অমিতাজ রেজার ফিল্ম স্কুল চালুর নেপথ্যে
Published: 6th, February 2025 GMT
নতুন উদ্যোগ নিয়ে আসছেন বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা। আগামী প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রশিক্ষণের জন্য ভার্চ্যুয়াল ফিল্ম স্কুল চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ‘সিনেমা পাঠশালা’ নামের এই ভার্চ্যুয়াল ফিল্ম স্কুল আগামী মার্চে শুরু করবেন। চলচ্চিত্র বানাতে আগ্রহী ব্যক্তিরা এ স্কুলে ভর্তি হতে পারবেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে খবরটি জানিয়েছেন অমিতাভ রেজা।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপনচিত্র ও নাটক বানাচ্ছেন অমিতাভ রেজা। বড় পর্দার জন্য বানিয়েছেন ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রও। সম্প্রতি এই পরিচালকের ‘রিকশা গার্ল’ চলচ্চিত্রও দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ বিষয়ে ক্লাসও করিয়ে থাকেন। কী উদ্দেশ্যে এমন উদ্যেগ নিয়েছেন, তা জানতে চাইলে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য আমি একটা দল বানাতে চাই, যারা চলচ্চিত্র বানাবে। আমি নিজেও শিখতে চাই। আমি যেহেতু এখন দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছি, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ক্লাস নিই, সেটা আর পারব না। তাই ভেবেছি, নির্মাণ বিষয়ে কিছু একটা করি, যেখানে ফিল্মে উদ্যমীরা যুক্ত হবে। পড়ালেখা করবে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করব। আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব, তারা তাদের অভিজ্ঞতা আমাকে জানাবে—এমন ডিজাইনে তারা ফিল্ম মেকিং কোর্স করবে। পরবর্তী সময়ে তারা একটা করে সিনেমা বানানোর জন্য প্রস্তুত হবে। আমি ২০ জন তরুণকে নিয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। তারা সবাই ২০টি করে শর্টফিল্মের জন্য তৈরি হবে। তারপর তারা তাদের মতো করে তহবিল সংগ্রহ করে সেসব ছবি বানাবে। ছবি বানানোর ব্যাপারে তাদের সম্পূর্ণ একটা জার্নির মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
কবে এমনটা ভেবেছেন, তা জানতে চাইলে অমিতাভ বলেন, ‘মাস তিনেক আগে এমনটা ভেবেছিলাম। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এ বছর নতুন কী করব। সেই ভাবনা থেকেই আমার উদ্যোগ সিনেমা পাঠশালা। এটার পরিসর ধীরে ধীরে বড় হবে।’
কথা প্রসঙ্গে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘এখানে তরুণদের আগ্রহটাই আমার কাছে প্রধান। সবার সঙ্গে আমি আলাদাভাবে মিটিং করব। ইন্টারভিউ করব। এর মাধ্যমে তাদের আগ্রহটা বুঝতে চেষ্টা করব। একেবারে নতুনের পাশাপাশি নতুন কেউ কাজ কারছে, তারাও এখানে যুক্ত হতে পারবে।’
অমিতাভ রেজা জানান, ক্লাস শুরু হবে আগামী মার্চে। এই কোর্স সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে এই প্ল্যাটফর্ম। অমিতাভ বলেন, ‘এটা একটা পেশাদার প্রশিক্ষণ। এক ব্যাচে ২০ জনের বেশি থাকবে না। এর মধ্যে ৪০ জনের মতো আবেদন করেছে। বাংলাদেশের বাইরের বাঙালিরাও আবেদন করেছে। অতিথি হিসেবেও কেউ কেউ ক্লাস নেবেন।’
আরও পড়ুন ‘রিকশা গার্ল’ নিয়ে জাপানে অমিতাভ রেজা০২ মার্চ ২০২৪এদিকে অমিতাভ রেজা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এত দিন ধরে আমি যে ছায়ার রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তার নাম সিনেমা। ৩০ বছরের এই যাত্রা আমার জন্য শুধু পেশা নয়, এটা আমার বাড়ি, আমার উন্মাদনা—আমার পৃথিবীকে বোঝার উপায়। গল্প বলা কখনোই শেষ হয় না; এটা একটা অনন্ত পথচলা। আর এখন, এই পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, আমি খুঁজছি কিছু নতুন সহযাত্রী, যারা ছবিতে শ্বাস নেয়, যারা স্বপ্ন দেখে, আর শব্দের গভীরে হারিয়ে যায়। সেই কারণেই আমি শুরু করছি ভার্চ্যুয়াল সিনেমা পাঠশালা। নতুন এই উদ্যোগটি আমি সাজিয়েছি ছয় সপ্তাহের পাইলট অনলাইন কোর্স দিয়ে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত কুয়াকাটা, নেই কাঙ্খিত অগ্রিম বুকিং
‘সাগরকন্যা’ খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সারাবছরই দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা থাকে। তবে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা একটু বেশি দেখা যায়। এই ঈদেও কুয়াকাটায় পর্যটকদের ঢল নামবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তবে প্রতি বছরের তুলনায় অগ্রিম বুকিং কম হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। পর্যটকদের উন্নত সেবা দিতে হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি আবাসিক হোটেল ধোয়া-মোছা, সাজসজ্জাসহ পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির পূর্ব প্রস্তুতি সেরেছে। একসময়ে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম ধরা হলেও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটকে কম-বেশি ভরপুর ছিল থাকে কুয়াকাটা। তবে পুরো রমজান মাসে ৩০ কিলোমিটার সৈকতে একেবারেই ছিল পর্যটকশূন্য। মুক্ত সৈকতে বিচরণ করছে লাল কাঁকড়ার দল; আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের ছোটাছুটি। ট্যুর অপারেটররা বলছেন, ঈদের পর যারা কুয়াকাটা ভ্রমণ করবেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ‘আসল রূপ’ দেখতে পাবে।
কুয়াকাটায় রাত্রিযাপনের জন্য ছোট-বড় ২০০টির বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০ হাজার। তবে লম্বা ছুটির দিনগুলোতে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। ফলে কিছুটা সংকট হতে পারে রাত্রিযাপনের রুমগুলোতে। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এই ঈদে ছুটি বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল প্রতি বছরের চেয়ে পর্যটক বেশি হবে। কিন্তু অগ্রিম বুকিং পেলেও তা গত কয়েক বছরের চেয়ে কম। প্রতিবছর এমন সময়ে প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে যায় আর এ বছর গড়ে বুকিং মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ; এমনটাই নিশ্চিত করেছেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ।
হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের এজিএম আল-আমিন আপন সমকালকে বলেন, ‘ঈদের পর আমরা ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বুকিং নিয়েছি, যাতে পর্যটকরা কুয়াকাটার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন। এরই মধ্যে ৫০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। আশা করছি, বাকি কক্ষ ঈদের পর বুকিং হয়ে যাবে, গত বছর এই সময়ে পরোপুরি বুকিং ছিল সেই তুলনায় কম। পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে ধোয়া-মোছাসহ নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সৈকতের আচার দোকানি রাসেল রুম্মান বলেন, ‘রমজানে পর্যটক না থাকায় বিক্রি ছিল না। প্রতি বছরই ঈদের পর খুব ভালো বিক্রি করি। তবে এ বছর আরও বেশি হবে বলে আশা রাখছি। কারণ, এখন দেশের সব জেলার সঙ্গে কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই সহজ। তাই এক মাস কোনো বিক্রি না হলেও আমরা চিন্তিত নই। কারণ, আশায় আছি, খুব ভালো পর্যটক আসবে কুয়াকাটায়।’
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) সেক্রেটারি জেনারেল জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার পর্যটক আসার সম্ভাবনা আছে। তবে যারা অগ্রিম বুকিং দিয়ে কুয়াকাটায় এ সময়ে আসবেন, তারা সাশ্রয়ীভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম.এ মোতালেব শরীফ বলেন, ঈদকে ঘিরে অগ্রিম বুকিং পাচ্ছেন। তাই সব হোটেলকে নির্দেশ দেওয়া আছে, যাতে কেউ পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা না করেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকদের সমাগম হবে। এটাকে মাথায় রেখে তারা কাজ শুরু করছেন। বিভিন্ন স্থানে টহল, হোটেল-রেস্তোরাঁয় তদারকিসহ সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে তারা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন।