ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বিবি (৬৫) নামের এক গৃহকর্মীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটকে রেখে নির্যাতন ও জোর করে পাঁচ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করানো হচ্ছে বলে মরিয়ম বিবির ছেলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার বিকেলে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ।

মরিয়ম বিবি ফরিদপুর শহরের আলীপুর মহল্লার রাজ্জাকের মোড় এলাকার মৃত রহিম উদ্দিনের স্ত্রী। তাঁর একমাত্র ছেলের নাম আবদুল মতিন (৩৮)। মতিন পেশায় মুদিদোকানি। তাঁর স্ত্রী ও তিন ছেলে আছে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ মরিয়ম বিবিকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। ছেলে আবদুল মতিনের জিম্মায় তাঁর মা মরিয়ম বিবিকে দেওয়ার নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান।

আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, অনেক ছোট বয়সে তিনি বাবাকে হারিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে তাঁর মা সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আবদুল কাদেরের বাসায় থেকে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। আগে তাঁর আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল। এখন তিনি কিছুটা সচ্ছল হয়েছেন। তাঁর মাকে বাড়িকে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবদুল কাদেরের স্ত্রী তাঁকে আটকে রেখেছিলেন। তাঁকে নির্যাতন করা হতো। তাঁর মা পাঁচ বছর কাজ করলেও কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ওই সময় বাড়ির লোকজন ঘরে উপস্থিত থাকত। মা তাঁকে সত্যি কথা বলতে পারেননি।

আবদুল মতিন আরও বলেন, মাকে ফিরে পেতে গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পরে পুলিশ তাঁর মাকে উদ্ধার করে আনে।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফরিদপুর শহরের অনাথের মোড় এলাকায় ১০ তলা ‘গনি ভবন’–এর তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মরিয়ম বিবিকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদ তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে আবদুল কাদেরের মেয়েরা ঘরের দরজা খুলতে রাজি হয়নি। ১৫ মিনিট পর দরজা খুলে দেয় বড় মেয়ে (১৪)। মেয়ের মুঠোফোনে সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর (আসাদ) সঙ্গে কথা বলেন আবদুল কাদের। এ সময় আবদুল কাদের নিজেকে একজন হাই প্রোফাইলের লোক দাবি করে বাসায় যাওয়ার জন্য হুমকি দেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। তিনি জবাবে বলেন, আদালতের নির্দেশে মরিয়ম বিবিকে উদ্ধার করতে এসেছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ওই বাসা থেকে মরিয়ম বিবিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

উদ্ধারের পর গতকাল ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মরিয়ম বেগম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করা হতো। ঘর মোছাসহ বাড়ির সব কাজ তাঁকে করতে হতো। ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবদুল কাদেরের বাসায় গিয়ে তাঁর তিন মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। বড় (১৪) ও মেজ (১৩) মেয়ে নবম শ্রেণি পড়ে। আরেক মেয়ে (১১) ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে জানায়, তার বাবা, মা ও ছোট বোন সিঙ্গাপুরে। বর্তমানে বাসায় তারা তিন বোন। বড় মেয়ে দাবি করে, ‘মরিয়ম বিবি তাঁর ছেলের কাছে যেতে চাইতেন না। তিনি আমাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করতেন। তাঁর ছেলে মাঝেমধ্যে বাসায় এসে মায়ের সঙ্গে দেখা করে যেতেন। মরিয়ম বিবিকে আটকে রাখা কিংবা নির্যাতন করার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

গনি ভবনে প্রহরী হিসেবে কাজ করেন শহরের কমলাপুর মহল্লার বাসিন্দা শেখ লোকমান (৬২)। তিনি বলেন, মরিয়ম বিবি দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতে কিংবা ময়লা ফেলতে বাড়ির বাইরে যেতেন। তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে—এ রকম কথা তিনি কখনো শোনেননি। তবে তাঁর ছেলে মাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ক দ র র গ হকর ম শহর র গতক ল চ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

বরিশালে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক আক্তার ফারুক শাহীনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বরিশালে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বিএনপির পদ স্থগিত থাকা আইনজীবী বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন। বিচারক মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী মামলার পরবর্তী দিন আগামী ১ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন ও শাহীনের বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ দেন। শাহীন দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান।  

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত বছর ১১ আগস্ট ‘বরিশালে ১০ কোটি টাকার পুকুর ভরাটের চেষ্টা বিএনপি নেত্রী শিরিনের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। তার দাদা ৬৫ বছর পূর্বে পুকুরটি ক্রয় করেছেন। ওয়ারিশ সূত্রে তিনি আধা শতাংশ মালিকও নন। এর মূল্যে কোনোভাবেই ১০ কোটি টাকা হতে পারে না। তাছাড়া পুকুরটি এখন ব্যবহার অযোগ্য। সেটি ভরাটের সঙ্গে তিনি (শিরিন) কোনোভাবেই জড়িত নন।

মামলা করা পর বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী শিরিন বলেন, ‘সংবাদটি প্রকাশ করে আমার রাজনৈতিক ও পরিবারের সামাজিক ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। একাধিক প্রতিবাদ লিপি দিলেও পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেয়নি। ব্যুরো প্রধানকে পর পর দিনটি আইনি নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেননি’। 

এ বিষয়ে সাংবাদিক শাহিন বলেন, ‘জাল দলিল সূত্রে পুকুরটির মালিকানা বদল হয়েছে। দালিলিকভাবে সেটি জনস্বার্থে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত পুকুর। জলাশয় আইনে এটি ভরাট করা অপরাধ। ৫ আগস্টের পর পটপরিবর্তনের পর শিরিনের ভাই শামিম সশরীরে উপস্থিত থেকে পুকুর ভরাট করেন। ভরাট করায় পরিবেশ অধিদপ্তর যে নোটিশ দিয়েছে, তাতেও শিরিনের নামও রয়েছে। মামলার বিষয়টি আদালতে আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ