মুখ দিয়ে লিখে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন বাহার
Published: 23rd, May 2025 GMT
হাত দিয়ে আমরা সবাই লিখি। বাহার উদ্দিন রায়হান লিখেন মুখ দিয়ে। কারণ, বাহারের এক হাত নেই, আরেক হাত থাকলেও, সেটি আছে কনুই পর্যন্ত। মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে লিখে তিনি কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছেন, বাকিগুলো দিয়েছিলেন শ্রুতিলেখকের সহায়তা নিয়ে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে ২০১৬-১৭ সেশনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে সম্প্রতি সমাবর্তন নিয়েছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পঞ্চম সমাবর্তনের ছবি দেখে যোগাযোগ করি তাঁর সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান জীবনের নানা কথা। বাহার উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার জহির পাড়ায়। ২০০৪ সালের কথা। বাহার তখন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে বছরের ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় দেখতে পান, বাড়ির পাশে বিদ্যুতের খুঁটিতে বসানো ট্রান্সফরমারে একটি ছোট পাখি ঢুকে পড়েছে। সেই পাখিকে দেখার অদম্য নেশা পেয়ে বসে তাঁর। বৈদ্যুতিক তারে হাত দিতেই ঝলসে যায় তাঁর দুই হাত, বুকের কিছু অংশ ও পায়ের তলা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। কেটে ফেলা হয় তাঁর এক হাত ও আরেক হাতের কনুই পর্যন্ত। এরপর ধীরে ধীরে হাত ছাড়াই দৈনন্দিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। গোসল, খাওয়া, পোশাক পরায় অভ্যস্ত তিনি। পারেন মোটরসাইকেল চালাতে, স্কেটিং করতে; এমনকি কম্পিউটার চালাতেও। মুখে কলম আটকে কনুইয়ের সাহায্যে কম্পিউটারে টাইপ করেন। বাহার প্রমাণ করেছেন, কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই তিনি।
চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও চকরিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হন বাহার। এখন থাকেন চট্টগ্রামের খুলশীতে। সেখানে ক্লাউড প্রজেক্ট লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন দুই বছর ধরে।
মায়ের গর্ভে থাকার সময় বাবা মারা যান। মা ক্ষেতখামারে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেছেন। ছোটবেলা থেকে নানার বাড়িতে থাকার সুবাদে লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজের উৎসাহ পেয়েছেন সবার কাছ থেকে। নানা, নানি, মামা, খালাদের উৎসাহ, সাহস, দেখভাল, অর্থনৈতিক সহযোগিতা করার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে বারবার বলেন বাহার। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের অবদানের কথাও অনস্বীকার্য। সবার অনুপ্রেরণা ও মায়ের চেষ্টায় অদম্য বাহার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
বাহার উদ্দিন রায়হান বলেন, ‘জীবনে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। সামাজিকভাবে, চলাফেরায়, লেখাপড়ায়– এমনকি চাকরি ক্ষেত্রেও পদে পদে বাধার মুখে পড়েছি। প্রতিনিয়ত সবাই ভাবেন, হাত নেই বলে হয়তো আমি কাজ করতে পারব না। স্বাভাবিক ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে পেরেছি মনোবলের জোরে। যেহেতু আমাদের দেশে ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবলদের জন্য জীবনযাপন খুব সুবিধার নয়, তাই কষ্ট করে এতদূর এসেছি। বারবার নিজেকে প্রমাণ করতে পরীক্ষা দিতে হয়। তবে আমি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। তবে স্কুলে পড়ার সময় যারা অর্থনৈতিকভাবে বেশি স্বাবলম্বী তারা আমাকে এড়িয়ে চলত। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়েছে। দারুণ সময় কেটেছে ওদের সঙ্গে। শিক্ষকদের স্নেহাশিস পেয়েছি, যাতে লেখাপড়ায় মনোবল ধরে রাখতে পেরেছি।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাজ না করেই অর্ধেক টাকা তুলে নেন ঠিকাদার
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এমনকি ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে সদর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর এলাকার কর্মসূচিতে শতাধিক মানুষ অংশ নেন। তারা সড়কটির কাজ যথাযথভাবে করার দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সূর্য নারায়ণপুরের আব্দুর রশিদের বাড়ি থেকে বক্তারটেক পর্যন্ত ২৮০ ফুট দীর্ঘ রাস্তাটিতে ইট বিছিয়ে (সলিং) ৮ ফুট চওড়া করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অধীনে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের আওতায় এ কাজের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সদর ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আল আমিন পালোয়ান এ কাজের ঠিকাদার। কিন্তু এলাকাবাসী সড়কটিতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার ও বালু না দিয়েই কাজ শুরুর অভিযোগ করেছেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আল আমিন পালোয়ান একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যে কারণে গত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় এসে ওই সড়কের কাজ না করেই অর্ধেক টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। নিম্নমানের সামগ্রী বসানোর প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির গুজব ছড়িয়েছেন তিনি। এমনকি নানা মাধ্যমে আল আমিন হুমকিও দিচ্ছেন।
সেখানে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার কাজল, মো. রানা শেখ প্রমুখ। তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল আমিন পালোয়ানের নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।
কাপাসিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. তামান্না তাস্নীম বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।