্বীকার করে মবকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। মবের মাধ্যমে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে। মানুষ ভাবছে, বিচারব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আমি ছেড়ে দিলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ওই ব্যক্তি (যাকে অপরাধী ভাবা হচ্ছে) বের হয়ে যাবে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, শাস্তি হবে না। যেটা করার আমাদেরই করতে হবে। আমাদেরই বিচার করতে হবে। মানুষ মনে করছে, বৈষম্য হচ্ছে। মানসিক হতাশা থেকে মানুষ রাস্তায় নামছে। মবের ঘটনার মধ্য দিয়ে তার অবস্থান ও মানসিক হতাশা প্রকাশ করতে চায়। মবের কোনো ঘটনার বিচার হতে দেখা যাচ্ছে না। কোনোটার বিচার দৃশ্যমান না। সে জন্য আরও বেশি ঘটনা ঘটছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ভঙ্গুর দশায়।

মব সহিংসতার কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেকগুলো রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পিত। সেগুলোকে স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাসায় ঢুকে ডাকাতি করা হয়েছে। দোকান লুটপাট করা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাও ছিল নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে। পুলিশ নিজেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। দু–একটা ঘটনায় পুলিশ নিজেও মবের শিকার হয়েছে। একটি প্রতিবেদনে দেখেছিলাম, ৪৭৭ জন পুলিশ মবের শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক দলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার মব সহিংসতার বিরুদ্ধে। অনেক সময় কোনো অপরাধের অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কেউ যখন দেখেন অপরাধ করলেও তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে, তখন ওই ব্যক্তি অপরাধ করতে আর ভয় পান না। শাস্তির ভয় থাকে না বলে অপরাধ করতে থাকেন।

আরও পড়ুন‘পানিও দিতে দেয় নাই’, মব তৈরি করে হত্যায় আসামি গ্রেপ্তার মাত্র ১.২৭%১১ ঘণ্টা আগে

মব সহিংসতা বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। মব সহিংসতার ঘটনাগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মবের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে সরকার নির্দেশনা দিলে এবং সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিলে মব সহিংসতা কমবে।

রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের কর্মকাণ্ড মানুষ দেখছে। সামনে নির্বাচন। সব দলকে সাধারণ মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। কে কী ধরনের আচরণ করছেন, তা দেখা হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের মব সহিংসতার মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত নয়। কোনো বড় রাজনৈতিক দল যদি ঘোষণা দেয় যে আজ থেকে তারা মবের সঙ্গে থাকবে না। তাহলে তৃণমূলের একজন কর্মী তাঁর পদ হারানোর ভয়ে ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মব সহিংসতায় জড়ানোর আগে দুবার চিন্তা করবেন।

আরও পড়ুনগাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা০২ নভেম্বর ২০২৫

বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটি দূর করতে হবে। থিওরি (তত্ত্ব) বলে, মানুষ যখন দেখে সে কোনোভাবে সমাজে তার ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে না। পাশাপাশি দেখে যে একজন অপরাধী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো সাজার সম্মুখীন হচ্ছে না। তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিচারে গলদ থেকে গেলে মব সহিংসতা ঠেকানো যাবে না।

গণমাধ্যম মব সহিংসতার বিরুদ্ধে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম মব সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব সহজভাবে বিশ্লেষণ করে মানুষকে বোঝাতে পারে। বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনতে হবে। সহজভাবে বোঝালে মানুষ তা গ্রহণ করবে।

আরও পড়ুনরূপলাল-প্রদীপকে হত্যায় অংশ নেয় যারা, কী বলছে পরিবার১৯ আগস্ট ২০২৫

আমি নারী হিসেবে বলব, ধর্ষক আমার কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধী। তারপরও বলব, ভুক্তভোগীর মতো ধর্ষকেরও আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। জনগণকে মব সহিংসতাবিরোধী অবস্থানে আসতে হবে। যেকোনো কিছু হলে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যেন মব সহিংসতা করা না হয়। সব বিষয়ে জেনে–বুঝে সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে মব সহিংসতা ঘটবে না।

শাহারিয়া আফরিন,
সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুনপুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তাহীনতায় লাল চাঁদের পরিবার, বাড়িতে মাতম১২ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ