টেকনাফের পাহাড়ে অর্ধলাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে
Published: 5th, July 2025 GMT
তিন-চার দিন ধরে টানা বর্ষণ চলছে কক্সবাজারের টেকনাফে। এতে দেখা দিয়েছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। প্রাণহানি এড়াতে গতকাল শনিবার পাহাড়ি বসতি থেকে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং শুরু করেছে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ছাড়াও ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে হ্নীলা, সদর ইউনিয়ন ও শাহপরীর দ্বীপের হাজারখানেক ঘরবাড়ি।
টেকনাফ পুরান পল্লানপাড়ার বাসিন্দা আমির হোসেনের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১২ জন। ভারী বর্ষণে শনিবার সকাল থেকেই তারা পানিবন্দি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। আমির বলেন, ‘বেশি ঝড়ের লাল্যাই গরত ঘুম যায় ন পারির। বিইন্না লটি কিছু হাইতো ন পারি। কিও হবর লইত নো আইয়ে। আঁর ঘরস একশ বাড়ি পানির নিছে ডুবি গিয়েও। বেশি হষ্ট অই পুয়াইন লই।’ প্রতিবছর বর্ষা হলেই তাদের এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় বলেও জানান আমির।
টেকনাফ দক্ষিণ বন বিভাগ ও উপজেলার প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি পাহাড় ও ১১টি টিলায় বসতি আছে। বন বিভাগের ৩৯ হাজার হেক্টর বনভূমিতে সব মিলিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের মধ্যে আছেন মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকরাও (রোহিঙ্গা)। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে টেকনাফ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন ফকিরা মোরা, ধুমপেরাং ঘোনা, গিলাতলি, বৈদ্যরঘোনা, নাজিরঘোনা, শিয়াইল্যার ঘোনা, উরমের ছড়া, নতুন পল্লানপাড়া, পুরান পল্লানপাড়া, বরবইতলী, নাইট্যংপাড়া, ব্যাটালিয়ন-সংলগ্ন মাঠপাড়া, জাহালিয়াপাড়া, রোজার ঘোনা, রঙ্গিখালী, আকবরপাড়া, সিকদারপাড়া, মরিচ্যাগুনা, উলুচামারী, লেচুয়া প্রাং, পানখালী, উত্তর সিকদারপাড়া, হলবনিয়া, আছারবনিয়া, মিনাবাজার ও শামলাপুর। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন মানুষ।
নাইট্যংপাড়ার বাসিন্দা দিল আহমেদ বলেন, এখান থেকে নেমে কোথায় যাবেন, তা জানেন না। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে পাহাড় ধসে পড়তে পারে। তাই পরিবারের সবাই খুব ভয়ে আছেন।
এদিকে, বৃষ্টির পানি জমে শাহপরীর দ্বীপের মাঝারপাড়া, হাজিরপাড়া ও দক্ষিণপাড়ার দেড় শতাধিক বাড়িঘর ডুবে গেছে। সদর ও হ্নীলা ইউনিয়নের হাজারো বাড়িঘরে উঠেছে পানি। শাহপরীর দ্বীপের মাঝারপাড়ার বাসিন্দা আয়েশা খাতুন বলেন, টানা বৃষ্টিতে তারা রাত থেকে ঘুমাতে পারেননি। পানিবন্দি হয়ে ঘরে আটকা পড়েছেন। রাত থেকে রান্না করারও সুযোগ হয়নি। ফলে সন্তান ও নিজেদের খাবার নিয়ে খুব কষ্টে আছেন।
মহেশখালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মো.
পুরান পল্লানপাড়ায় শনিবার পাওয়া যায় সিপিপির টিম লিডার কুলসুমা আক্তারকে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় দেড় শতাধিক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছেন। আমরা তাদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে বারবার বলছি।’
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, তাঁর ইউনিয়নের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টি কমলে পানিও কমে। যাদের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। তারা পানিবন্দি মানুষের খোঁজ রাখছেন।
টেকনাফ বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ আহমেদ বলেন, টানা বর্ষণের ফলে তারা পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন। এ কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাসকারী লোকজনকে নিরাপদ জায়গায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং চলছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যদের সঙ্গে আমরা
ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছি। কারণ টানা বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ভয় আছে। ইতোমধ্য কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।’ তারা পানিবন্দি লোকজনের খোঁজখবরও রাখছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ক প র ণ ভবন প হ ড় ধস প ন বন দ উপজ ল বসব স ঘরব ড়
এছাড়াও পড়ুন:
চিত্র, শব্দ ও সংলাপ একসঙ্গে তৈরি করছে বাইদুর এআই মডেল মিউজস্টিমার
লিখিত প্রম্পট থেকে বাস্তবধর্মী ভিডিও তৈরিতে গুগল ও ওপেনএআইয়ের সঙ্গে দৌড়ে শামিল হয়েছে চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোও। এরই মধ্যে চীনা সার্চ ইঞ্জিন বাইদু চালু করেছে তাদের প্রথম এআই ভিডিও তৈরির মডেল ‘মিউজস্টিমার’।
চিত্র, সাউন্ড ইফেক্ট ও চীনা ভাষায় সংলাপ তিনটি উপাদান একসঙ্গে তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে মিউজস্টিমার মডেলের। সব উপাদান একে অপরের সঙ্গে সিঙ্ক করে তৈরি হওয়ায় ভিডিওর গুণগত মান হয় উচ্চমাত্রার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞাপন, বিপণন বা কনটেন্ট নির্মাণের মতো খাতে এ প্রযুক্তি সময় ও খরচ বাঁচিয়ে দিতে পারে। মূলত ব্যবসায়িক ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি এই এআই মডেল স্থিরচিত্র থেকে স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এ ছাড়া বাইদু তাদের সার্চ প্রযুক্তিতেও এনেছে পরিবর্তন। নতুন সংস্করণে সার্চ হয়েছে আরও স্মার্ট, মাল্টিমোডাল ও ব্যবহারকারীভেদে পারসোনালাইজড।
মিউজস্টিমার একটি ‘ভিশন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ বা ভিএলএম। এ ধরনের মডেল কম্পিউটার ভিশন ও প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা একসঙ্গে কাজে লাগায়। ফলে ছবি ও লেখার সমন্বিত বিশ্লেষণ করে এমন কাজগুলোতে এই মডেল ব্যবহার করা যায়, যেগুলোতে মাল্টিমোডাল বোঝাপড়ার প্রয়োজন পড়ে। ১০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ফুল এইচডি (১০৮০পি) ভিডিও তৈরি করতে পারে মিউজস্টিমার, যেখানে দৃশ্য, সংলাপ ও শব্দ একসঙ্গে এবং সঠিকভাবে সমন্বিত থাকে। প্রাথমিকভাবে যাঁরা এই মডেল ব্যবহার করেছেন, তাঁরা বলছেন, আউটপুট দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মিউজস্টিমার দিয়ে তৈরি কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে মডেলটির চিত্রনির্মাণ ও সাউন্ড ডিজাইনের সক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাইদু তিনটি স্তরে মিউজস্টিমার চালু করেছে। এগুলো হলো টার্বো, প্রো ও লাইট। প্রতিটি স্তরই মূলত এন্টারপ্রাইজ বা করপোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি। গুগলের ভিও থ্রি কিংবা ওপেনএআইয়ের সোরা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি হলেও বাইদুর মিউজস্টিমার সেখানে পরিপূর্ণভাবে ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিউজস্টিমারের মাধ্যমে চীনের জেনারেটিভ এআই খাতে প্রতিযোগিতা আরও জোরালো হলো। এরই মধ্যে বাইটড্যান্স, টেনসেন্ট ও আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান এই খাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এদিকে গত মে মাসে গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন ‘গুগল আই/ও’তে ‘ভিও থ্রি’ মডেল উন্মোচন করা হয়, যা এর হাইপাররিয়ালিস্টিক ভিডিও তৈরির দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস