সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ অর্থনৈতিক অঞ্চলই খালি পড়ে আছে—মহিষের বাথান হয়ে গেছে। অর্থাৎ সেখানে মহিষ চরে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে জমি অধিগ্রহণ করে রাখা হয়েছে, কিন্তু বিনিয়োগকারী সেখানে যাচ্ছেন না। এর অন্যতম প্রধান কারণ বন্দরের কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা নেই।

আজ রোববার রাজধানীর পল্টনে পুঁজিবাজার প্রতিবেদকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত এক সংলাপে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ‘সিএমজেএফ টক উইথ শফিকুল আলম’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

অনুষ্ঠানে শফিকুল আলম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যে সময় শেষ হবে, সেই সময় বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। এটার একটা কারণ হচ্ছে, সরকার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের বড় ধরনের সংস্কার (ডিপ রিফর্ম) করতে চাচ্ছে। বিশ্বের সব বড় কোম্পানি যেন চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা করতে পারে, সেটাই সরকারের লক্ষ্য।

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আমরা কাউকে দিচ্ছি না। বন্দরের টার্মিনালের উন্নত ব্যবস্থাপনা যেন নিশ্চিত হয় এবং সেখানে বিনিয়োগ আসে, আমরা সেই কাজটি করছি। এখন পর্যন্ত ৩০০ কোটি ডলারের (৩ বিলিয়ন) নিশ্চয়তা পেয়েছি। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে তারা (বিদেশি কোম্পানি) এই অর্থ বিনিয়োগ করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভালো গন্তব্য বিশ্বে আর নেই বলে দাবি করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, সে জন্য প্রধান উপদেষ্টা চাচ্ছেন, বাংলাদেশকে উৎপাদনকেন্দ্র (ম্যানুফ্যাকচারিং হাব) হিসেবে তৈরি করতে। কিন্তু এর মূল শর্ত হচ্ছে, সবার আগে বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘বন্দরকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি আমাদের কাছে নেই। আমাদের সে–বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই, দক্ষতাও নেই। সে জন্য বিদেশের বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, এপি মোলার মেয়ার্সক, পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। তারা এলে আমাদের বন্দরের দক্ষতা বাড়বে।’

প্রেস সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে রাজস্ব আয় বাড়ানো। সে লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই ভাগ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা রাজস্ব আয় বাড়াতে পারিনি বলে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াতে পারছি না। আপনি যদি শেখ হাসিনার আমলটা দেখেন, তাহলে দেখবেন, গত এক দশকের মধ্যে বিধবা ভাতা ৫০০ টাকাই রয়ে গেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম যখন ৭০ টাকা ছিল, তখন একজন ৫০০ টাকা ভাতা পেতেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ১২০ টাকা, তখনো ভাতা ছিল ৫০০ টাকা। সুতরাং রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই।’

আগামী জুন মাসে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘চীনের বিনিয়োগকারীরা লো কস্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে পৃথিবীতে সেরা। তারা এত দক্ষ যে ইউরোপীয় বা উত্তর আমেরিকানরা চীনাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। ফলে চীনারা বাংলাদেশে এলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জোড়া গোলে মেসির রেকর্ড, বড় জয় মায়ামির

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর আবারও চেনা ছন্দে ফিরেছেন লিওনেল মেসি। মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। বৃহস্পতিবার ম্যাসাচুসেটসের জিলেট স্টেডিয়ামে নিউ ইংল্যান্ড রেভলুশনের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ২-১ গোলের জয়ে জোড়া গোল করে গড়েছেন ইতিহাস।

৩৮ বছর বয়সী মেসি এখন এমএলএস ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড়, যিনি টানা চার ম্যাচে করেছেন একাধিক গোল। অর্থাৎ চার ম্যাচে করেছেন ঠিক আটটি গোল! ১৯৯৬ সালে শুরু হওয়া এমএলএসের ইতিহাসে আগে এমন কিছু কখনও দেখা যায়নি।

মেসির গোল উৎসব শুরু হয়েছিল মে মাসের শেষে, মন্ট্রিয়ালের বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয়ে। এরপর কলম্বাসের বিপক্ষে ৫-১ ব্যবধানে জয় পাওয়া ম্যাচেও জোড়া গোল করেছিলেন। এরপর ক্লাব বিশ্বকাপের কারণে কিছুদিন বিরতি। বিশ্বকাপে চার ম্যাচে মাত্র এক গোল করলেও ফিরে এসেই আবারও এমএলএসে জ্বলে উঠেছেন তিনি।

ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে ফিরে ফের মন্ট্রিয়ালের বিপক্ষে মাঠে নামেন মেসি। সে ম্যাচে ৪-১ গোলের জয়ে আরও দুটি গোল করে ইতিহাস গড়ার মঞ্চ তৈরি করেন। আর সর্বশেষ নিউ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করে গড়লেন অনন্য এক রেকর্ড।

জিলেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের ২৭ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের ভুলের সুযোগ নিয়ে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন মেসি। ১১ মিনিট পর সার্জিও বুসকেটসের দুর্দান্ত লং পাস থেকে গতিময় দৌড়ে গিয়ে বাঁ পায়ের বাঁকানো শটে দ্বিতীয়বারের মতো পরাস্ত করেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক আলিয়াজ ইভাচিচকে।

এ ম্যাচে মায়ামির জয়ের পেছনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন গোলরক্ষক অস্কার উস্তারি। ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেভ করেন তিনি। তবে ৭৯ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার কার্লেস গিল তার বাঁধা ভেঙে একটি গোল শোধ করেন। তাদেও অ্যালেনদের কাছ থেকে বল কাড়ার পর দুর্দান্ত শটে ব্যবধান কমান গিল।

এই জয়ে পূর্বাঞ্চলীয় কনফারেন্সের পয়েন্ট তালিকায় ছয় থেকে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে ইন্টার মায়ামি। তাদের পয়েন্ট এখন ৩৫, শীর্ষে থাকা এফসি সিনসিনাতির চেয়ে ৭ পয়েন্ট কম। তবে ক্লাব বিশ্বকাপ অংশগ্রহণের কারণে এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচ কম খেলেছে মায়ামি।

চলতি এমএলএস মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে মেসির গোল ১৪টি। লিগের শীর্ষ গোলদাতা স্যাম সারিজের চেয়ে মাত্র দুই গোল পিছিয়ে আছেন তিনি, যদিও সারিজ খেলেছেন ছয় ম্যাচ বেশি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ