ভারতের ‘অপপ্রচার’ সম্পর্কে জানাতে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে পাকিস্তান
Published: 19th, May 2025 GMT
ভারতের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভারতীয় ‘অপপ্রচার উন্মোচনের জন্য’ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী শহরগুলোয় উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল রোববার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাষ্ট্রমালিকানাধীন রেডিও পাকিস্তানের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত মাসে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলাকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ওই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। পরবর্তী সময়ে ওই উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়। ৬ মে রাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত।
জবাবে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করে পাকিস্তান। পরস্পরের বিমানঘাঁটিতে পাল্টাপাল্টি হামলার পর ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। তবে পাকিস্তানের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির পরও ভারত তার আগ্রাসী অবস্থান বজায় রেখেছে। ভবিষ্যৎ কোনো সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসলামাবাদ।
রেডিও পাকিস্তানের প্রতিবেদনে বলা হয়, পেহেলগামে হামলা এবং দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনার বিষয়ে ভারতের অপপ্রচার মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী শহরে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহবাজ। এক ফোনালাপে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে এই কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
প্রতিনিধিদলে আরও আছেন মুসাদিক মালিক, প্রকৌশলী খুররম দস্তগির, সিনেট সদস্য শেরি রেহমান, হিনা রাব্বানি খার, ফয়সাল সুবজওয়ারি, তেহমিনা জানজুয়া ও জলিল আব্বাস জিলানি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিনিধিদলটি লন্ডন, ওয়াশিংটন, প্যারিস ও ব্রাসেলস সফর করবে। সেখানে তারা ভারতের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার ও আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করবে। এ ছাড়া দলটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তানের আন্তরিক প্রচেষ্টার দিকটিও জোর দিয়ে উপস্থাপন করবে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের পক্ষে শান্তির বার্তা উপস্থাপনের জন্য একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ তাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন।
বিলাওয়াল লেখেন, ‘এই দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি এবং এই কঠিন সময়ে পাকিস্তানের সেবা করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ভারত সরকারও সম্প্রতি একই ধরনের একটি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। তারাও বলেছে, সন্ত্রাসবাদবিরোধী মনোভাব এবং ভারতের জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়ে দেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশগুলোর কাছে তুলে ধরতে চলতি মাসের শেষ দিকে সাতটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিদেশ সফরে যাবে। সফরসূচিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলোও আছে।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের বিস্তারিত কূটনীতিকদের জানাল ভারত, ছিল না চীন–তুরস্ক১৪ মে ২০২৫আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তানের টেকসই যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন১৭ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষমা না চাইলে কুমিল্লায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা হাসনাতকে: বিএনপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ‘আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপির রাজনীতি চলে’- এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ক্ষমা না চাইলে তাকে কুমিল্লায় অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথা বলেছে।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী নয়, মানসিক ভারসাম্য হারানোর ইঙ্গিতও দেয়। তার (হাসনাত আব্দুল্লাহর) অবিলম্বে মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।”
আরো পড়ুন: আ.লীগের অর্থ কাঠামো ধ্বংস ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে
আরো পড়ুন:
অবৈধ নির্বাচনের মেয়র হতে চাইলে সেটা কি বৈধ হয়, প্রশ্ন সারজিসের
সরকারের ভেতরে-বাইরে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে: তারেক রহমান
তিনি বলেন, “যদি হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান এবং বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তবে কুমিল্লা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।”
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে হাসনাত যেভাবে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের টাকায় বিএনপির রাজনীতি চলে’, সেটি একটি শিশুসুলভ ও রাজনৈতিকভাবে অপরিপক্ক বক্তব্য। এতে কুমিল্লার বিএনপি নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “এই কুমিল্লায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার, কর্নেল আকবর হোসেনের মতো নেতারা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্দিনে রাজপথে থেকেছেন, জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেই ইতিহাসকে হাসনাত আব্দুল্লাহ মিথ্যা ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করেছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “রাজনীতি মানে প্রতিপক্ষকে অসম্মান করা নয়। হাসনাতের বক্তব্যে কেবল কুমিল্লা নয়, দেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।”
তিনি বলেন, “হাসনাত বর্তমানে ‘কিংস পার্টি’ বা ‘রাজার পার্টির’ মুখপাত্র। এই ধরনের ‘ছেলেমানুষ’ নেতাদের মাঠে নামিয়ে সরকার আসলে গণতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করছে।”
অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, “সরকার নির্বাচন যত বিলম্বিত করবে, জনগণের আস্থা তত হারাবে। বাংলাদেশের মানুষ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। আন্দোলনে কুমিল্লা বিএনপি জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং আগামীতেও রাখবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন ও সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমসহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত শুক্রবার (১৬ মে) কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই সম্মেলন’-এ বক্তব্য রাখেন এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেখানেই তিনি বলেন, “কুমিল্লার অনেক উপজেলায় বিএনপির রাজনীতি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ