উত্তর প্রদেশে মুসলিম তরুণদের ওপর আবার ‘গোরক্ষক’ বাহিনীর হামলা, বেধম মারধর
Published: 26th, May 2025 GMT
গাড়িতে গরুর মাংস বহন করা হচ্ছে, এমন সন্দেহে ভারতের উত্তর প্রদেশে চারজন মুসলিম তরুণকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করেছেন সেখানকার তথাকথিত ‘গোরক্ষক’ বাহিনীর লোকজন। আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
গত শনিবার সকালে উত্তর প্রদেশের আলিগড় জেলায় এ ঘটনা ঘটে। আহত তরুণেরাও ওই জেলার আটরাউলি শহরের বাসিন্দা। তাঁদের নাম আরবাজ, আকিল, কাদিম ও মুন্না খান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওই তরুণদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে হামলাকারীরা তাঁদের জামাকাপড় খুলে প্রায় নগ্ন করে পেটাচ্ছেন। মারধর করার সময় কাস্তে বা কাটারির মতো ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোঁটা, রড এবং ইট ব্যবহার করা হয়েছিল।
আহত তরুণদের একজন আকিলের বাবা সালিম খান স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভিডিও দেখলেই বুঝবেন, কীভাবে ওদের মারা হয়েছে, আমার সেটা বর্ণনা করার ভাষা নেই!’ আকিল এখন আলিগড় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে বলেও তিনি জানান তিনি।
হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে আলিগড় পুলিশ। তবে তারা এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। তবে গাড়িতে যে মাংস ছিল, তার নমুনা সংগ্রহ করে সেটি কীসের মাংস, তা পরীক্ষা-করাসহ ‘সব অভিযোগে’র তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
কয়েক বছর আগেও বিশেষত উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই ‘গোরক্ষক’।
বাহিনীগুলোর হামলা প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গরুর মাংস বহন করার অভিযোগে তাদের হাতে অনেক মুসলিম পশু খামারি ও ব্যবসায়ী প্রাণও হারিয়েছেন।
এসব বাহিনীতে মূলত বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী শক্তির সদস্যরাই থাকতেন। পুলিশ ও প্রশাসন তাঁদের ঢালাও মদদ দিত বলে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে। তবে সম্প্রতি তাঁদের কার্যকলাপে কিছুটা ভাটা পড়লেও আলিগড়ের ঘটনা বুঝিয়ে দিল, গোরক্ষকেরা এখনো হারিয়ে যাননি।
ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
সালিম খান পুলিশের কাছে যে এফআইআর করেছেন, তাতে বলা হয়েছে তাঁর ছেলে আকিলসহ চারজন আলিগড় শহরের ‘আল আম্মার ফ্রোজেন ফুডস মিট ফ্যাক্টরি’ থেকে মাংস কিনে নিজেদের পিকআপ ট্রাকে করে ফিরছিলেন। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁদের গাড়িটি সাধু আশ্রম মোড়ের কাছে থামানো হয়। জায়গাটি হরদুয়াগঞ্জ থানার খুব কাছেই।
গোরক্ষক বাহিনীর লোকজন দাবি করেন, তাঁদের কাছে খবর আছে ওই গাড়িতে করে গরুর মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সালিম খানের অভিযোগ অনুযায়ী, চার তরুণকে গাড়ি থেকে টেনে নামানো হয় এবং তাঁদের মাংস কেনার রশিদও কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়।
গরুর খামার.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস