চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর শুরু
Published: 20th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকেই ইনস্টিটিউটের আসবাব মূল ক্যাম্পাসে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী বৃহস্পতিবার মূল ক্যাম্পাসেই ইনস্টিটিউটের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে।
চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমে খুশি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা চারুকলাকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করছেন। ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরাও স্থানান্তরের নানা ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে অনুভূতি জানাচ্ছেন।
এর আগে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২১ এপ্রিল এই দাবিতে ৯ শিক্ষার্থী অনশনেও বসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সিন্ডিকেট ডেকে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ৩৪ ঘণ্টা পর তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করেছিলেন।
চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই একটি ট্রাক ও তিনটি পিকআপ ভ্যানে মালামাল মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব মালামাল ড.
এ বিষয়ে জানতে ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা মূল ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য আন্দোলন করেছেন। আজ তাঁরা বাস্তবায়ন দেখছেন। এত দিনের কষ্ট আর বঞ্চনা ভুলে সবাই খুশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছেন। আসবাব স্থানান্তরের কাজের জন্য আপাতত চারুকলার ক্লাস বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার মূল ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু হবে।
আন্দোলনের শুরু ২০২২ সালেচারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট এটি নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে একীভূত হয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।
২০২২ সালের নভেম্বরে শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পর ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি তাঁরা ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
দাবি না মানায় ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা দেন। পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় দিয়ে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শর্ত সাপেক্ষে শ্রেণিকক্ষে ফেরেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি আবারও অবরোধ শুরু হয়।
একই দিনে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্লাসে ফেরার দাবিতে অবস্থান নেয়। এর মধ্যেই ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। পরদিন শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফিরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের কর্মসূচিতে হামলা চালান নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। পরে সেশনজট কমাতে শিক্ষার্থীরা ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। তবে দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। চলতি বছরের শুরুতে সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এপ্রিলের মধ্যে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দেন।
তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চলতি বছরের ২১ এপ্রিল আবার আন্দোলনে নামেন। এরপরই সিন্ডিকেট সভায় চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র কল ক
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।
এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।
তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।
আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।
অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।
অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।
আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’
আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগেযতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।
এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।