ঢাকায় ইব্রাহিম রায়িসির শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা
Published: 20th, May 2025 GMT
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি ও তার সফরসঙ্গীদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে মঙ্গলবার (২০ মে) রাজধানী ঢাকার ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
‘ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ ইব্রাহিম রায়িসির গভার্নেন্স মডেল’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড.
আরো পড়ুন:
ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
ইরানের বন্দরে বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ২৫, আহত সাত শতাধিক
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মওলানা ফাহিমুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীরমোহাম্মাদী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, একজন রাষ্ট্রনয়াকের যত ভালো গুণ থাকা দরকার ছিল তার সকল গুণই আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তিনি পবিত্র কুরআনের নির্দেশনাকে যথাযথভাবে তার জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি অন্তরে যা ধারণ করতেন, মুখে তাই বলতেন এবং কর্মের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতেন। তার কাজে ও কর্মে প্রধান লক্ষ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জনগণের সন্তুষ্টি।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন প্রেসিডেন্ট। তার জনপ্রিয়তা কেবল নিজ দেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তা ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। তিনি বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ও তার সঙ্গীদের শাহাদাতের ঘটনায় সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
ইরানসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে বিশ্বের সব মানবতাবাদী মানুষের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার শাহাদাতে সারা বিশ্বের মানুষ কেবল শোক ও সহমর্মিতা জানিয়েছে তাই নয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জাতীয়ভাবে শোক পালন করেছে। তাকে বলা হতো জনতার প্রেসিডেন্ট। তার জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল।
বক্তারা বলেন, আয়াতুল্লাহ রায়িসি নিজ দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি বৈদেশিক কূটনীতিতেও রয়েছে তার অনেক বড় সফলতা। তার প্রশাসনের সবচেয়ে গৌরবময় প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফিলিস্তিন এবং সেখানকার প্রতিরোধের বিষয়ে বাস্তবিকভাবে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকের অপরাধযজ্ঞ বন্ধ করা। এক্ষেত্রে তার ভূমিকা সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ঢাকা/হাসান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান আবার শুরু, স্থানীয় শিক্ষকদের পুনর্বহালের আশ্বাস
প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের চার হাজার লার্নিং সেন্টার (শিক্ষাকেন্দ্র) আবার চালু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব শিক্ষাকেন্দ্রে আবারও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্রগুলোয় প্রায় চার রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। ছাঁটাইয়ের মুখে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ৪ জুন আশ্রয়শিবিরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর গত বুধবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সভায় বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতিনিধি, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়ায় চার লাখ রোহিঙ্গা শিশু-কিশোর অলস সময় পার করছে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কার কথা উঠে আসে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা বৈঠকে বলেন, তহবিল–সংকটের কথা বলে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ শিক্ষককে ছাঁটাই করলেও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিক্ষক দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালু রেখেছিল। এটি বৈষম্য। তাই তাঁরা আন্দোলন শুরু করেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষকদের বাদ দিয়ে শিক্ষাকেন্দ্র চালু রাখতে দেবেন না তাঁরা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী এক মাসের মধ্যে ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকদের পুনর্বহালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করবে ইউনিসেফ। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তহবিল–সংকটের কারণে ১ হাজার ১৭৯ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষকের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। বুধবারের বৈঠকে বন্ধ শিক্ষাকেন্দ্রগুলো পরদিন থেকে চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান শুরু হলেও ইউনিসেফের তহবিল–সংকট রয়েছে। এক মাস সময়ের মধ্যে তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ শিক্ষকের চাকরি হবে। তহবিল সংগ্রহ না হলে রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদান আবার বন্ধ হয়ে যাবে, এমন অনিশ্চয়তাও রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষকনেতা বলেন, এক মাস সময়ের মধ্যে তাঁদের পুনর্বহাল না করলে আবারও তাঁরা কর্মসূচি জোরদার করবেন। তাঁদের বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষাকেন্দ্র চালু রাখতে দেবেন না।
৪ জুন সকাল সাতটা থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোর্টবাজার পেট্রলপাম্প এলাকায় টানা ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ছাঁটাই হওয়া শিক্ষকেরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। একই সময় আশ্রয়শিবিরে কর্মরত দেশি-বিদেশি শতাধিক বেসরকারি সংস্থার কাউকে আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে দেননি আন্দোলনকারীরা। পরে ওই দিন বিকেল চারটার দিকে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। আশ্রয়শিবিরগুলোর শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের আট হাজার শিক্ষকের মধ্যে চার হাজার বাংলাদেশি। তবে সম্প্রতি ১ হাজার ১৭৯ বাংলাদেশি শিক্ষককে ছাঁটাই করা হয়।
আরআরআরসি কমিশনারের কার্যালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে আশ্রয় শিবিরগুলোয় থাকা ১৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোরের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার। তাদের মধ্যে প্রায় চার লাখ শিশু-কিশোর শিক্ষাকেন্দ্রে পড়াশোনা করছে।
আশ্রয়শিবিরের শিক্ষাকেন্দ্রগুলো বাঁশ ও টিনের ছাউনি দিয়ে গড়া। প্রতিটা কেন্দ্রে ৬-১৪ বছর বয়সী ৪০ শিশু মেঝেতে বসে পড়াশোনা করে। রোহিঙ্গা শিশুদের এলসি লেভেল-১ ও লেভেল-২—এই দুই ভাগে ইংরেজি, বর্মিজ ভাষা, গণিত ও লাইফ স্কিল বিষয়ে পড়ানো হয়। দুটি পালায় ৮০ শিশুকে সপ্তাহের ছয় দিন (শুক্রবার বন্ধ) পড়ানো হয়। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে নিয়োজিত রাখা হয় দুজন শিক্ষক। যার মধ্যে একজন বাংলাদেশি ও একজন রোহিঙ্গা।
বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা মদিনা খাতুন বলেন, তাঁদের শিবিরে ১৪-১৫ বছর বয়সী এক হাজারের বেশি মেয়ে রয়েছে। টানা এক মাস শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বহু মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় এক মাস বন্ধ থাকায় রোহিঙ্গা কিশোরদের অনেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে। শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে অপরাধ বেড়ে যাবে।