শীর্ষ তিন বিজয়ীর অভিজ্ঞতা, আবেগ ও অর্জনের গল্প
Published: 17th, May 2025 GMT
প্লেটের ক্যানভাসে খাবার উপস্থাপনার জাদুই হলো ‘আর্ট অব প্লেটিং’। নতুন প্রজন্মের প্লেটিং-শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করতে ২০২২ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আকিজ বশির গ্রুপ আয়োজন করে ‘আর্ট অব প্লেটিং সিজন-১ ’। প্রথমবার সাফল্যের পর এ বছরের এপ্রিলে আরও বড় পরিসরে এবং কঠিন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আয়োজিত হয় ‘আকিজ টেবিলওয়্যার আর্ট অব প্লেটিং সিজন-২’ প্রতিযোগিতা।
প্রায় ২৫ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয় এ আয়োজনে। প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২০০ জন প্রতিযোগী সুযোগ পান ঢাকায় গ্র্যান্ড অডিশনের। সেখান থেকে নির্বাচন করা হয় সেরা ৩০ জনকে। শুরু হয় একটি রোমাঞ্চকর রিয়েলিটি শো—যেখানে প্রত্যেকেই লড়েছেন ‘প্লেটিং মায়েস্ট্রো’ খেতাবের জন্য। বিচারকের আসনে ছিলেন মাস্টার শেফ ড্যানিয়েল সি গোমেজ এবং জনপ্রিয় কালিনারি আর্টিস্ট ও ট্রেইনার সাউদিয়া সুলতানা স্মিতা।
এবারের শীর্ষ তিনজন বিজয়ী—গোলাম রাব্বি, ইফ্ফাত জেরীন সরকার এবং রওজাতুর রুম্মানের অভিজ্ঞতা, আবেগ ও অর্জনের গল্প শুনেছেন দিনার হোসাইন হিমু
গোলাম রাব্বির শৈশব কেটেছে বরিশালে। স্কুল-কলেজও ছিল সেখানেই। বর্তমানে তিনি পেস্ট্রি-শেফ হিসেবে দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তবে তাঁর ছোটবেলা মোটেও অন্য সবার মতো কাটেনি।
গোলাম রাব্বি বলেন, ‘মা মারা যাওয়ার কারণে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমার বড় হয়ে ওঠা। তবে অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আর্ট অব প্লেটিংয়ে অংশগ্রহণটা ছিল সেই ভালোবাসারই একটি বহিঃপ্রকাশ। এ ধরনের একটি প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে—আমার জানা ছিল না। মাসুম নামে আমার এক বড় ভাই এই প্রতিযোগিতার ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার করে বলেন, তুমি এখানে অংশ নাও। আমি জানি তুমি পারবে। এভাবেই এখানে আসা।’
এই যাত্রায় কে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন? জানতে চাইলে রাব্বি বলেন, ‘প্লেটিং মায়েস্ট্রো হয়ে ওঠার পেছনে আমার অনুপ্রেরণা আমার ছেলে। তার জন্য আমি সব সময় এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যেন সে বাবাকে দেখে গর্ব করে।’
প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গোলাম রাব্বি বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল টপ-টেন থেকে টপ-ফাইভে যাওয়া। মনে হয়েছিল, এ যাত্রা যেন এখানেই শেষ! এই পর্বে একটি আর্টকে খাবারের মাধ্যমে তুলে ধরতে হয়েছিল। প্রথমবার আমার প্লেটিং নষ্ট হয়ে যায়। পরে আবার আমাকে নতুন করে বানাতে হয়।’
চ্যাম্পিয়নের পুরস্কার গ্রহণ করছেন মো.গোলাম রাব্বি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুনে প্রবাসী আয় ২৮২ কোটি ডলার, রিজার্ভ ছাড়াল ৩১ বিলিয়ন
২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৮২ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ডলার। গত জুনে বেড়েছে প্রায় ২৮ কোটি ডলার বা ১১ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর প্রথমবারের মতো প্রবাসী আয় ৩০ বিলয়ন ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়েছে। রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে জুন শেষে গ্রস ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছর বৈধ চ্যানেলে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার দেশে এসেছে। আগের অর্থবছর এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। এর মানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৪১ কোটি ডলার বা ২৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে করোনার প্রকোপ শুরুর পর ২০২০–২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার দেশে এসেছিল।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে হুন্ডি চাহিদা কমেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবার এবং তার ঘনিষ্ঠ ১০ ব্যবসায়ী–রাজনৈতিকের অনিয়ম–দুর্নীতির বিষয়ে ১১টি যৌথ তদন্ত দল কাজ করছে। এরই মধ্যে ব্রিটেনে কিছু সম্পদ জব্দ হয়েছে। এসব কারণে চাপের মুখে রয়েছে পাচারকারীরা। যে কারণে প্রবাসী আয়ের বড় অংশই এখন বৈধ চ্যানেলে দেশে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুন মাসের এ রেমিট্যান্স একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলার এসেছে, গত মার্চ মাসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৭ কোটি ডলার এসেছিল, গত মে মাসে। ঈদের কারণে গত মাসের প্রথম দিকে টানা ১০দিন বন্ধ থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বেড়েছে।
রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত ২৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সবশেষ ২০২৩ সালের মার্চের শুরুতে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছিল। এরপর ওই মাসের ১৫ তারিখ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এছাড়া সব সময়ই এখনকার চেয়ে রিজার্ভ কম ছিল।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি চালুর পর থেকে ইডিএফসহ বিভিন্ন তহবিলে যোগন দেওয়া ঋণসহ গ্রস রিজার্ভের হিসাব করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বিভিন্ন তহবিলে যোগন দেওয়া ঋণ বাদ দিয়ে আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী হিসাব প্রকাশ করা হয়। বিপিএম৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ পতনের পর যা ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। অর্থপাচার ব্যাপক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তা তলানিতে নেমে যায়।