এমন একটি শব্দ ভাবুন, যেটিকে প্রায় সব অনুভূতির একক প্রকাশ বলা যেতে পারে। না, ‘ভালোবাসি’ কিংবা ‘দুঃখিত’ নয়। বরং প্রেম, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, সমর্থন, প্রশংসা এমনকি গ্রহণ, প্রত্যাখ্যান বা দ্বিমতের মতো পরস্পরবিরোধী বক্তব্যেও অবলীলায় ব্যবহার করতে পারেন সেই শব্দ। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, ধন্যবাদ।
এই যে শব্দটি খুঁজে পেয়েছেন বলে আপনাকে যে ধন্যবাদ জানানো হলো, এটা প্রশংসাসূচক ধন্যবাদ। এবার উল্লিখিত অন্যান্য অনুভূতির সঙ্গেও মিলিয়ে দেখুন। দেখবেন কী দারুণ মিলে যায়। তবে সন্দেহ নেই, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। একটিমাত্র শব্দ, সহজ ও সরল। কিন্তু কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সর্বাধিক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ লেখক ও দার্শনিক গিলবার্ট কিথ চেস্টারটন ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’কে মানুষের চিন্তার সর্বোচ্চ রূপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি যে ধন্যবাদ তথা কৃতজ্ঞতা হলো চিন্তার সর্বোচ্চ রূপ এবং কৃতজ্ঞতা এমন এক আনন্দ, যা বিস্ময়ে দ্বিগুণ হয়’। অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা থেকে সৃষ্ট আনন্দ কেবল মামুলি আনন্দ মাত্র নয়। এ যেন সত্য, সুন্দর ও মহানুভবতার বিস্ময়কর ও সশ্রদ্ধ অভিজ্ঞতা।
ছোট্ট একটি ধন্যবাদ, একটুখানি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাবোধের প্রভাব বিপুল ও সুদূরপ্রসারী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্য সেবায় ওষুধ শিল্পের লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করার তাগিদ
দেশে স্বাস্থ্য সেবা, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ শিল্পের টেকসই উন্নয়নে যুগোপযোগী নীতিমালা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তা এবং বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও ওষুধ শিল্পের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং নবায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান।
আরো পড়ুন:
অতিরিক্ত হাঁচি হলে শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখা দিতে পারে
রাতে হাসপাতালে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সেমিনারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই (অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস) শিল্পে পিছিয়ে থাকাকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি। পাশাপাশি, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ শিল্পের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতাকে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মেডিকেল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুগোপযোগী একটি নীতিমালা বাস্তবায়ন না করা গেলে দেশে মেডিকেল যন্ত্রপাতি শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা এবং ইকো-সিস্টেম উন্নয়নে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এপিআই শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে ৪৭টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়ে। যা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে। এই শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর আহ্বান জানান তিনি।
লাইসেন্সিং প্রক্রিয় সহজ করা না গেলে বেসরকারি খাত স্বাস্থ্য সেবা, মেডিকেল ইকুয়িপমেন্টস এবং ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যাবে না বলে মনে করেন ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মো. আকরামুল ইসলাম।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তার দায়িত্ব দ্রুত এবং যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে তার সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত কাজে কিছু সময় লেগে যায়, ইচ্ছকৃত বিলম্ব করা হয় না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন,ওষুধ শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চেষ্টা রয়েছে অন্তত ৩ বছর মেয়াদের জন্য লাইসেন্স প্রদানের।
পাশাপাশি, ওষুধ শিল্প এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে সরকারের কঠোর নজরদারির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের স্থানীয় শিল্প স্থাপন এবং আমদানি নির্ভরতা হ্রাসসহ গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেন স্বাস্থ্য সচিব।
দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে মো. সাইদুর রহমান বলেন, সরকারের একার পক্ষে সব নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয় জরুরি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)–এর মহাপরিচালক গাজী এ কে এম ফজলুল হক জানান, মেডিকেল যন্ত্রপাতি শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিডা। যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ এবং পরামর্শের প্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান। তিনি বলেন, “আয় সীমা অনুযায়ী সব নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় যেন রোগীদের সাধ্যের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র প্রশাসক।
এর আগে এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও অবদান ছিল অনেক। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য সেবা খাতে সরকারের বরাদ্দ নগণ্য। স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।”
ঢাকা/নাজমুল/এসবি