সাতছড়িতে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিন
Published: 23rd, May 2025 GMT
সড়কে গাড়িচাপা পড়ে শাবক মারা গেছে। পাশেই শোকাহত মা হনুমান বসে আছে। হনুমানটি নিজেও আহত। এমন বেদনাদায়ক ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মর্মান্তিক এই দৃশ্য মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরের সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্য দিয়ে উদ্যানটির প্রাণীবৈচিত্র্যের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আবারও সামনে এল। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে প্রাণীর মৃত্যু রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট পুরোনো মহাসড়ক। যে সড়কটি চুনারুঘাট উপজেলা সদর হয়ে জেলার মাধবপুর উপজেলা দিয়ে ঢাকা-সিলেট মূল মহাসড়কের সঙ্গে মিশেছে। পুরোনো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটিতেই ঘটছে একের পর এক প্রাণী মৃত্যুর ঘটনা। মঙ্গলবার বিকেলে একটি মুখপোড়া হনুমানের শাবক রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগতির মাইক্রোবাস এটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই হনুমানশাবকটি মারা যায়। সেটির দৃশ্যই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গত পাঁচ বছরে সাতছড়ি সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া মহাসড়কটি ধরে গাড়িচাপায় শতাধিক প্রাণী মারা গেছে। অনেক প্রাণী আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছে। মারা যাওয়া প্রাণীর মধ্যে আছে ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের কিং কোবরা, শঙ্খিনী সাপ, কালনাগিনী সাপ, চশমাপরা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, মায়া হরিণ ও কয়েকটি বানর। পাঁচ বছরেই দুর্ঘটনার কারণে শতাধিক প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে চলা মহাসড়কে গতিনিয়ন্ত্রণ বা নিরাপত্তার ন্যূনতম ব্যবস্থা কার্যকর নেই। বন বিভাগ বারবার সতর্কতা জারি করলেও চালকেরা তা আমলে নিচ্ছেন না। এমনকি বন্য প্রাণী রক্ষায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো—যেমন স্পিডব্রেকার বা গতিরোধক বসানোর প্রস্তাবও সড়ক বিভাগের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। সড়ক বিভাগ বলছে, মহাসড়কে গতিরোধক বসানোর কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু জীববৈচিত্র্যে ভরপুর একটি অভয়ারণ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা কার্যকর থাকা উচিত বা বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করা উচিত, সেটি কেন তাদের বিবেচনায় আসছে না?
এই পরিস্থিতির অবসান জরুরি। বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কে বাধ্যতামূলক গতিনিয়ন্ত্রণ, সচেতনতামূলক প্রচারণা, বন্য প্রাণীর চলাচলের করিডর নির্মাণ এবং নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা এখন সময়ের দাবি। বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে এর জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই পদক্ষেপ নিতে হবে। আরও পাঁচ বছর পর আরও শতাধিক প্রাণীর মৃত্যু ঘটেছে, এমন খবর আমরা শুনতে চাই না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ হন ম ন স তছড়
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।
পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।
সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।
শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।
ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ