Samakal:
2025-09-17@21:26:21 GMT

নাগরিক দুর্ভোগ কাটিবে না?

Published: 15th, May 2025 GMT

নাগরিক দুর্ভোগ কাটিবে না?

রাজধানীতে বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার কারণে সাধারণ নাগরিকের ভোগান্তি ছিল চরমে। দুর্ভোগে পড়িয়াছিলেন রোগীসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সড়কে চলাচলকারী মানুষ। বুধবার সকাল হইতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকা হইতে ‘লংমার্চ’ করিয়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হইবার পরই সড়কে যেই অচলাবস্থার সূচনা হইয়াছিল, অন্যদের আন্দোলনের কারণে সমস্ত দিবস ধরিয়াই উহা বলবৎ ছিল। বিশেষত পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সম্মুখে মানববন্ধন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর মৃত্যুতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ; নার্সিং শিক্ষার্থীদের শাহবাগে সড়ক অবরোধ এবং আগারগাঁওয়ে বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীদের আন্দোলনের কারণে রাজধানী কার্যত স্থবির হইয়া পড়ে। অধিকন্তু বুধবার মধ্যাহ্নে হঠাৎ বজ্রসহ প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। নগরবাসীকে পড়িতে হয় সীমাহীন যন্ত্রণায়। নারী-শিশুদের ভোগান্তিও ছিল চরমে। ইহার মধ্যে মেট্রোরেল দুই দণ্ড শান্তি দিলেও অতিরিক্ত জনচাপে অনেকে উক্ত দ্রুতযানে আরোহণেরই সুযোগ পান নাই।

বস্তুত গত বৎসরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতেই বিবিধ দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি আন্দোলন করিয়া আসিতেছে। এমনকি অনেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও সচিবালয় ঘিরিয়াও দাবি জানাইতেছিল। অবশেষে সরকার বাধ্য হইয়াই যমুনা ও সচিবালয় সন্নিহিত স্থলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আমরা বিস্মিত, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পার্শ্বস্থলে সম্প্রতি এক আন্দোলন সংঘটিত হইলেও সরকার উহাদের বাধা দেয় নাই। অথচ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসহ অন্যান্য দাবিতে যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ করিতে দেওয়া হয় নাই। তাহাদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হইয়াছে। প্রশ্ন হইল, সরকারের এই দ্বিমুখী নীতির ব্যাখ্যা কী? আমরা মনে করি, আইন সকলের জন্যই সমান এবং জননিরাপত্তা ও সংবেদনশীলতার কারণে সরকারি নীতি সকলের জন্য সমভাবে প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

গত মাসে আমরা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর সড়ক অবরোধ করিয়া আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগ লইয়া এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। মানুষকে জিম্মি করিয়া আন্দোলন প্রত্যাশিত হইতে পারে না। ইতোপূর্বে ইহাও ব্যক্ত করা হইয়াছে, সড়কে অবস্থান করিয়া জনভোগান্তি উৎপাদনের পরিবর্তে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাবি পেশ করা শ্রেয়। কর্তৃপক্ষেরও উচিত যথাযথ প্রক্রিয়ায় ন্যায্য দাবিতে সাড়া দেওয়া। উহার ব্যত্যয়ে পরিণতি কী রূপ, রাজধানীর জনভোগান্তিই উহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 
স্বভাবতই যানজটের কারণে রাজধানীতে নিত্যভোগান্তি অবধারিত। তদুপরি নগরব্যাপী বিভিন্ন সংস্থার সড়ক কর্তন-খোদন, ভাঙা সড়ক ও বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগের সীমা নাই। কয়েক দিবস ধরিয়া প্রচণ্ড গরমেও অতিষ্ঠ নগরবাসী। এত অস্বস্তির মধ্যে নগরবাসী প্রায়শ যে সড়ক অবরোধের মুখে পড়েন, উহার বেদনা অনুধাবন করা কঠিন নহে। বিভিন্ন দাবিদাওয়া লইয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার এই নরকযন্ত্রণার অবসান জরুরি। 

অনুধাবন করিতে হইবে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করিতেছে। যথায় সকল দাবি পূরণ করা উহাদের পক্ষে সম্ভব নহে। তাহার পরও অস্বীকার করা যাইবে না, এই সরকার উল্লেখযোগ্য দাবি মানিয়াছে। কিন্তু তাহারা এইরূপ আন্দোলনের কারণে যদি প্রধান কার্যে মনোনিবেশ করিতে না পারে, সামষ্টিকভাবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইব। বিষয়টি আন্দোলনকারীদের মগজে লইতে হইবে। তবে সরকারকেও তাহার সামর্থ্যের মধ্যে যথাসম্ভব যেই কোনো দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখিতে হইবে। সড়কে অবরোধ অপেক্ষা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অধিকতর কার্যকর বলিয়া আমাদের প্রত্যয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক

এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?

এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?

অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?

তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।

তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।

এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।

এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক