সম্প্রতি উত্তর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। বলা হচ্ছে, এসব অটোরিকশা দুর্ঘটনার কারণ, পথচারীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মানবিক দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অন্যান্য রিকশার চালকেরা সাধারণত হতদরিদ্র, দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। এরা দিন আনে দিন খায়। হঠাৎ করে রিকশা উচ্ছেদ করলে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে, পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়বেন। পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ ছাড়াই এ ধরনের অভিযান তাদের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা অবশ্যই জরুরি, তবে তা হতে হবে পরিকল্পিত ও মানবিক। কোনো বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না করে কেবল উচ্ছেদ চালানো অন্যায্য।
প্রশাসনের উচিত প্রথমে রিকশাচালকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া। এরপর সঠিক নিয়মে অবৈধ যানবাহন অপসারণ করলে তা টেকসই ও মানবিক হবে।
বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা ছাড়া অটোরিকশা উচ্ছেদ করলে সমাজেও তা নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বেড়ে যাবে অপরাধ।
মো: ইয়ামিন খান
ফরিদপুর।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লিটনরা বল বুঝতে পারেন না
‘শান্তর আউট দেখে গোসলে গেছি, এসে দেখি শেষ।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লন্ডন থেকে মোহাম্মদ আশরাফুল পরিস্থিতি তুলে ধরেন এভাবে। ১ উইকেটে ১০০ রানে পৌঁছানো দল ৮ উইকেট হারায় ১০৫ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের ঘটনা রীতিমতো কৌতুকে পরিণত হয়েছে।
আশরাফুলের মতো হাবিবুল বাশারও একটি গল্প শোনান ঢাকা থেকে। তিনি বলেন, ‘২ উইকেটে ১০০ রান দেখে বাড়ির কাছে বন্ধুর বাসায় যাচ্ছিলাম। যে রিসিভ করতে এসেছে হঠাৎ সে বলে ৮। আমি বলি ৮ না ১১ তে যাব। সে বলে না না স্যার, ৮ উইকেট পড়েছে (হাসি)।’
লিটন কুমার দাসদের ব্যাটিং বিপর্যয় এবং বাংলাদেশের পরাজয় নিয়ে সবচেয়ে মোক্ষম ‘ডায়ালগ’ জাতীয় দলের সাবেক পেস বোলিং কোচ চম্পকা রমানায়েকে দিলেন গতকাল সমকালকে সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, ‘এভাবে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করতে পারে কেবল বাংলাদেশ। একবার না বহুবার করেছে।’
টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০– তিন সংস্করণের ব্যাটিংয়েই দুর্বল বাংলাদেশ। পঞ্চপাণ্ডবের কারণে মাঝে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও বর্তমানে ব্যাটিং ব্যর্থতা জাতীয় দলের ভয়াবহ রোগ। উইকেট পড়তে থাকলে মুহূর্তে তা বিপর্যয়ে রূপ নেয়। বুধবার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ঘটেছে সেই অবর্ণনীয় বিপর্যয়।
স্বাগতিক দুই স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও কামিন্দু মেন্ডিস ভোজবাজির মতো গেম পরিবর্তন করেন। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় খুব সহজে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন তারা। কেন এই বিপর্যয় সে কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘বলতে খারাপ লাগে কিন্তু না বলেও পারছি না। ছেলেরা এত প্রতিভাবান অথচ কেউ ভালো ক্রিকেট খেলতে পারেন না। বোলারদের হাত দেখে যদি না-ই বুঝতে পারেন কোনটা গুগলি আর কোনটা লেগ স্পিন তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিন। এত বছর ধরে খেলছেন, ১৪ থেকে ১৫ বছর হয়ে গেছে ক্রিকেটে এখনও হাত দেখে বুঝে গুগলি ডেলিভারি না বুঝলে হবে কী করে। এখানে কোচ কিছু করতে পারবেন না।’
জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক হতাশা নিয়ে আরও বলেন, ‘আমরা যে ভুল করতাম ওরাও একই ভুল করলে তো হবে না। ওদের আরেকটু আপগ্রেড হওয়া দরকার। হাসারাঙ্গা ৬০টি বল করলে ৪০টি থাকে গুগলি। ওই ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন ছিল। বোলারদের ভালোভাবে স্টাডি করলে এরকম ভুল হওয়ার কথা না। হাসারাঙ্গা প্রতি ম্যাচে আমাদের বিপক্ষে তিন চারটি করে উইকেট নেয়। তার বল রিড করা তো অত কঠিন না। সে তো মুরালি ধরন না।’
তাঁর মতে বোলার ভালো জায়গায় বল করবে, ব্যাটারকে খেলতে হবে বুদ্ধি খাটিয়ে, ‘আমার যেটা মনে হয়, আরেকটু গভীরভাবে চিন্তা করা উচিত ব্যাটারদের। পরিস্থিতিগুলো একটু আগে থেকে বোঝার সক্ষমতা থাকতে হবে। গত ম্যাচের পরিস্থিতি ছিল ২ উইকেটে ১০০ রান। ওই সময়টি টিকে থাকতে হতো। বল তো ভালো জায়গায় করবেই। তার মানে এই না বল এক জায়গায় ব্যাট আরেক জায়গায় থাকবে। গেল ম্যাচের পারফরম্যান্স খুবই হতাশ করা।’
লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্তরা সাত-আট বছর হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। তাওহীদ হৃদয়ও দেখতে দেখতে পরিণত। এত বছর খেলার পরও বোলারকে ভালোভাবে রিড করতে না পারা ব্যাটিং বিপর্যয়কে হতাশার বলছেন সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, ‘এখন কেউই ভালো খেলছে না। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা একেবারে নেই। ছয় মাস ধরে ব্যাটিংয়ের শৃঙ্খলা নেই। এই জায়গা থেকে উত্তরণের একটাই পথ টিম ম্যানেজমেন্টকে ওয়ান টু ওয়ান কাজ করতে হবে।’
প্রথম ওয়ানডের হতাশা ভুলে নতুন উদ্যমে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার পরামর্শ তাঁর, ‘প্রেমাদাসার উইকেট একটু স্লো। এখানে ভালো ব্যাটিং করতে হলে পরিকল্পনা করে খেলতে হবে। এসেই মারা যাবে না।’
হাবিবুল বাশারের দৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয় ব্যাখ্যাতীত। তাঁর মতে, ‘ওরা কেউ মুরালিধরন না। হাসারাঙ্গা গুগলি মারে আমরা সবাই জানি। ব্যাটাররা কেউ তাকে রিড করতে পারেনি। আমার কাছে মনে হয়েছে মনোযোগের অভাবে এটি হয়েছে। কারণ হাসারাঙ্গা গুগলিই করে। ও লেগ স্পিন খুব কম করে। ছয়টার মধ্যে পাঁচটা গুগলি থাকে একটি লেগ স্পিন। বা চারটি গুগলি, একটি লেগ স্পিন ও একটি সোজা মারে।’
জাতীয় দলের সাবেক পেস বোলিং কোচ চম্পকার ব্যাখ্যা হলো, ‘বোলাররা সব সময় ভালো করে। ব্যাটিং তেমন হয় না। ১০০ রান হওয়ার পর ম্যাচ ৮ উইকেটে জেতার কথা বাংলাদেশের। তানজিদ হাসান তামিমের উচিত ছিল ইনিংস টেনে নেওয়া। খুব বাজে খেলেছে ওরা। বাংলাদেশ ছাড়া এভাবে কেউ ম্যাচ হারে না।’