দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন। ভারতের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশের স্বার্থকে সংরক্ষণ করবে এমন নিরাপত্তানীতি প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি ভারতের বিকল্প বন্ধু রাষ্ট্র অনুসন্ধানও জরুরি।

আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে আলোচকেরা এ কথাগুলো বলেন। সেমিনারটির আয়োজন করে নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (এনডিজে) নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) এ টি এম জিয়াউল আহসান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি জনগণের জীবনমানের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি স্বাবলম্বী ও নিরাপদ অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।

মূল প্রবন্ধে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বিদেশি প্রভাবমুক্ত রাখা, সশস্ত্র বাহিনীর জাতীয় আনুগত্য নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সন্ত্রাস, মাদক ও অপরাধ দমনের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভারত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু তাদের এখনকার আচরণে তিনি মনে করছেন, ভারতের প্রয়োজন ছিল পাকিস্তান ভাঙা। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বন্ধু খুঁজে বের করতে হবে। যে রকম বন্ধু থাকলে ভারতের চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায়।

এ সময় দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান সব পক্ষকে ঐক্য ধরে রাখার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অনৈক্যের সৃষ্টি হলে কোন সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে, জানি না।

সেমিনারে আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তিতে সক্ষমতার ওপর জোর দেন সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরবর্তী যে যুদ্ধ, সেখানে এআইয়ের ব্যবহার হবে; কোনো মানুষ থাকবে না। বাংলাদেশকেও সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো অধ্যাপক এম এ রশীদ। তিনি বলেন, দেশের সিদ্ধান্ত দেশের জনগণ নিতে পারবে, এমন নিরাপত্তানীতি প্রণয়ন করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বেলায়েত হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলের চিন্তন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরাপত্তানীতি নিয়ে আলোচনা তুলতে হবে।

এনডিজের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এনডিজের সাধারণ সম্পাদক চাকরিচ্যুত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ, সাংবাদিক রেজাউল করিম প্রমুখ। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের পক্ষে বক্তব্য দেন গুলিতে আহত শিক্ষক নেসার উদ্দীন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রণয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। আমি মনে করি—জুলাই সনদ দেশের জনগণের প্রয়োজন নেই। কিছু ব্যক্তি যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বসবাস করতে গেলে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়বেন; তাদের জন্য হয়তো প্রয়োজন আছে।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মামুন, সম্পাদক রিটন

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াত নিষিদ্ধ চান আলাল

হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘এই ধরনের সনদের আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন–একটা পার্লামেন্ট। যেখানে আগামী দিনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। যেই পার্লামেন্ট এই সনদকে বাস্তবায়িত করবে এবং আগামী গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে সক্ষম হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে প্রয়োজন একটি নির্বাচন। যেখানে জনগণ প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে পারবে। আমরা আশা করব, আগামীতে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হবে। এই নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন, জনগণের প্রতিনিধি হবেন; তারাই জুলাই সনদকে সমর্থন করবেন।’’

‘‘আমার দল বিএনপি জুলাই সনদকে সমর্থন করে, আমরাও এটি সমর্থন করতে বাধ্য। কিন্তু, এটার মধ্যে এমন জিনিস ঢোকাবেন না, যেটি নিয়ে আগে ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে আলোচনা হয়নি।’’- যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘পিআর নিয়ে কথা হচ্ছে। দেশের জনগণকে জিজ্ঞেস করেন, কেউ পিআর চিনেও না। পিআর কেউ চায়ও না। আমরা শত বছর ধরে একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আসছি। তারা (পিআর দাবি করা দলগুলো) ব্যক্তির কাছ থেকে, ভোটারের কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে নিয়ে একটা রাজনৈতিক দলের কাছে সমর্পণ করতে চায়। আমরা চাই, বর্তমান যে ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে, সেই ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতে নির্বাচন হয়।’’

হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, ‘‘আমাদের একটা প্রতিবেশী রাষ্ট্র আছে, যারা চায় না বাংলাদেশ স্বনির্ভর হোক। নিজের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষত থাকুক, এটা তারা চায় না। তারা আশ্রয় দিয়েছে মাফিয়া শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা সেখানে বসে কীভাবে বাংলাদেশে নাশকতা করা যায়, সে বিষয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। কলকাতায় তারা অফিস খুলেছেন। আমি তাদেরকে একটা পরামর্শ দেব। শুধু কলকাতা নয়, ভারতের প্রত্যেকটা প্রদেশে আপনারা একটা করে অফিস খুলেন। ভারতের কাছ থেকে সনদ নেন। তারপরে ভারতের রাজনীতিতে আপনারা মিশে যান। বাংলাদেশে আপনাদের কোনো প্রয়োজন নেই।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • ‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৯ দাবি সংবাদকর্মীদের 
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল