Samakal:
2025-11-02@22:59:48 GMT

নাগরিক দুর্ভোগ কাটিবে না?

Published: 15th, May 2025 GMT

নাগরিক দুর্ভোগ কাটিবে না?

রাজধানীতে বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার কারণে সাধারণ নাগরিকের ভোগান্তি ছিল চরমে। দুর্ভোগে পড়িয়াছিলেন রোগীসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সড়কে চলাচলকারী মানুষ। বুধবার সকাল হইতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকা হইতে ‘লংমার্চ’ করিয়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হইবার পরই সড়কে যেই অচলাবস্থার সূচনা হইয়াছিল, অন্যদের আন্দোলনের কারণে সমস্ত দিবস ধরিয়াই উহা বলবৎ ছিল। বিশেষত পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সম্মুখে মানববন্ধন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর মৃত্যুতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ; নার্সিং শিক্ষার্থীদের শাহবাগে সড়ক অবরোধ এবং আগারগাঁওয়ে বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীদের আন্দোলনের কারণে রাজধানী কার্যত স্থবির হইয়া পড়ে। অধিকন্তু বুধবার মধ্যাহ্নে হঠাৎ বজ্রসহ প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। নগরবাসীকে পড়িতে হয় সীমাহীন যন্ত্রণায়। নারী-শিশুদের ভোগান্তিও ছিল চরমে। ইহার মধ্যে মেট্রোরেল দুই দণ্ড শান্তি দিলেও অতিরিক্ত জনচাপে অনেকে উক্ত দ্রুতযানে আরোহণেরই সুযোগ পান নাই।

বস্তুত গত বৎসরের আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতেই বিবিধ দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি আন্দোলন করিয়া আসিতেছে। এমনকি অনেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও সচিবালয় ঘিরিয়াও দাবি জানাইতেছিল। অবশেষে সরকার বাধ্য হইয়াই যমুনা ও সচিবালয় সন্নিহিত স্থলে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আমরা বিস্মিত, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পার্শ্বস্থলে সম্প্রতি এক আন্দোলন সংঘটিত হইলেও সরকার উহাদের বাধা দেয় নাই। অথচ বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসহ অন্যান্য দাবিতে যমুনা অভিমুখে ‘লংমার্চ’ করিতে দেওয়া হয় নাই। তাহাদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হইয়াছে। প্রশ্ন হইল, সরকারের এই দ্বিমুখী নীতির ব্যাখ্যা কী? আমরা মনে করি, আইন সকলের জন্যই সমান এবং জননিরাপত্তা ও সংবেদনশীলতার কারণে সরকারি নীতি সকলের জন্য সমভাবে প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। 

গত মাসে আমরা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর সড়ক অবরোধ করিয়া আন্দোলনের কারণে জনদুর্ভোগ লইয়া এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছিলাম। মানুষকে জিম্মি করিয়া আন্দোলন প্রত্যাশিত হইতে পারে না। ইতোপূর্বে ইহাও ব্যক্ত করা হইয়াছে, সড়কে অবস্থান করিয়া জনভোগান্তি উৎপাদনের পরিবর্তে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাবি পেশ করা শ্রেয়। কর্তৃপক্ষেরও উচিত যথাযথ প্রক্রিয়ায় ন্যায্য দাবিতে সাড়া দেওয়া। উহার ব্যত্যয়ে পরিণতি কী রূপ, রাজধানীর জনভোগান্তিই উহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 
স্বভাবতই যানজটের কারণে রাজধানীতে নিত্যভোগান্তি অবধারিত। তদুপরি নগরব্যাপী বিভিন্ন সংস্থার সড়ক কর্তন-খোদন, ভাঙা সড়ক ও বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগের সীমা নাই। কয়েক দিবস ধরিয়া প্রচণ্ড গরমেও অতিষ্ঠ নগরবাসী। এত অস্বস্তির মধ্যে নগরবাসী প্রায়শ যে সড়ক অবরোধের মুখে পড়েন, উহার বেদনা অনুধাবন করা কঠিন নহে। বিভিন্ন দাবিদাওয়া লইয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার এই নরকযন্ত্রণার অবসান জরুরি। 

অনুধাবন করিতে হইবে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করিতেছে। যথায় সকল দাবি পূরণ করা উহাদের পক্ষে সম্ভব নহে। তাহার পরও অস্বীকার করা যাইবে না, এই সরকার উল্লেখযোগ্য দাবি মানিয়াছে। কিন্তু তাহারা এইরূপ আন্দোলনের কারণে যদি প্রধান কার্যে মনোনিবেশ করিতে না পারে, সামষ্টিকভাবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইব। বিষয়টি আন্দোলনকারীদের মগজে লইতে হইবে। তবে সরকারকেও তাহার সামর্থ্যের মধ্যে যথাসম্ভব যেই কোনো দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হইয়া আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখিতে হইবে। সড়কে অবরোধ অপেক্ষা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান অধিকতর কার্যকর বলিয়া আমাদের প্রত্যয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।

পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।

বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।

বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।

এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।

পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’

শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’

পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা