জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান সারজিস, বর্ণনা করলেন ‘উপকারিতা’
Published: 20th, May 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের কিছু ‘উপকারিতা’ বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, ‘আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছি বলে এখানে যেন জাতীয় নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র খোঁজা না হয়। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হোক। সেটা নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকবে না।’
সোমবার রাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে সারজিস আলম এ কথাগুলো বলেছেন। সারজিস এমন এক সময়ে এই পোস্ট দিলেন, যখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে টানা বিক্ষোভ হচ্ছে।
সারজিস আলম লিখেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সব স্থানীয় নির্বাচন হোক। তাহলে ইশরাক ভাইয়ের (বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন) মতো যোগ্য ব্যক্তিরা তুলনামূলক লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে প্রতিযোগিতা করে গ্রহণযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। তা ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে জনগণ এবং দেশ উপকৃত হবে।’
পোস্টে আগে স্থানীয় নির্বাচনের তিনটি উপকারিতা তুলে ধরেন সারজিস আলম। তিনি লিখেছেন, বর্তমানে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসগুলোতে জনপ্রতিনিধির অভাবে যে সেবাগুলো বিঘ্নিত হচ্ছে, জনগণ সেই সেবাগুলো আবার পেতে শুরু করবে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনের আগে এই স্থানীয় নির্বাচন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশের ‘লিটমাস টেস্ট’ হতে পারে। যেমন নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এগুলো কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, সেই ‘লিটমাস টেস্ট’ হতে পারে। অতঃপর প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, বিয়োজন হতে পারে। সরাসরি জাতীয় নির্বাচন হলে যদি অপ্রত্যাশিত কিছু বিষয় পরিলক্ষিত হয়, তাহলে সেগুলো সংশোধনের আর সুযোগ থাকবে না। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তৃতীয় উপকারিতা হিসেবে সারজিস বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে মার্কা দিয়ে কিংবা সিলেকশন (বাছাই) প্রক্রিয়ায় নমিনেশন (মনোনয়ন) দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ‘মাই ম্যানকে’ (নিজস্ব লোক) বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে জনপ্রতিনিধি করা হয়। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সেই স্থানীয় নির্বাচন হলে ‘মাই ম্যান’ নয়, বরং জনগণের রায়ে জনগণের ম্যান জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে।
এরপর পোস্টে এনসিপি নেতা সারজিস আলম লিখেছেন, ‘বিএনপি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। তাদের কর্মী থেকে শুরু করে সমর্থনও সবচেয়ে বেশি। তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তবে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা হবে, সেটি হচ্ছে তাদের একাধিক প্রতিনিধির মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় মানুষটি নির্বাচিত হবে। চাঁদাবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সিন্ডিকেটের অংশীদার, তেলবাজরা জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসার সুযোগ পাবে না। আশা করি, এ বিষয়ে তাঁদের দ্বিমত থাকবে না।’
পোস্টের শেষে ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ দিয়ে সারজিস আরও লেখেন, ‘আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছি বলে এখানে যেন জাতীয় নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র খোঁজা না হয়। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দেওয়া হোক। সেটা নিয়ে আমাদের আপত্তি থাকবে না।’
সারজিস আলমের এই পোস্টের ঘণ্টাখানেক পর এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি সংক্ষিপ্ত পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টে তিনি শুধু চারটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র উপক র ত জনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
পানি-স্যানিটেশন খাতে টেকসই বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে
আসন্ন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকার ও পানি-স্যানিটেশন খাতে ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় তারা এ দাবি জানান। উন্নয়ন সংস্থা ডর্প এ আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ‘হেলভেটাস বাংলাদেশ’।
ডর্প-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে এবং উপনির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জিল্লুর রহমান, ব্যাংক সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য সাব্বির আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর এবং ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এ এইচ এম নোমান। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও অংশীজন আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদভিত্তিক জনপ্রতি বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সেবা নিতে পারেন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে বাজেট সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের বাস্তব চাহিদা বাজেটে প্রতিফলিত সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে মাহফুজ কবীর দেশের পানি ও স্যানিটেশন খাতে সঠিক বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, সিটি করপোরেশনগুলোতে বাজেট বাড়লেও গ্রামীণ এলাকায় সে তুলনায় বরাদ্দ আশানুরূপ নয়। এই বাজেট বৈষম্য দূর করে সমতাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর জন্য পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো উন্নয়নে পর্যাপ্ত ও ন্যায্য বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।