আন্দামানের আদিম জনজাতি জারোয়াদের ভারতের ভোটার করা হচ্ছে
Published: 10th, January 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের যেসব ছোট দ্বীপে আদিম জনজাতি বসবাস করছে, তাদের অন্যতম হলো জারোয়া সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের খুব কমসংখ্যক সদস্যই জীবিত আছেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনকে এই সপ্তাহে ভারতের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আন্দামান–নিকোবর প্রশাসনের মুখ্য সচিব চন্দ্রভূষণ কুমার দক্ষিণ আন্দামান জেলার জিরকাটাঙ্গের জারোয়া এলাকায় ভোটারদের পরিচয়পত্র বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
জারোয়ারা প্রায় অবলুপ্ত একটি জনজাতি। বছর ৫০ আগে তাদের খবর পান সরকারি কর্মকর্তা ও নৃতত্ত্ববিদেরা। বর্তমানে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত সরকার। আন্দামানের দক্ষিণ ও মধ্য উপকূলে যে অংশে এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা বসবাস করেন, সে অঞ্চলের মধ্যে নাগরিক সমাজের মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাঁদের নানা সাহায্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। ওই অঞ্চলে এক হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি অঞ্চলে শহরের মানুষ ও পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জারোয়ারা আফ্রিকা থেকে আসা একটি অর্ধ-যাযাবর সম্প্রদায়, যারা পুরোপুরি প্রকৃতি ও বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। কমতে কমতে বর্তমানে জারোয়াদের সংখ্যা মাত্র কয়েক শতে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে জারোয়াদের একটি অংশের লোকজন পর্যটকদের সঙ্গে সীমিত স্তরে কথাবার্তা বলছেন, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ছোটখাটো জিনিসপত্র বিনিময় করছেন, ওষুধপত্র ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সাহায্য নিচ্ছেন এবং কেউ কেউ তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলেও পাঠাচ্ছেন।
ভারত সরকারের এখন লক্ষ্য—একদিকে জারোয়ারা যাতে নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায় তা দেখা, অন্যদিকে সীমিত আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা। সে লক্ষ্যেই নিয়ন্ত্রিত আকারে তাদের ভোটাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ আন্দামান জেলার নির্বাচনী আধিকারিক অর্জুন শর্মা।
অর্জুন শর্মা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘জারোয়া সমাজের যে বিশেষ ধরনের পরিচয় রয়েছে, তা রক্ষা করার পাশাপাশি, যাবতীয় গোপনীয়তা বজায় রাখতে আমরা একটি সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তাদের দৈনন্দিন জীবনে সামান্যতম হস্তক্ষেপ না করে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার সম্পর্কে সর্বোচ্চ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা তাদের ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত করছি। এটি গণতান্ত্রিক অর্জনের লক্ষ্যে একটি বড় সাফল্য বলে মনে করা যেতে পারে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় দিনে সেন্ট মার্টিন গেলেন আরও ১ হাজার ১৯৪ পর্যটক
কক্সবাজারে জাহাজ চলাচল শুরুর পর দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার তিনটি জাহাজে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে গেলেন আরও ১ হাজার ১৯৪ জন পর্যটক। গতকাল সোমবার প্রথম দিন ভ্রমণে গেছেন ১ হাজার ১৭৪ জন। দৈনিক ভ্রমণের অনুমতি আছে দুই হাজার জনের।
আজ সকাল সাতটায় শহরের নুনিয়াছাটা বিআইডব্লিউটিএ-জেটিঘাট থেকে পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে যাত্রা করে তিনটি জাহাজ এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ। ১২০ কিলোমিটারের গভীর সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে জাহাজগুলো সেন্ট মার্টিন জেটিঘাটে পৌঁছায় বেলা দেড়টায়। বেলা তিনটার দিকে আগের দিনে যাওয়া পর্যটকদের নিয়ে জাহাজগুলো পুনরায় কক্সবাজার ফিরে আসবে। এভাবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ ও রাত যাপনের সুযোগ পাচ্ছেন।
জাহাজমালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের’ সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের পর্যটক বেড়েছে মাত্র ২০ জন। আজও ১ হাজার ১৯৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন গেছে। পর্যটকের সংখ্যা না বাড়লে জাহাজমালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল—সরকার নির্ধারিত দৈনিক দুই হাজার পর্যটক পাওয়া যাবে। এখন প্রতিদিন ৮০০ জন কম হচ্ছে। গত বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাসে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করেছিলেন ১ লাখ ১০ হাজারের মতো।
হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক, একটি জাহাজের ব্যবস্থাপক ও কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যটকদের ভ্রমণে আসতে নিরুৎসাহিত করছে। অনেকে ভ্রমণে আসার হোটেলকক্ষ অগ্রিম বুকিং এবং জাহাজের টিকিট বাতিল করছেন।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু রাত যাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকেরা যেতে উৎসাহিত হননি। জাহাজও চলাচল করেনি।
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপ ভ্রমণ করতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করা যাবে না। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তা ছাড়াও সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল, পলিথিন বহন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক (যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনি প্যাক, পানির প্লাস্টিক বোতল) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনেই পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে যেতে হচ্ছে। টিকিটে কিউআর কোড না থাকলে জাহাজ মালিককে জরিমানা করা হচ্ছে। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। জাহাজে ওঠার আগে যাত্রীরা সঙ্গে করে প্লাস্টিক, পলিথিন নিয়ে যাচ্ছেন কি না, তা–ও তদারকি হচ্ছে। সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, জাহাজে সেন্ট মার্টিন যাতায়াত এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।