আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এটি আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে ভারতের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের যোগাযোগ। 

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর কয়েক দিন পরই মুত্তাকির সঙ্গে জয়শঙ্করের ফোনালাপ হলো। যদিও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি নয়াদিল্লি।

ফোনালাপের কিছুক্ষণ পরই এক্সে একটি পোস্টে জয়শঙ্কর লেখেন, আজ সন্ধ্যায় আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তিনি যেভাবে নিন্দা করেছেন, তার জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এনডিটিভি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন পরর ষ ট রমন ত র আফগ ন স ত ন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলি স্নাইপারদের গুলিতে রক্তাক্ত দুই ভাই, পড়েছিল পিৎজার বাক্স

দখল করা পূর্ব জেরুজালেমের আত-তুর এলাকায় গত ১৬ জুন ইসরায়েলি স্নাইপারদের হামলায় ২১ বছরের উদাই আবু জুমা আর ১২ বছরের ইয়াস আবু মুফরেহ মারাত্মকভাবে আহত হয়। প্রাণঘাতী ‘ডামডাম’ গুলি ছোড়া হয়েছিল তাদের দিকে। পরের দিনই জায়গাটা পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। থেকে গিয়েছিল রক্তাক্ত পিৎজার একটি বাক্স আর গুলির ছিদ্র।

ঘটনার রাতে দুই চাচাতো ভাই উদাই ও ইয়াস আত-তুরে তাদের দাদার বাড়ির সামনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জড়ো হয়েছিল। উদাই ও ইয়াসের দাদির হজ থেকে ফেরা উপলক্ষে আবু জুমা’ পরিবারের সবাই একত্র হয়েছিল। তা ছাড়া পরিবারের এক মেয়ে ফিলিস্তিনের জাতীয় ‘তাওজিহি’ পরীক্ষায় ভালো ফল করার কারণে সবাই আনন্দিত ছিল।

গত ১৩ জুন ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাত শুরু হলে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দখল করা আত-তুর এলাকার দুটি প্রধান প্রবেশমুখে ব্যারিকেড বসায়। তবে পরিবারের সদস্যদের মতে, ঘটনার রাতে এলাকা ছিল একেবারে শান্ত। একটি গাড়ির পাশে বসে পিৎজা খাচ্ছিল ইয়াস ও উদাই। হঠাৎ করে তাদের ওপর ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর গুলি চালানো হয়। ১০টি গুলির মধ্যে দুটি লাগে ইয়াস ও উদাইয়ের গায়ে। পিৎজার ওপর ছড়িয়ে পড়ে রক্ত।

ইয়াসের মা নাসরিন আবু মুফরেহ বলেন, ‘সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। আমরা বুঝতেই পারিনি কী হচ্ছে। আমাদের রাস্তায় তো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য কোনো হুমকিও ছিল না।’

পরে আশপাশের বাড়ির নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, দূরের একটি ছাদে অবস্থান নেওয়া দুই ইসরায়েলি স্নাইপার সদস্য পরিবারটির ওপর গুলি চালিয়েছেন। গুলি চালানোর আগে তারা কোনো হুঁশিয়ারি সংকেতও দেননি।

ইয়াস ও উদাইকে নিয়ে পরিবারটি দ্রুত হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। ইসরায়েলি পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে ইয়াসের বাবা রায়েদকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশের অভিযোগ, পারিবারিক সেই জমায়েতের সময় ইয়াস ও উদাই মলোটভ ককটেল ছুড়েছে এবং আতশবাজি ফুটিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি চালিয়েছে।

ইয়াস ও উদাইকে প্রথমে আত-তুরের আল মাকাসেদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের পশ্চিম জেরুজালেমের আইন কেরেম এলাকার হাদাসা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

আত-তুরের হাসপাতালে গিয়েও পরিবারটিকে বাধা দেয় পুলিশ। ইয়াসের মা নাসরিন আতঙ্কিত হয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা একটা শিশুকে এভাবে গুলি করলেন কীভাবে?’

পুলিশ তখন বলেছিল তারা জানে না কার গুলিতে ওই দুজন আহত হয়েছে। তারা এই ঘটনাকে ‘পারিবারিক কলহ’ বলে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ইয়াস এখনো বেঁচে আছে—এটাই সৌভাগ্য। গুলি তার হৃৎপিণ্ডের মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার পাশ দিয়ে গেছে। গুলির আঘাতে তাঁর বাঁ কাঁধে বিশাল ক্ষত তৈরি হয়েছে। এতে তার স্নায়ু ও রক্তনালি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর উদাইয়ের গুলি লেগেছে পেটে। পরে সেটি পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে তাঁর স্নায়ু, রক্তনালি আর মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরিবারের আশঙ্কা, ইয়াসের হাত হয়তো চিরদিনের মতো অচল হয়ে যাবে। আর উদাই হয়তো আর কখনো হাঁটতে পারবেন না।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরিবারকে জানান, ওদের শরীরে যে গুলি লেগেছে তা ছিল ‘ডামডাম’ গুলি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, এই ধরনের গুলি এতটাই প্রাণঘাতী যে যুদ্ধেও ব্যবহার করা নিষেধ। পূর্ব জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধক্ষেত্র বলা না হলেও, জায়গাটি এখনো অবৈধভাবে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে।

আত-তুরে আবু জুমা’ পরিবারের বাড়ির পাশের গলিতে গুলি চলেছিল। সেখানে এখন শুধু একটা পিৎজার বাক্সই পড়ে আছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ