বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমোদন ছাড়া রেললাইন–সংলগ্ন স্থান বা রেলওয়ের মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে পশুর হাট না বসানোর নির্দেশ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট আটটি জেলার প্রশাসকদের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি আধা সরকারি পত্র দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ই–মেইলে জেলা প্রশাসকদের এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

ফাহিমুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, রেললাইনের পাশে থাকা জায়গা বা অন্য সরকারি জমিতে যদি ইজারা দিয়ে হাট বসানো হয়, সে ক্ষেত্রে লাইনের কাছাকাছি যাতে পশু বা মানুষ ঘেঁষতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে রেললাইনের চৌহদ্দি এড়াতে বাঁশ বা অন্য কিছু দিয়ে বেড়া দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রেল কর্তৃপক্ষকে হাটের বিষয়ে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।

আসন্ন ঈদুল আজহায় মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে গত সোমবার আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রেললাইন ঘেঁষে ১১টি পশুর হাট বসে যা ঈদযাত্রায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ওই বৈঠকের পরই রেললাইন ও মহাসড়কের পাশে পশুর হাট কীভাবে এবং কতটুকু জায়গার মধ্যে বসানো যাবে এবং ব্যবস্থাপনা কী হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর অংশ হিসেবে রেল কর্তৃপক্ষ আট জেলার প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষ মৌলভীবাজার, বগুড়া, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহীত পদক্ষেপসমূহ রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে রেল কর্তৃপক্ষ চারটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে রেলের অনুমোদন ছাড়া রেললাইন–সংলগ্ন এলাকায় হাট স্থাপন করা যাবে না; হাট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ইজারাদারকে অবশ্যই রেললাইনের দিক ঘেঁষে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য বজায় রেখে বাঁশ বা উপযুক্ত উপকরণ দিয়ে শক্ত বেষ্টনী (ফেন্সিং) নির্মাণ করতে হবে; বেষ্টনী এমনভাবে স্থাপন করতে হবে, যাতে ট্রেন চলাচলে কোনো বিঘ্ন না ঘটে এবং হাটে আসা সাধারণ মানুষের চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়; জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্থানীয় পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সমন্বয়ের মাধ্যমে ট্রেন চলাচল ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

চিঠিতে বলা হয়, রেলওয়ের মালিকানাধীন জমি এবং রেললাইন–সংলগ্ন এলাকায় অনেক সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অস্থায়ীভাবে পশুর হাট বসানো হয়। এতে সাধারণ জনগণ এবং রেল চলাচলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। রেললাইনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার কারণে ঈদযাত্রার রেলের সূচি বিপর্যস্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকার সরকারি সম্পদের রক্ষা এবং সর্বসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ জন্য রেললাইন–সংলগ্ন বা রেলওয়ের মালিকানাধীন জায়গায় অবৈধভাবে পশুর হাট বসানো থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সরকার দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। তবে যদি স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনায় রেললাইন–সংলগ্ন এলাকায় পশুর হাট স্থাপন অত্যাবশ্যক হয়, তাহলে শর্ত মেনে বসাতে হবে।

আরও পড়ুনসড়কে কোরবানির পশুর হাট বসানো যাবে না: সড়ক উপদেষ্টা১২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ল ইন র র লওয সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের বিপক্ষে দুই ম্যাচে কেমন খেলল আনচেলত্তির ব্রাজিল

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন ‘ফর্ম’ বা ‘আইডিয়াজ’-এর কথা। তাঁর মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি চিরস্থায়ী, নিখুঁত ও আদর্শ রূপ আছে। আমরা পৃথিবীতে যা দেখি, তা আসলে সেই নিখুঁত রূপেরই অনুকরণ। যেমন কালো রঙের একটা নিখুঁত ধারণা আমাদের মনের ভেতরে আছে বলেই আমরা চারপাশে কালো রঙের নানা রূপ দেখি। বাস্তবে আমরা যে কালো দেখি, সেটা আসলে সেই নিখুঁত কালোরই প্রতিলিপি।

ফুটবলকে যদি প্লেটোর এই ধারণার আলোকে দেখি, তবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের সৃষ্টি ‘জোগো বনিতো’কে নিখুঁত ফুটবল বলা যায়। আমরা যে ফুটবলের নান্দনিকতা, কৌশল আর সৌন্দর্য দেখি, তা মূলত সেই নিখুঁত ফুটবলেরই প্রতিফলন। আমাদের চোখ সব সময় সেই আদর্শ ফুটবল খুঁজে বেড়ায়। কোথাও তার আভাস পেলেই আমরা উল্লসিত হয়ে উঠি। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই প্রত্যাশা থাকে ব্রাজিলের কাছেই, যারা নিজেরাও অনেক আগেই সেই খেলা পেছনে ফেলে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ ঘিরে আবারও সামনে এসেছে ‘জোগো বনিতো’র আলাপ। সেদিন ৯০ মিনিট ধরে অসাধারণ ফুটবল খেলেছিল ব্রাজিল। এরপরই কিছু সংবাদমাধ্যম ও সমর্থক প্রশ্ন তোলে—ব্রাজিলের ‘জোগো বনিতো’ কি আবার ফিরে এল? তবে প্লেটোর ফর্মের যুক্তি মেনে নিলে, সেই নিখুঁত রূপ আসলে কোথাও নেই।

আরও পড়ুনদক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে যা বললেন ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি১০ অক্টোবর ২০২৫

বরং মনে হয়, ব্রাজিলও হয়তো ভুলে গেছে সেই রূপটা কেমন ছিল। কিন্তু হারানো ঐতিহ্যের প্রতি টানই মাঝেমধ্যে আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই খেলার কথা। ‘জোগো বনিতো’র আলোচনাটা সরিয়ে রাখলেও, সেদিন ৫–০ গোলে জেতার পথে ব্রাজিলের ফুটবল সত্যিই ছিল চোখধাঁধানো। অনেক দিন পর সমর্থকেরা হয়তো খেলা দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন। যদিও পরের ম্যাচে জাপানের বিপক্ষে সেই ব্রাজিলকে পাওয়া গেল সামান্যই।

প্রথমার্ধে ২–০ গোলে এগিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩–২ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। আনচেলত্তি এ ম্যাচে দলে অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন। তবু প্রশ্ন উঠতেই পারে—আসল ব্রাজিল কোনটা? দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে দেওয়া দল, নাকি জাপানের বিপক্ষে এগিয়েও হেরে যাওয়া দল? হয়তো আসল ব্রাজিলকে খুঁজতে হবে এই দুই রূপের মাঝামাঝি কোথাও।

ব্রাজিল কোচ কার্লো আনচেলত্তি

সম্পর্কিত নিবন্ধ