গোপালগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
Published: 11th, January 2025 GMT
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও দোকানপাটে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময়ে চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকাটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ এবং দলটির ফরিদপুর বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমের পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে, গত ৫ আগস্টের পর তারাই বিএনপির বড় নেতা সেজে দলটির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আজ সন্ধ্যায় জয়নুল আবেদীন মেসবাহ ও তাঁর সমর্থকেরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার ছিঁড়লে তাদের ধরে পুলিশে দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৈয়দ জয়নুলের লোকজন আমাদের লোকের ওপর হামলা করে। পরে পুলিশ এসে তাদের প্রতিহত করে।’
তবে পাল্টা অভিযোগ করে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, ‘আমার লোকজন উপজেলার কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ক্যালেন্ডার বিলি করছিল। সেলিমুজ্জামান সেলিমের কয়েকজন সমর্থক দলীয় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এটা নিয়ে আমার লোকজনের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে সেলিমুজ্জামানের লোকজন আমার এক সমর্থককে মারধর করে পুলিশে দেয়। খবর পেয়ে আমার আরও লোকজন সেখানে উপস্থিত হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিন্তু এরপর আবার আমার সমর্থকদের দোকান ভাঙচুর করে তারা।’
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই সেলিমুজ্জামান সেলিম ও জয়নুল আবেদীনের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল বলে জানান মুকসুদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ক্যালেন্ডার বিতরণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ের উভয় পক্ষের কয়েক শ সমর্থক মুকসুদপুর চৌরঙ্গী মোড়ে গিয়ে জড়ো হয়ে। দীর্ঘ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন আহত হন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাবার ‘কষ্টের মর্ম বুঝে’ ২ মেয়ে এখন বিসিএস ক্যাডার
আবদুল হান্নান পেশায় দিনমজুর। পাঁচ কাঠা জমি আর টিনের ছাপরার একটি ছোট ঘরেই ছয় সদস্যের পরিবারের ঠিকানা। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চলে কোনোরকমে। তবে আর্থিক সংকটের মধ্যেও মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করেননি তিনি। তাঁর স্ত্রী গৃহস্থালি সামলানোর পাশাপাশি সব সময় মেয়েদের পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। অনেক কষ্ট ও সংগ্রামের পথ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত এ দম্পতির দুই মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। মা–বাবা ও ভাই–বোনদের নিয়ে এখন তাঁরা সেই পরিশ্রমের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন।
আবদুল হান্নানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। বিসিএস ক্যাডার হওয়া দুই মেয়ে হলেন সারমিন খাতুন ও খাদিজা খাতুন। ছোট বোন খাদিজা ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। এবার বড় বোন সারমিন ৪৪তম বিসিএসে পশুসম্পদ ক্যাডার পেয়েছেন। দুই বোনের ভাষ্যমতে, তাঁদের এ অবস্থানে আসার পেছনে মায়ের অবদানই সবচেয়ে বেশি।
দুই মেয়ের সাফল্যে মা–বাবার আনন্দ সীমাহীন। বাবা আবদুল হান্নান বলেন, ‘কষ্ট কর্যাছি, মেয়েরা বাপ–মায়ের কষ্টের মর্ম বুঝ্যাছে। তারা সফল হয়্যা দ্যাখিয়্যা দিয়াছে। বাপ–মাকে সম্মানের জাগাতে লিয়া গেছে। গাঁয়ের মানুষ হামারঘে এ্যাখুন অনেক সম্মান দ্যাখায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দ্যায়।’
সারমিন খাতুন ২০০৮ সালে বালিয়াডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ–৫ পান। একই বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে জিপিএ–৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন খাদিজা খাতুন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই দুই বোনের গল্প নিয়ে প্রথম আলোর ‘অদম্য মেধাবী’ সিরিজে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর সারমিন পান প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি এবং খাদিজা পান হামদর্দ লিমিটেডের সহায়তা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগে ভর্তির পর প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তির টাকাই ছিল সারমিন খাতুনের মূল ভরসা। ছোট বোন খাদিজাও ভর্তির সুযোগ করে নেন একই বিভাগে। তখন বৃত্তির টাকা ভাগাভাগি করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন দুই বোন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে সারমিনের জন্য বরাদ্দ সিঙ্গেল সিট ব্যবহার করতেন ছোট বোন খাদিজা খাতুনকে সঙ্গে নিয়ে। একই বিষয়ে পড়ায় দুজনের জন্য আলাদা করে বইপত্র কিনতেও হয়নি।
কঠিন পথ পেরিয়ে বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সারমিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কষ্টের পথ অনেক লম্বা ছিল। প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তির সহায়তা ও মা–বাবার ত্যাগ না থাকলে আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হতো না।’
নিজ বাড়িতে বাবার সঙ্গে বড় মেয়ে সারমিন খাতুন। সম্প্রতি তোলা