ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা মেরে ৬ মাস নিষিদ্ধ হামজার ‘সিলেটি ভাই’
Published: 16th, May 2025 GMT
গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল হামজা চৌধুরীর। সেই ম্যাচ খেলতে এসে জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা এই তারকার। তাদের একজন সাদ উদ্দিন। হামজা আর সাদ দুজনেরই বাড়ি সিলেটে। হামজার সেই ‘সিলেটি ভাই’ এবার নিষেধাজ্ঞার কবলে আটকা পড়েছেন।
এমন একটা শাস্তির আভাস কদিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল মধ্যরাতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ছয় মাস বাফুফে আয়োজিত কোনো ফুটবল ম্যাচে খেলতে পারবেন না সাদ উদ্দিন। ম্যাচ কমিশনার সুজিত ব্যানার্জিকে ধাক্কা মারায় এমন শাস্তিই পেয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের এই ডিফেন্ডার।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২ মে কিংস অ্যারেনায় বসুন্ধরা-আবাহনীর ম্যাচে ডিফেন্ডার সাদ ম্যাচ অফিশিয়ালকে ধাক্কা দেওয়ায় আগামী ৬ মাস বাফুফে কর্তৃক আয়োজিত কোনো ধরনের ফুটবলে অংশ নিতে পারবেন না সাদ। সিদ্ধান্তটি হয়েছে ১৪ মে বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটির সভায়। সেদিন থেকে আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাফুফের নিষেধাজ্ঞায় থাকবেন কিংসের সাদ। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও দিতে হবে।
আরও পড়ুনকোথায় হারালেন সেই সাদ উদ্দিন১৫ মার্চ ২০২২অবশ্য ১০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলতে বাধা নেই সাদের। বাংলাদেশ দলে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার বেশ পছন্দের ডিফেন্ডার সাদ। জাতীয় দলের বেশির ভাগ ম্যাচে অনেকটাই ‘অটো চয়েস’। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর বিপক্ষে মেজাজ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের বিপদই ঢেকে আনলেন তিনি। একই ম্যাচে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করায় কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেনকে (রক্সি) চার ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গত বুধবার বাফুফের পাঁচ সদস্যের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হয়েছে আরও কিছু সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে বসুন্ধরার মাঠ কিংস অ্যারেনায় সমর্থক ও সাধারণ দর্শকদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কার্যকলাপ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একাধিকবার কিংস অ্যারেনায় দর্শকদের দ্বারা শৃঙ্খলাবহির্ভূত ঘটনা ঘটায় পরবর্তী ছয়টি হোম ম্যাচ দর্শকশূন্য রাখার স্থগিত শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ মাসে দর্শকেরা শৃঙ্খলাবহির্ভূত কোনো কাজ করলে সেই শাস্তি কার্যকর হবে।
আরও পড়ুনহামজা চৌধুরী কি আবার প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারবেন১০ মে ২০২৫সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের (বিসিএল) তিনটি ম্যাচে রেফারি মারধরসহ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোও গত বুধবারের সভায় পর্যালোচনা করে বাফুফের শৃঙ্খলা কমিটি। এরপর বিভিন্ন মেয়াদ ও ধারা অনুযায়ী দেওয়া হয় শাস্তি, যার মধ্যে ১১ মে ফর্টিস এফসির মাঠে সিটি ক্লাব ও বাফুফে এলিট একাডেমির ম্যাচ শেষে রেফারি জিম এম চৌধুরী নয়ন মারধরের ঘটনায় সিটি ক্লাবকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আবারও ভারতের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে চান সাদ উদ্দিন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।