মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। কীভাবে এর সংযোগ নেওয়া যাবে, খরচ কেমন হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

মঙ্গলবার (২০ মে) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্টারলিংক নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। 

স্টারলিংকের কী ডাটা লিমিট রয়েছে: না স্টারলিংকের কোনো ডাটা লিমিট নেই। 

স্টারলিংকের সেবা গ্রহীতা কারা: দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখনো ফাইবার পৌঁছায়নি। মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার আছে। এ অবস্থায় মোবাইল কোম্পানিগুলো যে সেবা দান করে সেটা মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে হয়। যা লো ক্যাপাসিটির। 

দেশে এখনো হাজার হাজার মোবাইল টাওয়ার আছে যারা শুধু ৩০০ এমবিপিএস এর একটা ব্যান্ডউইডথ দিয়ে একটা মোবাইল টাওয়ার সচল রাখে ডেটা ইন্টারনেটের জন্য। সেই ডেটা ইন্টারনেটটা কয়েক হাজার গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে মাত্র একটা সেটআপ বক্স দিয়ে এই সমস্যাটার সমাধান হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী। 

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “গ্রামের একজন উদ্যোক্তা যদি ৪৭ হাজার টাকার স্টারলিংকের একটা সেটাপ বক্স কিনে তো তিনি উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এটা ব্যবহার করে সংসদ ভবনে কিংবা উপদেষ্টার বাসভবন বা তার অফিসে যেই স্পিডে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, ঠিক একই স্পিডে দেশের প্রত্যন্ত ও দূরবর্তী অঞ্চল যেমন পার্বত্য অঞ্চল, হাওরাঞ্চল কিংবা বনাঞ্চলে যেকোনো গ্রাহক উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। 

স্টারলিংক কি উদ্যোক্তা বান্ধব? উদ্যোক্তারা ইন্টারনেট সেবা প্রদানে কীভাবে স্টারলিংক ব্যবহার করতে পারবেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, “আমরা এনজিএসও'র বিধিবিধান এমনভাবে করেছি যেন স্টারলিংক বা সমজাতীয় ইন্টারনেট সুবিধা উদ্যোক্তা বান্ধব হয়।  

“একজন উদ্যোক্তা কিংবা একাধিক উদ্যোক্তা যদি ৪৭ হাজার টাকার একটা তহবিল গঠন করে, এই তহবিলের মাধ্যমে তারা ইন্টারনেট সেটআপ বক্স কিনতে পারবে। তারা তাদের আশেপাশের দোকানে এই ইন্টারনেটের সেবা প্রদান করতে পারবে। ওয়াইফাই রেঞ্জ আনুমানিক ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার। এই ৫০ মিটার জোনের মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামের গ্রোথ সেন্টারগুলোতে অনেক দোকানপাট থাকে। সেখানে সহজেই ইন্টারনেট সেবা এক ব্যক্তি কিনে বা একাধিক ব্যক্তি সমিতি আকারে কিনে মাল্টিপল ব্যবহার করতে পারবে।” 

তিনি আরো বলেন, “মাইক্রোক্রেডিট অথোরিটি, ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশন কিংবা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হবে স্টারলিংক উদ্যোক্তাদের অর্থের সংস্থানের জন্য। পাশাপাশি যারা নাগরিক সেবার উদ্যোক্তা হবেন, তাদের জন্য স্টারলিংক কীভাবে সহজে নেওয় যায়- এর জন্যও আমরা ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজ করার পরিকল্পনা করছি।”

মাসিক খরচ কত: প্যাকেজ সম্পর্কে ফয়েজ আহমদ বলেন, শুরুতে দুটি প্যাকেজ থাকবে—স্টারলিংক রেসিডেন্স ও রেসিডেন্স লাইট। মাসে খরচ একটিতে ৬ হাজার টাকা, অন্যটিতে ৪ হাজার ২০০ টাকা। তবে সেটাপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে। এখানে কোনো স্পিড ও ডেটা লিমিট নেই। সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের গ্রাহকেরা আজ থেকেই অর্ডার করতে পারবেন।

দামের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, “স্টারলিংকের দাম কিছুটা বেশি। স্টারলিংকে নেগোশিয়েশন করে কিছুটা কমিয়েছি। কিন্তু যেহেতু এটা শেয়ার্ড হবে এবং শেয়ার করা যাবে, শেয়ার করার উপর যেহেতু আমরা বিধিনিষেধ রাখিনি এবং বিক্রি করার উপরও বিধিনিষেধ রাখিনি; সেজন্য এই ইন্টারনেট দিয়ে ব্যবসা সফল ব্যবসা মডেল, এসএমই বা ব্যবসা মডেল তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশের এসএমই কিংবা উদ্যোক্তা বিকাশে সব ধরনের ফ্যাসিলিটি আইন, আইনগত ফ্যাসিলিটেশন রাখা হয়েছে।”

স্টারলিংকের মাধ্যমে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হবে কী:  স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান। এসকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, যার ১০ দিন গত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেই তাদের লোকাল গেইটওয়ে বাধ্যতামূলক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ডিভাইসের ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স আছে, তাই ডিভাইসের বিষয়ে এনওসি নেবে বলেও তিনি জানান। 

চীন-মার্কিন বাণিজ্য দ্বন্দ্বের মধ্যে স্টারলিংকের ব্যবহারে অনুমতি প্রদানে কোনো প্রভাব পড়বে কী: ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমরা যোগাযোগ প্রযুক্তির বিচারে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। বাংলাদেশে ৪/৫ জি টেকনলোজিতে সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ও ব্যবস্থা স্থাপনে চীনা প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বিটিসিএল, টেলিটক সংস্থার অধীন চীনা অর্থায়নে ও প্রকৌশলীদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানির ভেন্ডর হিসেবেও অনেক চীনা কোম্পানি কাজ করছে। আমরা চাই, চীন কিংবা মার্কিন ব্যবসায়ীরা যেনো স্বাধীনভাবে এখানে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে উন্মুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারেন।”

আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক এর দাম কী সহনীয়:  একটা ভবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন অনেকগুলো অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট থাকে। কয়েকটা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারা একত্রে এ সেবা নিতে পারবে। এক্ষেত্রে রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২০ মিটার হবে। 

এ বিষয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, “সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য এবং কনজিউমারদের জন্য এককালীন দামটা বেশি। তবে সেটাপ কস্টটা বেশি হলেও আমার মনে হয় এটা যখন ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যাবে অর্থাৎ সমবায় ভিত্তিতে হবে তখন এটার আর খুব বেশি অনুভূত হবে না।”

রিজিওনাল প্রাইস বিবেচনায় স্টারলিংকের ব্যয় কী বাংলাদেশে বেশী: রিজিওনাল প্রাইসের তুলনায় বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম। এমনকি শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, থাইল্যান্ডের চেয়েও কম। একক ব্যক্তি যিনি কিনবেন, যিনি ব্যয় নির্বাহ করবেন তার জন্য দাম বেশি হলেও শেয়ারিং এ কোনো সীমা না থাকায় দাম কমে আসবে।

সরকারি কোম্পানির স্বার্থ কীভাবে রাখা হচ্ছে: দুই ভাবে সরকারি কোম্পানির স্বার্থ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রথমত সাবমেরিন কেবল কোম্পানির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয়ত স‍্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে।

কীভাবে স্টারলিংক সংযোগ নেওয়া যাবে: বাংলাদেশের গ্রাহকরা সরাসরি স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট starlink.

com এ গিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। অর্ডার করতে প্রথমে আপনার ঠিকানা দিয়ে সেখানে এই সেবা পৌঁছাবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর একটি সার্ভিস প্ল্যান বেছে নিয়ে হার্ডওয়্যার কিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

স্টারলিংক সংযোগের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কিটে থাকে একটি স্যাটেলাইট ডিশ, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং ট্রাইপড ও ক্যাবল। প্রয়োজনীয় সংযোগ দিয়ে স্যাটেলাইট ডিশটির ফাঁকা জায়গায় আকাশের দিকে মুখে করে স্থাপন করতে হবে।

ইনস্টলেশন ও ব্যবহার: স্টারলিংক কিট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সহজেই ব্যবহারকারীরা সেটআপ করে নিতে পারেন। এর জন্য শুধু নিশ্চিত করতে হবে, স্যাটেলাইট ডিশটি যেন খোলা আকাশের নিচে থাকে।

ঢাকা/হাসান/ইভা

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র করত র জন য স ট স য ট ল ইট উপদ ষ ট র দ র জন য প রব ন র একট ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, তিন চালক গ্রেপ্তার

সিলেটের কানাইঘাটে রাস্তা থেকে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে তুলে নিয়ে বালুর মাঠে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আসামিরা হলো– কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের উমাগড় গ্রামের নিখিল দাসের ছেলে শুভঙ্কর দাস, বীরদল কচুপাড়া গ্রামের ফরিদ আহমদের ছেলে বাবুল আহমদ ও চটি গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে ফাহাদ মিয়া।

কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল সমকালকে জানিয়েছেন, ধর্ষণের ঘটনায় ওই তরুণীর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত বুধবার রাতে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় যান ওই তরুণী। পরদিন উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের কায়স্থ গ্রামের বালুর মাঠে স্থানীয়রা জামা-কাপড় ছেঁড়া অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান। তাঁকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিনজনের কথা জানান। তারা তাঁকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জড়িতদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টি, সড়কে ভোগান্তি
  • মাদ্রাসায় তালা দিয়ে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় শিক্ষকরা
  • মসজিদের মোতাওয়াল্লি নিয়োগ নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫০
  • মাদ্রাসা তালাবদ্ধ করে জামায়াত প্রার্থীর পথসভায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
  • দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি
  • বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ, তিন চালক গ্রেপ্তার
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ছিল অনিবার্য এক রাজনৈতিক বিস্ফোরণ
  • উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত’ করতে হবে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের বিচারের দাবিতে বিএনপির ঝাড়ুমিছিল
  • হবিগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ২