গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও দোকানপাটে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময়ে চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ এবং দলটির ফরিদপুর বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।

সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে, গত ৫ আগস্টের পর তারাই বিএনপির বড় নেতা সেজে দলটির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আজ সন্ধ্যায় জয়নুল আবেদীন মেসবাহ ও তাঁর সমর্থকেরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার ছিঁড়লে তাদের ধরে পুলিশে দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৈয়দ জয়নুলের লোকজন আমাদের লোকের ওপর হামলা করে। পরে পুলিশ এসে তাদের প্রতিহত করে।’

তবে পাল্টা অভিযোগ করে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ‘আমার লোকজন উপজেলার কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্যালেন্ডার বিলি করছিল। সেলিমুজ্জামান সেলিমের কয়েকজন সমর্থক দলীয় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এটা নিয়ে আমার লোকজনের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে সেলিমুজ্জামানের লোকজন আমার এক সমর্থককে মারধর করে পুলিশে দেয়। খবর পেয়ে আমার আরও লোকজন সেখানে উপস্থিত হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিন্তু এরপর আবার আমার সমর্থকদের দোকান ভাঙচুর করে তারা।’

মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সেলিমুজ্জামান সেলিম ও জয়নুল আবেদীনের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল বলে জানান মুকসুদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ক্যালেন্ডার বিতরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ের উভয় পক্ষের কয়েক শ সমর্থক মুকসুদপুর চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে জড়ো হয়ে। দীর্ঘ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন আহত হন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে পক্ষভুক্ত হলেন মির্জা ফখরুল ও সুব্রত চৌধুরী

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলে ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী। এ–সংক্রান্ত আপিলে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হতে তাঁদের করা পৃথক আবেদন মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস এবং সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠনের আবেদনও মঞ্জুর করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয় পরিবর্তন করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্ট যে রায় দেন, তার বিরুদ্ধে তিনটি আপিল এদিন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক, দুই ও তিন নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

এর আগে হাইকোর্ট পৃথক দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তা বাতিল করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদকসহ চার ব্যক্তি একটি আপিল করেন, যা কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে ছিল। নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে করা পৃথক আপিল যথাক্রমে কার্যতালিকার দুই ও তিন নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন ইন্টারভেনার হওয়ার আবেদন দাখিল করেন। নিজে ইন্টারভেনার হতে আবেদন দাখিল করছেন উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিএনপির পক্ষেও তিনি বলবেন। বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে ইন্টারভেনার হতে আবেদন দাখিল করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ ছাড়া সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠনের ইন্টারভেনার হওয়ার আবেদন দাখিল করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। আবেদন দাখিলের পর আদালত বলেন, আবেদন মঞ্জুর করা হলো।

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, আপিলগুলো মঙ্গলবার শুনানির জন্য কার্যতালিকার শীর্ষে ছিল। তবে সামনে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ রয়েছে, যা ১৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে আপিলগুলোর শুনানি শেষ হবে কি না—এমন প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। আপিলকারী পক্ষের আইনজীবীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুনানি শেষ করা ও লিখিত আকারে তাঁদের বক্তব্য দাখিল করবেন বলে আদালতকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ বুধবার আপিল শুনানির জন্য দিন রেখেছেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ