স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসনের সিন্ডিকেট ও ডিন পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।

অন্যদিকে আওয়ামীপন্থি কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ এবং প্রশাসনের সক্ষমতার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, এ নিয়ে কাজ চলছে।

জুলাই আন্দোলন চলাকালে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ৩১ জুলাই আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ (হলুদ প্যানেল) মানববন্ধন করে। সেখানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য উস্কানীমূলক বক্তব্য দিতে দেখা যায় তাদের। তবে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি রাবি প্রশাসনকে।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবিতে গবেষণা মেলা ২২ জুন

জবিতে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেমিনার

ডিন পদে বহাল রয়েছেন আওয়ামীপন্থি হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত আইন অনুষদে আইন বিভাগের শিক্ষক আবু নাসের মো.

ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদে গণিত বিভাগের শিক্ষক নাসিমা আখতার, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এএসএম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এসএম এক্র্যাম উল্ল্যাহ, প্রকৌশল অনুষদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক, ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এএইচএম সেলিম রেজা।

এছাড়াও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে রয়েছেন, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে রসায়ন বিভাগের হাসান মাহমুদ, সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের খন্দকার খালিদ বিন ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের রাকিবুল ইসলাম, প্রভাষক ক্যাটাগরিতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মো. রিজু খন্দকার বিনা।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বাবু বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্টের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হয়ে ওঠেছিল লেজুড়বৃত্তিক দানবীয় ফ্যাসিস্ট। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নই ছিল তাদের প্রধান কাজ। বিরোধী দল-মত দমনে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উস্কানি কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। রাবিতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে, সরকারকে উস্কানি দিয়েছে। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আমরা তাদের দুধকলা দিয়ে পুষতে দেখছি। ডিন, সিন্ডিকেটসহ সবজায়গায় এখনো ছড়ি ঘুরাচ্ছে তারা। এটা আমাদের বিপ্লবের সঙ্গে প্রতারণা, শহীদদের সঙ্গে প্রহসন।”

তিনি বলেন, “অতিদ্রুত এসব ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যদের অপসারণ করতে হবে। ৩১ জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা মাঠে নামতে বাধ্য হব।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “জুলাই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন আমরা কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। সব জায়গায় স্বৈরাচার ও তার দোসরদের আগলে রাখতে দেখছি। বিপ্লবের ১০ মাস পার হলেও রাবির সিন্ডিকেট, ডিন পদ থেকে আওয়ামী দোসরদের সরানো হয়নি; তাদের শাস্তি হয়নি।”

তিনি বলেন, “প্রশাসনকে আবার স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, অতিদ্রুত তাদের অপসারণ করুন। ৩১ জুলাই যারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেছিল, আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করতে উস্কানি দিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেন। নতুবা তাদের নামে আমি বাদী হয়ে মামলা করব এবং শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্রতি আপনাদের এ দরদের কারণ কি, তা রাজপথে এসে জবাব নেব।”

প্রশাসন ব্যর্থ দাবি করে রাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “বর্তমান রাবি প্রশাসনের শীর্ষ চেয়ারগুলোতে যাদের বসানো হয়েছে, তারা ভুলে গেছেন সে চেয়ারগুলো আমাদের রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত। চব্বিশের জুলাই-আগস্ট চেতনাকে তারা সত্যিকার অর্থে লালন করেন কিনা সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। যদি তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করতেন, অবশ্যই জুলাই আন্দোলন চলাকালে হলুদ প্যানেলের যে শিক্ষকরা সরাসরি বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম পদক্ষেপ নিতেন।”

তিনি বলেন, “এসব আওয়ামী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের আঁতাত চলছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে গাদ্দারি করে চলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে গড়ে উঠা নেতৃত্বের একটা অংশ বিভিন্ন অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। রাবি ছাত্রদল বেশ কয়েকবার সমাবেশসহ স্মারকলিপির মাধ্যমে বিচার চাইলেও ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বধ্যপরিকর। ইতোমধ্যে সত্যানুসন্ধ্যান কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে বিগত প্রশাসনের আমলের অপরাধ-দূর্নীতিসহ সব অপকর্মের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। ২৯ মে পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হবে। এরপর আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ হল দ প য ন ল শ ক ষকর ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সাম্য হত্যার ‘প্রকৃত’ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় ‘প্রকৃত’ অপরাধীদের ধরতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দিয়েছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

আজ রোববার দুপুর ১২টা দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশে এ সময় বেঁধে দেন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান। ‘সাম্যের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবিতে' সাদা দল এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

 মোর্শেদ হাসান খান বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘প্রকৃত’ হত্যাকারীকে বের করা না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। আমরা কারও ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করবো না। সাম্য হত্যার মোটিভকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করতে চাচ্ছে একটা গ্রুপ। আগে সাম্য হত্যার খুনিদের বিচার হবে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক হত্যার ঘটনা ঘটেছে, আপনি সাম্য হত্যার বিচার থেকে শুরু করুন।’

তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিটিংয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে আলটিমেটাম দিয়ে আসবেন, আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। সরকারের কাছে স্ট্যান্ড নেন, আমরা সরকারের কাছে বলবো; প্রকৃত হত্যাকারীকে ধরতে হবে। সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে আজকে পাঁচদিন পূর্ণ হলো, এই পাঁচদিনে আমরা সো কল্ড আইওয়াশ এরেস্ট দেখেছি, আমরা এটা মানতে রাজি না। প্রকৃত হত্যাকারীকে ধরতে হবে।

মানববন্ধনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রের লাশ অত্যন্ত ভারী। ক্যাম্পাসে আমার ছাত্র দুবৃর্ত্তের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুবরণ করছে, আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপদে বিচরণ করতে পারছি না। ক্যাম্পাস নিরাপদ না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দিতে হবে। শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাস কখন কে ঘাপ্টি মেরে থাকবে; আমরা জানি না। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করুন।

 

সাদা দলের সদস্যসচিব অধ্যাপক মহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হোসাইন বক্তব্য দেন। এ সময় সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারসহ সাদা দলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ট্রানজিট সুবিধা স্থগিত রাখার দাবি জনতা পার্টির
  • ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে জামায়াতের নারী নেতাদের সাক্ষাত 
  • শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদ পাবিপ্রবি শিক্ষকের
  • ভাগাড়ের গন্ধে টেকা দায়
  • ভাঙন থেকে ১২ গ্রাম রক্ষায় মানববন্ধন
  • বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের বৈষম্য নিরসনে বেরোবিতে মানববন্ধন
  • রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ চার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার দাবি
  • সাম্য হত্যার ‘প্রকৃত’ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম