রাবিতে বিভিন্ন পদে বহাল আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা
Published: 20th, May 2025 GMT
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের সিন্ডিকেট ও ডিন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।
অন্যদিকে আওয়ামীপন্থি কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ এবং প্রশাসনের সক্ষমতার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, এ নিয়ে কাজ চলছে।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ৩১ জুলাই আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ (হলুদ প্যানেল) মানববন্ধন করে। সেখানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য উস্কানীমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাদের। তবে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি রাবি প্রশাসনকে।
আরো পড়ুন:
নোবিপ্রবিতে গবেষণা মেলা ২২ জুন
জবিতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেমিনার
ডিন পদে বহাল রয়েছেন আওয়ামীপন্থি হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আইন অনুষদে আইন বিভাগের শিক্ষক আবু নাসের মো.
এছাড়াও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে রয়েছেন, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রসায়ন বিভাগের হাসান মাহমুদ, সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের খন্দকার খালিদ বিন ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের রাকিবুল ইসলাম, প্রভাষক ক্যাটাগরিতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মো. রিজু খন্দকার বিনা।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বাবু বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্টের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হয়ে ওঠেছিল লেজুড়বৃত্তিক দানবীয় ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নই ছিল তাদের প্রধান কাজ। বিরোধী দল-মত দমনে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উস্কানি কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। রাবিতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে, সরকারকে উস্কানি দিয়েছে। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা তাদের দুধকলা দিয়ে পুষতে দেখছি। ডিন, সিন্ডিকেটসহ সবজায়গায় এখনো ছড়ি ঘুরাচ্ছে তারা। এটা আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে প্রতারণা, শহীদদের সঙ্গে প্রহসন।”
তিনি বলেন, “অতিদ্রুত এসব ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যদের অপসারণ করতে হবে। ৩১ জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “জুলাই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন আমরা কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। সব জায়গায় স্বৈরাচার ও তার দোসরদের আগলে রাখতে দেখছি। বিপ্লবের ১০ মাস পার হলেও রাবির সিন্ডিকেট, ডিন পদ থেকে আওয়ামী দোসরদের সরানো হয়নি; তাদের শাস্তি হয়নি।”
তিনি বলেন, “প্রশাসনকে আবার স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, অতিদ্রুত তাদের অপসারণ করুন। ৩১ জুলাই যারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেছিল, আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করতে উস্কানি দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেন। নতুবা তাদের নামে আমি বাদী হয়ে মামলা করব এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্রতি আপনাদের এ দরদের কারণ কি, তা রাজপথে এসে জবাব নেব।”
প্রশাসন ব্যর্থ দাবি করে রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “বর্তমান রাবি প্রশাসনের শীর্ষ চেয়ারগুলোতে যাদের বসানো হয়েছে, তারা ভুলে গেছেন সে চেয়ারগুলো আমাদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত। চব্বিশের জুলাই-আগস্ট চেতনাকে তারা সত্যিকার অর্থে লালন করেন কিনা সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। যদি তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করতেন, অবশ্যই জুলাই আন্দোলন চলাকালে হলুদ প্যানেলের যে শিক্ষকরা সরাসরি বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম পদক্ষেপ নিতেন।”
তিনি বলেন, “এসব আওয়ামী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের আঁতাত চলছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে গাদ্দারি করে চলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে উঠা নেতৃত্বের একটা অংশ বিভিন্ন অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। রাবি ছাত্রদল বেশ কয়েকবার সমাবেশসহ স্মারকলিপির মাধ্যমে বিচার চাইলেও ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বধ্যপরিকর। ইতোমধ্যে সত্যানুসন্ধ্যান কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে বিগত প্রশাসনের আমলের অপরাধ-দূর্নীতিসহ সব অপকর্মের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। ২৯ মে পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হবে। এরপর আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ হল দ প য ন ল শ ক ষকর ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
না’গঞ্জকে মেট্রোরেল প্রকল্প-২ এ সংযুক্ত করার দাবিতে নিসচার মানববন্ধন
রাজধানী ঢাকার সাথে মেট্রোরেল প্রকল্প-২ এ নারায়ণগঞ্জকে যুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে নিরাপদ সড়ক চাই নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
সকালে নিরাপদ সড়ক চাই নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জায়েদুল ইসলাম মিয়ার হাতে স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
মানববন্ধনে নিরাপদ সড়ক চাই নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক এড: হাবিবুর রহমান, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হাসানউদৌলা, কার্যকরী সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, সদস্য আল আমিন, কাউসার আলম, ফারুক মৃধা, রফিকুল ইসলাম, ইব্রাহিম, রাজু আহাম্মদ, হুমায়ুন, কাকলী প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তব্যরা বলেন, নারায়ণগঞ্জে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক গুণ বেশি। এখান থেকে প্রতিদিন ২ লাখেরও বেশি মানুষ ঢাকা যাতায়াত করে এবং ৫০ হাজার মানুষ কর্মের তাগিদে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জে আসেন।
"যে সক্রিয় লাইন আছে, সে লাইনে মাত্র ৪ লাখ যাত্রী যাতায়াতের জন্য মতিঝিল থেকে উত্তরা এমআরটি-৬ হতে পারে। তবে, ৩ লাখ মানুষের জন্য নারায়ণগঞ্জে এমআরটি-২ হতে পারবে না কেন?
কোন অজুহাতেই এমআরটি-২ প্রকল্প থেকে নারায়ণগঞ্জকে বাদ দেওয়া যাবে না।’ প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন বক্তারা।