দৃশ্যত এটি ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে একটি রুদ্ধদ্বার নিয়মিত বৈঠক।

তবে ২০ মের এ বৈঠক এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন সরকারের ভেতরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত এমন একাধিক কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে জানান, ঢাকায় ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার এক দ্বন্দ্ব চলছে। এ উত্তেজনাকে দেশের সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একধরনের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই টানাপোড়েন এখন ইউনূসের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ৯ মাস আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে অপসারণের পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনামলের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা সংঘটনের অভিযোগ উঠেছে।

ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন—এমন গুজব ছড়ানোর মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে গতকাল শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের আরেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি পদত্যাগের কথা বলেননি, অন্য উপদেষ্টারাও আছেন, আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি।’

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার একটি বৈঠকের পর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বক্তব্য দেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অচলাবস্থা এখনো কাটেনি।

দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচনী গণতন্ত্রে ফেরার ক্ষেত্রে দেশের অপরিপক্ব প্রচেষ্টার ওপর এর কী প্রভাব, তা খতিয়ে দেখা যাক:

সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে কেন

২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। গণবিক্ষোভের জের ধরে পরের মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। সেই সময় বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে, বহু থানায় পুলিশ সদস্যরা অনুপস্থিত থাকেন ও জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মোতায়েন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

যদিও গত আগস্টের মাঝামাঝি পুলিশ আবার কার্যক্রম শুরু করেছে, তারপরও দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে বেসামরিক-সামরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখা হয়েছে।

গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খোলাখুলি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, সেনাবাহিনীকে দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক কাজে নিয়োজিত রাখলে তা দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে পারে।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল ওয়াকার ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে উচ্চপর্যায়ের এক সভায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব, অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’ সেনাপ্রধান এই বক্তব্য এমন এক ভাষণে দেন, যেখানে ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি মিশন থেকেও কর্মকর্তারা এতে ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি অংশ নেন। সবাই পূর্ণাঙ্গ সামরিক পোশাকে ছিলেন, যা ঐক্য ও সংকল্পের বার্তা দেয়।

শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। এরপরই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের অনির্ধারিত বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি যে উনি পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট সরক র র আম দ র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

ভোটের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২০৮০ কোটি টাকা

জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের  জন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে প্রয়োজন হলে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। 
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ‘নির্বাচন’ খাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার 
৯২২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। এর ভিত্তিতি দুই দফা নির্বাচন কমিশন, অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার পর এ খাতে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। নির্বাচন পরিচালনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাবদ খরচ ‘নির্বাচন’ খাত থেকে নির্বাহ করা হয়। 
কর্মকর্তারা আরও বলেন, এবার প্রায় সব ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম রাখা হচ্ছে। তবে প্রয়োজন হলে পরবর্তী সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। 
এ ছাড়া নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য অন্য খাত থেকেও টাকা এনে খরচ করা যেতে পারে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনুকূলে মোট ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের মোট  বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেটে  বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। তবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কারণে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা করা হয়।  ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচন না থাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খাতে ব্যয় হয় মাত্র ৮৭৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ জানুয়ারি নির্বাচনে ২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার ব্যয়  ধরা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, বাজেটে বরাদ্দ যাই থাক না কেন, প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলেই সরকার টাকা দেবে। কারণ, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে কমিশন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের খরচ যা হবে, তা সরকারকে  দিতে হবে।  
নির্বাচনী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ম্যান্ডেট হাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর স্থানীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরকারকে চাহিদা দেবে। সরকারি সে চাহিদার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সুতরাং সরকারি চাহিদার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তার পক্ষে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। 
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জুন মাস আগামী অর্থবছরের শেষ মাস। 

অর্থ মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ‘নির্বাচন’ খাতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার ৯২১ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকার চাহিদা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাতে   প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দরকার বলা হয়েছিল। স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এ ছাড়া ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র খাতে ৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার চাহিদা ছিল।
গত ১৬ এপ্রিল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার ঘোষিত সময়সীমা ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির অন্যতম বষয় হলো প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। ভোটের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ঢাকনা, ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট পেপার, অমোচনীয় কালি, কয়েক ধরনের সিল, গালা, স্ট্যাম্প প্যাড, কালি, থলে, ১৭ ধরনের খাম, কাগজ, কলম, ছুরি, মোমবাতি, দেশলাইসহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ব্যালট পেপারের কাগজ সাধারণত নেওয়া হয় রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে। ভোটের বেশ আগেই তাদের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপার ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়। এর বাইরে অনেক সামগ্রী কিনতে হয় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে। এ কারণে কিছুটা লম্বা সময় প্রয়োজন হয় কেনাকাটায়।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, উপজেলা-জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ, উপনির্বাচনসহ অন্তত আড়াই হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২০৮০ কোটি টাকা
  • সোমবার থেকে আমদানি-রপ্তানির সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা
  • কর্মবিরতিতে অচলাবস্থায় এনবিআর: বিজিবি-পুলিশ মোতায়েন
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক ১১ সদস্য ট্রাইব্যুনালে
  • ঢাকাসহ সারা দেশে সাত দিনের যৌথ অভিযানে আটক ২৫৮