টেলি সুমন খুনের বদলায় বিএনপি নেতা কামরুলকে হত্যা, অংশ নেন চারজন
Published: 26th, May 2025 GMT
গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মার্কেটে দোকান বরাদ্দ নেওয়া, বাড্ডা এলাকায় কেব্ল টিভি–সংযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্থানীয় দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপি নেতা কামরুল আহসানকে (সাধন) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান বাড্ডার রবিন–ডালিম–মাহবুব গ্রুপের মাহবুবের মামা। তাঁকে গুলি করেছে বাড্ডার আরেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মেহেদী গ্রুপের অনুসারীরা। তাঁরা গত বৃহস্পতিবারও তাঁকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে।
রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় গতকাল রোববার রাতে গুলি করে হত্যা করা হয় কামরুল আহসানকে। এ ঘটনায় কামরুলের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। কামরুল আহসান হত্যার সঙ্গে জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুই আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানীর গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে গত ২১ মার্চ সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হত্যা মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির একটি সূত্র বলছে, সুমন মিয়া ছিলেন মেহেদী গ্রুপের অনুসারী। তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছিল রবিন, ডালিম ও মাহবুব গ্রুপের লোকেরা। ব্যবসা, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এই হত্যার প্রতিশোধ নিতেও তাঁকে হত্যা করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো.
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, গত চার মাসে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) শুধু রাজধানীতে ১৩৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ৩৮টি খুন হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে।
হত্যায় অংশ নেন চার যুবক
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে রোববার রাত ১০টার দিকে গুলশান লেক পাড়ের পাশে গুদারাঘাট এলাকার একটি চায়ের দোকানের সামনে যান কামরুল আহসান। তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে চেয়ারে বসে কথা বলছিলেন তিনি। গুলশান লেক পাড় থেকে হেঁটে রাত ঠিক ১০টা ৬ মিনিটে তাঁদের সামনে আসেন দুই যুবক। কোমর থেকে পিস্তল বের করে কামরুলের খুব কাছ থেকে গুলি করেন তাঁরা। পরে দৌড়ে একটি গলি দিয়ে লিংক রোডের দিকে চলে যান হামলাকারীরা। ঘটনাস্থল ও আশপাশের কয়েকটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুজন গুলি করলেও তাঁদের সঙ্গে আরও দুজনকে দেখা গেছে। ঘটনার কয়েক মিনিট আগে কামরুল আহসান যে দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন, সেটির পাশের একটি গলিতে ওই চার যুবককে একসঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। পরে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান তাঁরা।
ঘটনার সময় কামরুলের পাশে বসা ছিলেন জাকির হোসেন রূপক, আবুল হোসেন ও কামরুল ইসলাম বাবলু নামের তিন ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিন ওই দোকানের সামনে বসে আড্ডায় দিই। গতকালও (রোববার রাত) আড্ডা দিতে বসেছিলাম। পেছন থেকে দুই যুবক এসে কামরুলকে গুলি করে।’
বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন বিএনপি নেতা কামরুল আহসান। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ২০ বছর ধরে বাড্ডা এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি আবাসন নির্মাণের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন। কয়েক মাস আগে গুলশানে ডিএনসিসি মার্কেটে একটি দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন। কামরুল আহসানের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে কোনো বিরোধের কথা তাঁর স্বামী তাঁকে কখনো জানায়নি। রোববার সারা দিন তিনি গুলশানে ছিলেন। দুপুরে খাবার খেতে আসার কথা ছিল। ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি। পরে তাঁকে ফোন করে খেয়ে নিতে বলেন।
দিলরুবা আক্তার বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসায় আসেন তাঁর স্বামী। তখন তিনি নামাজ পড়ছিলেন। বাসায় আসার পর তাঁর মুঠোফোনে একটা কল আসে। তিনি আবার বেরিয়ে যান। বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই খবর পান, তাঁর স্বামীকে গুলি করা হয়েছে।
বিদেশ থেকে চাঁদাবাজির নেতৃত্ব
বাড্ডা এলাকা রাজধানীর একটি বর্ধিষ্ণু অঞ্চল। গুলশান-বারিধারা সংলগ্ন এই এলাকায় গড়ে উঠেছে আবাসন ব্যবসা, আসবাব ও পোশাক কারখানা, খাবারের দোকান, রিকশার গ্যারেজসহ নানা ধরনের ব্যবসা। এখানে রয়েছে ইন্টারনেট সেবাদাতা, কেব্ল টিভি সংযোগদাতা এবং এলপিজি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও।
তবে এই ব্যবসাবান্ধব এলাকার আড়ালে সক্রিয় রয়েছে অন্তত তিনটি অপরাধী চক্র—জিসান গ্রুপ, মেহেদী গ্রুপ ও রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপ। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদের সদস্য সংখ্যা অন্তত ৩৫, যাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। এঁদের মূল কাজ চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল। ভাড়ায় মানুষ খুন করে এসব চক্রের সদস্যরা। এঁদের মধ্যে জিসান দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের একজন। তিনি দুবাই থেকে নিজের চক্র পরিচালনা করছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, মেহেদী গ্রুপের মেহেদী থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আর রবিন-ডালিম-মাহবুব গ্রুপের রবিন, ডালিম ও মাহবুব থাকেন মালয়েশিয়ায়।
পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের সঙ্গে মিলেমিশে চাঁদাবাজি করেন এই চক্রগুলোর সদস্যরা। এসব অবৈধ টাকার ভাগ যায় রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। তাই খুনের ঘটনা বন্ধ হয় না। আবার রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও প্রতিপক্ষের কাউকে হত্যা করতে এদের কাজে লাগিয়ে থাকেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হব ব গ র প প রথম আল ক ল ইসল ম র স মন র জন ত ত র বল এল ক য় র বব র হত য র তদন ত ব এনপ র একট ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যার দাবি নেতানিয়াহুর
গাজা হামাসের প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বুধবার ইসরায়েলের পার্লামেন্টে (নেসেট) এ কথা বলেন তিনি। তবে সিনওয়ারের মৃত্যু নিয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার পরিকল্পনাকারী ও হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ছোট ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ার। ২০২৪ সালের অক্টোবরে গাজার রাফা এলাকায় ইয়াহিয়া সিনওয়ারও ইসরায়েলি সেনাদের হাতে প্রাণ হারান। তাঁর মৃত্যুর পর মোহাম্মদ সিনওয়ার গাজায় হামাসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।
মোহাম্মদ সিনওয়ারের অবস্থান নিশানা করে চলতি মাসে দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে হামলা চালায় ইসরায়েল। গত ২১ মে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, খুব সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। বুধবার নেসেটে নেতানিয়াহু বলেন, মোহাম্মদ সিনওয়ারকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ২০ মাসে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে নিহত হামাস নেতাদের নামও তুলে ধরেন তিনি।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘গত দুই দিনে আমরা হামাসের পুরোপুরি পরাজয়ের দিকে একটি নাটকীয় মোড় দেখতে পেয়েছি।’ ইসরায়েল এখন গাজায় ‘খাদ্য বিতরণের নিয়ন্ত্রণও নিচ্ছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এখানে তিনি গাজায় নতুন ত্রাণ সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংগঠন তা পরিচালনা করছে।
নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে যখন ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা তীব্রতর করেছে। চলতি বছরের শুরুতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ থেকে উপত্যকাটিতে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলেছে, হামাসের শাসন ও সামরিক ক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজায় বন্দী থাকা আটকদের মুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্ব ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। সেদিন ২৫০ এরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যান হামাস যোদ্ধারা।
হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজায় পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলে হামলার মুখে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি স্থানচ্যুত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, নিহতদের অধিকাংশই নিরীহ নাগরিক। কতজন যোদ্ধা মারা গেছে, সে বিষয়ে তারা কোনো তথ্য দেননি। ইসরায়েলের দাবি, তারা লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।