আমার এখানে এসে ভণ্ডামি করছেন কেন, প্রশ্ন শাবনূরের
Published: 15th, January 2025 GMT
নব্বই দশকের শুরুতে রুপালি জগতে পা রাখেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। একসময় তাকে নিয়ে স্বপ্নের সুতো বুনতেন অসংখ্য তরুণ। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন তিনি। মাঝে কয়েক সিনেমায় অভিনয়ের ঘোষণা দিলেও সেসব সিনেমার অগ্রগতি পাওয়া যায়নি।
শাবনূর এখন অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করেন। অভিনয়ে না থাকলেও দূর দেশ থেকে ফেসবুকে দেখা দেন এই অভিনেত্রী। কয়েক দিন আগে নিজের বেশ কটি স্থিরচিত্র নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন শাবনূর। এসব ছবি দেখে তার ভক্তদের অনেকে প্রশংসা করেন, কেউ কেউ তার পোশাক নিয়ে সমালোচনাও করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এই অভিনেত্রী।
শাবনূর তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। লেখার শুরুতে এ অভিনেত্রী বলেন, “অনেকে হয়তো জানেন, আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া নিজের মতো করে হ্যান্ডেল করি, কোনো অ্যাডমিন নিয়োগ দেইনি। আমার যখন যেটা ভালো লাগে, নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ বা বিশেষ কোনো আনন্দ-বেদনার বিষয় থাকলে তা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত রয়েছি।”
আরো পড়ুন:
‘তিন বছর বিশ্বাস করতাম আমি মরে গেছি’
এফডিসিতে শুটিং ফেরাতে নানা উদ্যোগ, থাকছে শর্ত
শাবনূরের পোশাক নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “যে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করি, সেগুলো নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এমনকি, কেউ কেউ আমার ড্রেসআপ নিয়েও উদ্ভট প্রশ্ন তুলেন। অস্ট্রেলিয়াতে আমি সচরাচর ক্যাজুয়াল ড্রেস পরতেই অভ্যস্ত এবং এতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর কে কি পরবে সেটাতো তার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার, তাই না!”
বাজে মন্তব্য না করার অনুরোধ জানিয়ে শাবনূর বলেন, “যদি আমার শেয়ারকৃত কোনো কিছু কারো ভালো না লাগে, তবে শালীনতার সঙ্গে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু রিপিটেডলি আজেবাজে মন্তব্য যেন না করেন, তা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে বিনীত অনুরোধ করছি। আর একান্তই যদি আমার একটিভিটিস কারো পছন্দ না হয়, তবে আমাকে ফলো না করলেই পারেন।”
শাবনূরের নাম ভাঙিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে ব্যবসা করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে শাবনূর বলেন, “যারা আমার ওয়ালে এসে বিরূপ মন্তব্য করেন তারা আবার দেখি আমার নামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট খুলে, পেজ চালিয়ে, আমার পোস্ট করা ছবি/ভিডিও নিয়ে ব্যবসা করেন। আমাকে পুঁজি করে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছেন, রমরমা ব্যবসা করছেন, তা করেন; কিন্তু আমার এখানে এসে ভণ্ডামি করছেন কেন? কেনইবা সংঘবদ্ধ হয়ে খারাপ মন্তব্য করে যাচ্ছেন?”
ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে সুচিত্রা সেন পুরোপুরি আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। তার উদাহরণ টেনে সম্প্রতি নেটিজেনদের অনেকে শাবনূরকে আড়ালে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে শাবনূর বলেন, “এদের আবার কেউ কেউ আমাকে আড়ালে চলে যেতে বলেন, হা হা হা…। এই ডিজিটাল যুগে এসেও মানুষ এসব জ্ঞান দেয়। আমি আড়ালে চলে যাব, না প্রকাশ্যে থাকব তা আমি বুঝব।”
কাউকে নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে শ্রদ্ধা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে শাবনূর বলেন, “অন্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-ব্যবহার, কথা বলার ভাষা; এইসব ব্যাপারগুলো আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক শিক্ষার পরিচয় বহন করে। মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আমরা যেন একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। সবাই ভালো থাকবেন।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর করণীয় ৭ কাজ
স্বামীর মৃত্যু এক নারীর জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। তাঁর সঙ্গী, অভিভাবক ও জীবনের অবলম্বন হারানোর শোক ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
কিন্তু ইসলাম এই কঠিন সময়ে একদিকে যেমন স্ত্রীর শোক প্রকাশের সুযোগ দিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি দিয়েছে কিছু নির্দিষ্ট করণীয় ও বিধান, যা তাঁর মর্যাদা রক্ষা করে, সামাজিক নিরাপত্তা দেয় এবং আধ্যাত্মিকভাবে ধৈর্যের পথে পরিচালিত করে।
১. ইদ্দত পালন করাআল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে, তারা চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে (ইদ্দত পালন করবে)।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৪)
এই ইদ্দতকালকে আরবি ভাষায় বলা হয় ‘ইদ্দাতুল অফাতি’ বা মৃত্যুর ইদ্দত। এর সময়কাল হল চার মাস দশ দিন, বা ১৩০ দিন।
ইদ্দত পালনের উদ্দেশ্য হল:
১. স্ত্রীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা নির্ণয় করা,
২. স্বামীর স্মৃতি ও সম্পর্কের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা,
৩. আবেগিক পুনর্গঠন ও সামাজিক স্থিতি নিশ্চিত করা।
ইমাম ইবন কাসির বলেন, “ইদ্দত হচ্ছে এমন একটি সময়, যাতে স্ত্রী মানসিকভাবে শান্ত হয় এবং পরিবার বা সমাজ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারে।” (তাফসিরে ইবন কাসির, সুরা বাকারা ২:২৩৪, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ২০০০ খ্রি.)
২. ইদ্দতের সময় অবস্থানস্ত্রীকে স্বামীর ঘরেই ইদ্দত পালন করতে হবে। হাদিসে এসেছে, “তোমরা নারীদের তাদের ইদ্দতের সময় স্বামীর বাড়ি থেকে বের করো না।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ২৩১০)
অর্থাৎ, স্ত্রীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য ইসলাম চায় সে যেন নিজের পরিচিত পরিবেশে অবস্থান করে। তবে যদি জীবনের নিরাপত্তা বা বৈধ প্রয়োজনে অন্যত্র যেতে হয়, যেমন চিকিৎসা বা আদালতে উপস্থিতি, তাহলে আলেমদের মতে তা অনুমোদিত। (ইবন কুদামা, আল-মুগনি, খণ্ড ৮, পৃ. ১০৫, কায়রো, ১৯৯৭)
আরও পড়ুনইসলামি দাম্পত্যবিধানে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ০৪ নভেম্বর ২০২২৩. শোক পালন করানবীজি (সা.) বলেন, “কোনো নারীর জন্য তার স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশ দিনের বেশি নয়, আর অন্য কারও জন্য তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২৮০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৩৮)
এ-সময় করণীয় হল:
সৌন্দর্যবর্ধক প্রসাধন, রঙিন পোশাক বা অলঙ্কার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা,
সুগন্ধি ব্যবহার না করা,
অপ্রয়োজনে বাইরে না যাওয়া।
এটি কোনো শাস্তি নয়; বরং একটি সম্মানজনক আধ্যাত্মিক শোককাল, যাতে নারী নিজেকে সামলে নিতে পারে এবং সমাজ তাঁর সম্মান রক্ষা করে।
৪. নামাজ, রোজা ও দোয়াস্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হল, তাঁর জন্য দোয়া করা, তার নাজাতের জন্য দান-সদকা করা এবং নেক আমল করা।
কোরআনে আল্লাহ দোয়া শিখিয়েছেন, “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের ও আমাদের পূর্বসূরিদের ক্ষমা করুন, যারা ইমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছে।”(সুরা হাশর, আয়াত: ১০)
অর্থাৎ, মৃত স্বামীর জন্য দোয়া করা, কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াব পৌঁছানো, তার নামে সদকা করা, এসবই স্ত্রীর জন্য উত্তম আমল।
৫. উত্তরাধিকারইসলামে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের ত্যাগ করলে, তোমরা তাদের সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবে, আর তোমরা যদি মারা যাও এবং তাদের সন্তান না থাকে, তাহলে তোমাদের স্ত্রী পাবে এক-চতুর্থাংশ; যদি সন্তান থাকে, তবে পাবে এক-অষ্টমাংশ।” (সুরা নিসা, আয়াত: ১২)
অর্থাৎ, স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর নির্দিষ্ট অংশ আছে। ইমাম কুরতুবি বলেন, “ইসলাম প্রথমবারের মতো নারীর সম্পত্তিতে অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে।” (তাফসিরে কুরতুবি, ৫/১৮৯, কায়রো, ২০০৫ খ্রি.)
আরও পড়ুননারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কী বলে ইসলাম২৮ আগস্ট ২০২৫৬. জীবনের পরবর্তী ধাপইসলাম নারীর জীবনে নতুন সূচনার সুযোগ দেয়। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর বিধবা চাইলে পুনরায় বিয়ে করতে পারেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, “যখন তোমরা নারীদের তালাক দেবে এবং তারা তাদের ইদ্দত পূর্ণ করবে, তখন তোমরা তাদের বাধা দিও না যেন তারা তাদের পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করে।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩২)
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, “ইসলামে বিধবার পুনর্বিবাহ মর্যাদাহানিকর নয়; বরং এটি জীবন পুনর্গঠনের অনুমোদিত উপায়।” (শারহু সহিহ মুসলিম, ৯/২৪১, বৈরুত, ২০০১ খ্রি.)
৭. মানসিক ও সামাজিক সহায়তাইসলাম শুধু বিধান নয়, মানবিক দিকটিকেও গুরুত্ব দেয়। বিধবা নারীর প্রতি সমাজের করুণা, সহানুভূতি ও সহায়তা আল্লাহর কাছে অতি প্রিয় আমল।
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিধবা ও অভাবগ্রস্তদের দেখাশোনা করে, সে সেই ব্যক্তির মতো, যে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে বা সারারাত নামাজ পড়ে ও সারাদিন রোজা রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০০৬)
স্বামীর মৃত্যু এক দুঃসহ পরীক্ষা, কিন্তু ইসলাম এই পরীক্ষাকে ধৈর্যের সুযোগ ও আখিরাতের পুরস্কার হিসেবে দেখায়।
স্ত্রীর করণীয় হল ইদ্দত পালন, শোকের সীমা মানা, দোয়া ও ইবাদতে মনোনিবেশ করা, এবং প্রয়োজনে নতুন জীবনের সূচনা করা। যে স্ত্রী ধৈর্যের সঙ্গে এ বিধানগুলো মেনে চলে, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে উত্তম প্রতিদান, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে বিবাদ মেটাতেন২০ জুন ২০২৫