বিগত সরকারের পতনের পর আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়েছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
Published: 19th, May 2025 GMT
বিগত সরকারের পতনের পর দেশের আমলাতন্ত্র আরো শক্তিশালী হচ্ছে জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চোরতন্ত্রে ছিলেন আমলারা, ব্যবসায়ীরা আর রাজনীতিবিদরা। এখন রাজনীতিবিদরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ আর আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরুজ্জীবিত।
সোমবার (১৯ মে) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৫-২৬: নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক বহুপাক্ষিক অংশীজনের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। সিপিডি ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এর আয়োজন করে।
বাংলাদেশের গত ১৫ বছরের অর্থনীতির চালচিত্র নিয়ে শ্বেতপত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করার পরামর্শ ছিল বলে জানান দেবপ্রিয়। তবে যে প্রক্রিয়ায় এনবিআর দুইভাগ হয়েছে, তা সঠিক হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেবপ্রিয় বলেন, এনবিআর নিয়ে এখন যে আলোচনা চলছে আমরা মনে করি, দুই ভাগ করাটা ঠিক হয়েছে এটা উচিত এবং আমাদের শ্বেতপত্রের সুপারিশেও এটা ছিল। কিন্তু যেভাবে করা হয়েছে এটা ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, যেভাবে এটাকে করা হয়েছে তা আলোচনা ছাড়াই পেশাজীবীদের জায়গাকে সংকুচিত করে এবং অন্যান্য স্বায়ত্তশাসন জায়গাকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখে এই পদ্ধতি ঠিক হয়নি এবং এটাকে ঠিকমত করাটা এখন বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের বেকারত্ব বেড়েছে ১৪ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতির তুলনায় শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির হার অনেক নিচে। দেশের অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়ায়নি।
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কিনা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার বিনিয়োগ উপাদানগুলো খুব বেশি উৎসাহিত করতে পারছে না। আগামী প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগ তাড়িত নাও হতে পারে। সেটি হবে ভোগ তাড়িত।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মুদ্রানীতি এখনও প্রতিফলিত হয়নি। ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগনাল পাবো।
দেশের দারিদ্রতার হার বাড়ছে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র বাড়ছে এটা বলা বাহুল্য।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অনিসুজ্জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।
তিনি ১৯৭১ সালের অর্থনৈতিক ধস এবং প্রেসিডেন্ট নিক্সনের স্বর্ণ মান পরিত্যাগের সিদ্ধান্তের মতো বৈশ্বিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে দেখান, কিভাবে ইতিহাসের পরিবর্তন আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি ‘বাস্কেট কেস’ ধরনের পুরোনো, নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার উপর জোর দেন। পাশাপাশি, স্থিতিশীল ও ন্যায্য আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কাঠামোর অনুপস্থিতির দিকটি তুলে ধরেন, যা আজকের দিনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।
র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ বলেন, এবার একটা ভিন্নধর্মী বাজেট হবে বলে আমরা আশা করি। কারণ বাজেট নিয়ে আগে যারা কথা বলেছে তারা এখন বাজেট প্রণয়ন করছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে যতগুলো কমিটি করেছে শ্বেতপত্র, টাস্কফোর্স ও কমিশন এসবের প্রতিফলন বাজেটে থাকা উচিত। কিছু প্রতিফলন এর মধ্যে দেখা গেছে, যেমন এবারের বাজেটের আকার কমছে, এডিপির আকার ও প্রকল্পের সংখ্যা কমানো হয়েছে।
বাজেটে কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা, সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো থাকবে, যোগ করেন তিনি।
ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে রাজস্ব বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর পাশাপাশি অধ্যাপক ইউসুফ কর জিডিপি রেশিও বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রার সমালোচনা করে বলেন, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত আমার লক্ষ্যই যদি থাকে ১০.
ঢাকা/হাসনাত/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ব তপত র সরক র র আমল
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
বরিশালে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক আক্তার ফারুক শাহীনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বরিশালে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বিএনপির পদ স্থগিত থাকা আইনজীবী বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। বিচারক মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী মামলার পরবর্তী দিন আগামী ১ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন ও শাহীনের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। শাহীন দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত বছর ১১ আগস্ট ‘বরিশালে ১০ কোটি টাকার পুকুর ভরাটের চেষ্টা বিএনপি নেত্রী শিরিনের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। তার দাদা ৬৫ বছর পূর্বে পুকুরটি ক্রয় করেছেন। ওয়ারিশ সূত্রে তিনি আধা শতাংশ মালিকও নন। এর মূল্যে কোনোভাবেই ১০ কোটি টাকা হতে পারে না। তাছাড়া পুকুরটি এখন ব্যবহার অযোগ্য। সেটি ভরাটের সঙ্গে তিনি (শিরিন) কোনোভাবেই জড়িত নন।
মামলা করা পর বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী শিরিন বলেন, ‘সংবাদটি প্রকাশ করে আমার রাজনৈতিক ও পরিবারের সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। একাধিক প্রতিবাদ লিপি দিলেও পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। ব্যুরো প্রধানকে পর পর দিনটি আইনি নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেননি’।
এ বিষয়ে সাংবাদিক শাহিন বলেন, ‘জাল দলিল সূত্রে পুকুরটির মালিকানা বদল হয়েছে। দালিলিকভাবে সেটি জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত পুকুর। জলাশয় আইনে এটি ভরাট করা অপরাধ। ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনের পর শিরিনের ভাই শামিম সশরীরে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট করেন। ভরাট করায় পরিবেশ অধিদপ্তর যে নোটিশ দিয়েছে, তাতেও শিরিনের নামও রয়েছে। মামলার বিষয়টি আদালতে আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে’।