এমন একটি শব্দ ভাবুন, যেটিকে প্রায় সব অনুভূতির একক প্রকাশ বলা যেতে পারে। না, ‘ভালোবাসি’ কিংবা ‘দুঃখিত’ নয়। বরং প্রেম, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, সমর্থন, প্রশংসা এমনকি গ্রহণ, প্রত্যাখ্যান বা দ্বিমতের মতো পরস্পরবিরোধী বক্তব্যেও অবলীলায় ব্যবহার করতে পারেন সেই শব্দ। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, ধন্যবাদ।
এই যে শব্দটি খুঁজে পেয়েছেন বলে আপনাকে যে ধন্যবাদ জানানো হলো, এটা প্রশংসাসূচক ধন্যবাদ। এবার উল্লিখিত অন্যান্য অনুভূতির সঙ্গেও মিলিয়ে দেখুন। দেখবেন কী দারুণ মিলে যায়। তবে সন্দেহ নেই, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ‘ধন্যবাদ’ শব্দটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। একটিমাত্র শব্দ, সহজ ও সরল। কিন্তু কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সর্বাধিক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ লেখক ও দার্শনিক গিলবার্ট কিথ চেস্টারটন ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপন’কে মানুষের চিন্তার সর্বোচ্চ রূপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমি মনে করি যে ধন্যবাদ তথা কৃতজ্ঞতা হলো চিন্তার সর্বোচ্চ রূপ এবং কৃতজ্ঞতা এমন এক আনন্দ, যা বিস্ময়ে দ্বিগুণ হয়’। অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা থেকে সৃষ্ট আনন্দ কেবল মামুলি আনন্দ মাত্র নয়। এ যেন সত্য, সুন্দর ও মহানুভবতার বিস্ময়কর ও সশ্রদ্ধ অভিজ্ঞতা।
ছোট্ট একটি ধন্যবাদ, একটুখানি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাবোধের প্রভাব বিপুল ও সুদূরপ্রসারী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাটিং শোধরানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের
ভালো শুরুর পর হুট করেই ছন্দ হারানো। এরপর পথ হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া। আলোর দিশাও খুঁজে না পাওয়া। সবশেষে বিষাদময় সমাপ্তি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের ব্যাটিং চিত্রগুলো প্রায় দিন একই রকম। দুয়েকটি দিন ভালো ক্রিকেট বাদে ব্যাটিংয়ে হাপিত্যেশ সময় কাটাতে হয় বাংলাদেশকে। ব্যাটসম্যানরা যখন ভালো করেন তখন আবার রেকর্ডের পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করা লাগে।
কিন্তু সেই সময় সুখের দিন বর্তমান সময়ে কালেভদ্রে কমই আসছে। ব্যাটিং শোধরানে এখন সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারের পর অধিনায়ক লিটনের কাঠগড়ায় দাঁড় হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
বিশেষ করে মিডল অর্ডারে শামীমের ব্যাখ্যাতীত শটে আউট হওয়ায় চরম মাত্রায় বিরক্ত লিটন। সচরাচর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অধিনায়ক নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে কোনো বার্তা দেন না কিংবা খারাপ করলে তেমন সমালোচনা করেন না। কিন্তু গতকাল চট্টগ্রামে ম্যাচ হারের পর সঞ্চালকের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই লিটন কোনো রাগডাক না রেখেই শামীমকে নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এভাবে, “শামীম হোসেনের ব্যাটিং দেখে আমি খুবই হতাশ। এটা (ব্যাটিং) নিয়ে ভাবতে হবে ওকে; সবসময় শুধু এসেই ব্যাটিং উপভোগ করতে পারবেন না, দায়িত্ব নিতে হবে।”
সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। যে ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাটিংয়ে ভুল শুধরানো। আগের রাতে ম্যাচ খেলে আজ সারাদিন বিশ্রামে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যেই সিরিজেও ব্যাটিং একদমই ভালো হয়নি। প্রতিটি ম্যাচই শেষ মুহূর্তে গিয়ে জিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে। কিন্তু সব সময়ই শেষেও ভালো হবে সেই নিশ্চয়তা নেই। যেমনটা গতকাল হয়েছিল সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বের ঘাটতি আছে, নিবেদনে কমতি আছে বলে মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান।
রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিয়মিতই ব্যাটিং খারাপ করছি। অথচ ব্যাটিংয়ে গভীরে গিয়ে কাজ করবে এমন কাউকে আমরা নিয়োগ দিচ্ছি না। তাতে তো ক্ষতিটা ব্যাটসম্যানদের আরো বেশি হচ্ছে। তারা যতক্ষণ না পর্যন্ত সুক্ষ্ম বিষয়গুলো ধরতে পারবে ততক্ষণ এই ব্যর্থতার মোড়কে আটকে থাকবে।”
এছাড়া ব্যাটসম্যানদেরও শেখার তাড়নার ঘাটতি থাকতে পারে বলে অনুভব হচ্ছে আকরামের, “একই ভুল তারা বারবার করছেন। মনে হচ্ছে, আগের ভুলগুলো শুধরানোর কোনো কাজই তারা করেননি। অথচ তাদের নিজেরও নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে গভীরভাবে কাজ করা উচিত। সব বিসিবি দেবে, সব বিসিবি করবে সেই আশায় বসে থাকলে কিন্তু সীমাবদ্ধতার ভেতরে আটকে যাবে।”
সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করছেন, ব্যাটসম্যানরা খারাপ সময় কাটাচ্ছেন কিন্তু তাদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে না। সেজন্য মাঠে গিয়ে বারবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদেরকে। আশরাফুল বলেছেন, “বারবারই মনে হচ্ছে তারা উইকেট গিফট করে আসছে যেটা আসলে মেনে নেওয়া কঠিন। এটা আসলে প্রায়ই হচ্ছে। শামীম যেটা শেষ ম্যাচে করেছে সেটা কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে করা কঠিন। তবুও হয়েছে। আসলে ক্রিকেটে খারাপ দিন যায়, ভালো দিন আসে। কিন্তু আমাদের খারাপ দিনটাই নিয়মিত আসছে ব্যাটিংয়ে। আশা করছি একটা ভালো ব্যাটিং দুয়েক দিনের মধ্যেই ভালো হবে।”
এই সিরিজের আগে লিটন বলেছিলেন, তারাও চান বিশ্বকাপের আগে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে। প্রথম ম্যাচেই ক্যারিবীয়ানদের চ্যালেঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যাটিং। ২৪ ঘণ্টারও কম সময় পর দ্বিতীয় ম্যাচ। এবার কী ভুল শুধরাতে পারবে লিটন অ্যান্ড কোং?
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন