তিন দিনের অচলাবস্থার পর আগামীকাল রোববার থেকে পূর্ণোদ্যমে শুরু হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা। তিন দফা দাবির আন্দোলন শেষে আগামীকাল থেকে ক্লাসে ফিরছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ইউজিসি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ায় গতকাল রাতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে,  চলমান ক্লাস, সেমিস্টার ফাইনাল, মিডটার্মসহ প্রশাসনিক কাজ আগামীকাল থেকে আবারও চালু হবে। বেশ কিছু বিভাগের পরীক্ষার তারিখ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পেছানো হয়েছে। তবে ক্লাস নিয়মিত চালু থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শনিবার শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। বিকেলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও শিক্ষক সমিতির নেতারাসহ প্রশাসনের অনেকেই সেখানে উপস্থিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর, শহীদ মিনার, বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরও বাড়ে।

আবাসন ভাতা, প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনসহ তিন দফা দাবিতে বুধবার ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩৬ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। হামলাকারী পুলিশদের বিচারের দাবিসহ বুধবার থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তিন দিন অবস্থানের পর ইউজিসির চেয়ারম্যান দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে, অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন তুলে নিয়ে পুনরায় কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ।

আন্দোলন শেষে ক্লাসে ফিরতে পেরে স্বস্তিতে শিক্ষার্থীরাও। দাবি মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার হওয়ায় স্বস্তি জানিয়ে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নীলাঞ্জনা হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিনের আন্দোলনে অনেক ক্লান্ত সবাই৷ তবে আশার বাণী হচ্ছে, ইউজিসি আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে, আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হব।’

নীলাঞ্জনা হালদার আরও বলেন, ‘রাস্তা থেকে আমরা এখন বাসায় এসেছি, মনে কিছুটা স্বস্তিও কাজ করছে। তবে শঙ্কাও আছে কিছুটা। যদি আগের মতো আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হয়, তবে আমাদের আবারও আন্দোলনে নামতে হবে। নিজেদের পড়াশোনা ছেড়ে আমরা বারবার আন্দোলনে নামতে চাই না। আশা করি, আমাদের দাবিগুলো দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে।’

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.

মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের মূলকাজ পড়াশোনা করা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি, সে জন্য আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরতে চাই, আর আন্দোলনে নামতে চাই না। সরকারকে আমাদের মেনে নেওয়া দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ ম ক ল অবস থ ন উপস থ ত পর ক ষ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিনকে ফোন করবেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে কথা বলতে আগামীকাল সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলবেন। তিনি বলেছেন, এই ফোনালাপ হবে ‘রক্তপাত বন্ধ করার’ চেষ্টা নিয়ে।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, এই ফোনালাপটি অনুষ্ঠিত হবে সোমবার (স্থানীয় সময়) সকাল ১০টায়। পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ন্যাটোর কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।

যুদ্ধের তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো গত শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সামনাসামনি বৈঠকে বসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল। তবে ওই বৈঠকে কোনো অগ্রগতি অর্জন হয়নি। তবে দুই পক্ষ বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে সম্মতি হয়েছে।

ট্রাম্প প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পুতিন উপস্থিত থাকলে তিনি ওই বৈঠকে অংশ নেবেন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সেখানে যেতে চাননি।

আরও পড়ুনপুতিন ও আমি একসঙ্গে না বসা পর্যন্ত কিছুই হবে না: ট্রাম্প১৫ মে ২০২৫

গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, পুতিন ও তাঁর নিজের একসঙ্গে বসা ছাড়া ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব নয়। এর দুদিনের মধ্যে পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার বিষয়টি নিজেই ঘোষণা দিলেন তিনি।

এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছে নিশ্চিত করেছেন যে, সোমবার পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি ফোনালাপের প্রস্তুতি চলছে। এর আগেও এই বিষয়ে দুই নেতা একবার ফোনে কথা বলেছেন।

পেসকভ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ‘আলোচনার প্রস্তুতি চলছে।’

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ‘আশা করছি এটি একটি ফলপ্রসূ দিন হবে ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এই সহিংস যুদ্ধ যা কখনোই হওয়া উচিত ছিল না সেটি শেষ হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ