যশোর ডিসি অফিসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সাহায্য চাওয়া নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড
Published: 21st, May 2025 GMT
যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আর্থিক সহায়তা চাইতে গিয়ে কর্মচারীদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তি। কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পক্ষ নিলে কর্মচারীরা পাঁচ শিক্ষার্থীকে আটকে রাখেন। পরে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম অভিভাবকদের ডেকে তাঁদের হাতে শিক্ষার্থীদের তুলে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করেন।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ বুধবার দুপুরে। প্রতিবন্ধী ওই ব্যক্তির নাম মনিরুল ইসলাম (৪৫)। তাঁর বাড়ি যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া এলাকায়। তাঁর পক্ষ নিয়ে আটক হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, মুসলিম একাডেমি ও যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গণশুনানির দিন ছিল। এ সময় শারীরিক প্রতিবন্ধী মনিরুল ক্রাচে ভর দিয়ে আর্থিক সহায়তা চাইতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) অফিসকক্ষের সামনে যান। এ সময় অফিস সহকারী বাবুল আক্তার মনিরুলকে জানিয়ে দেন, ‘স্যার মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। পরে আসেন।’ এ সময় মনিরুল বিরক্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কিছু কটুকথা বলেন। তখন বাবুল ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উত্তেজিত হয়ে মনিরুল হাতে থাকা ক্রাচ দিয়ে বাবুলকে আঘাত করেন। অন্য একজন কর্মচারী এগিয়ে গিয়ে মনিরুলকে জাপটে ধরলে তাঁর হাত কামড়ে দেন।
এ সময় ওই চত্বরে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী বসে গল্প করছিল। হট্টগোল দেখে তারা প্রতিবন্ধী মনিরুলের পক্ষ নিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে কথা–কাটাকাটিতে জড়ায়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নেজারত শাখায় গিয়ে লাঠিসোঁটা দিয়ে টেবিলে আঘাত করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনকে নেজারত শাখায় আটকে রাখেন কর্মচারীরা। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন ওই চত্বরে। তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দেন। পরে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম অভিভাবকদের ডেকে মুচলেকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বুধবার বিভিন্ন বিষয়ে গণশুনানি হয়। ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি গণশুনানিতে আসেন। তিনি সহায়তা চাইলে কর্মচারী তাঁকে একটু পরে আসতে বলেন। তখন ওই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে ক্রাচ দিয়ে এক কর্মচারীকে আঘাত করেন। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী মব করে কর্মচারীদের ওপর হামলা করে। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকে তাদের অভিভাবকদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে। গণশুনানির দিনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
নেজারত শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহিদুজ্জামান বলেন, ‘১০-১৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের কক্ষে হামলা চালায়। তাদের মধ্যে একজনের হাতে বাঁশ ছিল। সে আমাদের কক্ষের দরজা ও জানালায় আঘাত করে।’
আটক হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী জানায়, তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে থাকার সময় দেখে অসহায় এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কয়েকজন ধরে মারধর করছেন। এগিয়ে গিয়ে জানতে পারে, যাঁরা মারছেন তাঁরা জেলা প্রশাসকের কর্মচারী। তখন এ ঘটনার প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেন। এ জন্য আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল ইসল ম গণশ ন ন মন র ল এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫