নতুন উদ্যোগ নিয়ে আসছেন বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা। আগামী প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রশিক্ষণের জন্য ভার্চ্যুয়াল ফিল্ম স্কুল চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ‘সিনেমা পাঠশালা’ নামের এই ভার্চ্যুয়াল ফিল্ম স্কুল আগামী মার্চে শুরু করবেন। চলচ্চিত্র বানাতে আগ্রহী ব্যক্তিরা এ স্কুলে ভর্তি হতে পারবেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে খবরটি জানিয়েছেন অমিতাভ রেজা।

দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপনচিত্র ও নাটক বানাচ্ছেন অমিতাভ রেজা। বড় পর্দার জন্য বানিয়েছেন ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রও। সম্প্রতি এই পরিচালকের ‘রিকশা গার্ল’ চলচ্চিত্রও দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ বিষয়ে ক্লাসও করিয়ে থাকেন। কী উদ্দেশ্যে এমন উদ্যেগ নিয়েছেন, তা জানতে চাইলে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য আমি একটা দল বানাতে চাই, যারা চলচ্চিত্র বানাবে। আমি নিজেও শিখতে চাই। আমি যেহেতু এখন দেশের বাইরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছি, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ক্লাস নিই, সেটা আর পারব না। তাই ভেবেছি, নির্মাণ বিষয়ে কিছু একটা করি, যেখানে ফিল্মে উদ্যমীরা যুক্ত হবে। পড়ালেখা করবে। তাদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করব। আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব, তারা তাদের অভিজ্ঞতা আমাকে জানাবে—এমন ডিজাইনে তারা ফিল্ম মেকিং কোর্স করবে। পরবর্তী সময়ে তারা একটা করে সিনেমা বানানোর জন্য প্রস্তুত হবে। আমি ২০ জন তরুণকে নিয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। তারা সবাই ২০টি করে শর্টফিল্মের জন্য তৈরি হবে। তারপর তারা তাদের মতো করে তহবিল সংগ্রহ করে সেসব ছবি বানাবে। ছবি বানানোর ব্যাপারে তাদের সম্পূর্ণ একটা জার্নির মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

কবে এমনটা ভেবেছেন, তা জানতে চাইলে অমিতাভ বলেন, ‘মাস তিনেক আগে এমনটা ভেবেছিলাম। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, এ বছর নতুন কী করব। সেই ভাবনা থেকেই আমার উদ্যোগ সিনেমা পাঠশালা। এটার পরিসর ধীরে ধীরে বড় হবে।’
কথা প্রসঙ্গে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘এখানে তরুণদের আগ্রহটাই আমার কাছে প্রধান। সবার সঙ্গে আমি আলাদাভাবে মিটিং করব। ইন্টারভিউ করব। এর মাধ্যমে তাদের আগ্রহটা বুঝতে চেষ্টা করব। একেবারে নতুনের পাশাপাশি নতুন কেউ কাজ কারছে, তারাও এখানে যুক্ত হতে পারবে।’

অমিতাভ রেজা জানান, ক্লাস শুরু হবে আগামী মার্চে। এই কোর্স সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেবে এই প্ল্যাটফর্ম। অমিতাভ বলেন, ‘এটা একটা পেশাদার প্রশিক্ষণ। এক ব্যাচে ২০ জনের বেশি থাকবে না। এর মধ্যে ৪০ জনের মতো আবেদন করেছে। বাংলাদেশের বাইরের বাঙালিরাও আবেদন করেছে। অতিথি হিসেবেও কেউ কেউ ক্লাস নেবেন।’

আরও পড়ুন ‘রিকশা গার্ল’ নিয়ে জাপানে অমিতাভ রেজা০২ মার্চ ২০২৪

এদিকে অমিতাভ রেজা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এত দিন ধরে আমি যে ছায়ার রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তার নাম সিনেমা। ৩০ বছরের এই যাত্রা আমার জন্য শুধু পেশা নয়, এটা আমার বাড়ি, আমার উন্মাদনা—আমার পৃথিবীকে বোঝার উপায়। গল্প বলা কখনোই শেষ হয় না; এটা একটা অনন্ত পথচলা। আর এখন, এই পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে, আমি খুঁজছি কিছু নতুন সহযাত্রী, যারা ছবিতে শ্বাস নেয়, যারা স্বপ্ন দেখে, আর শব্দের গভীরে হারিয়ে যায়। সেই কারণেই আমি শুরু করছি ভার্চ্যুয়াল সিনেমা পাঠশালা। নতুন এই উদ্যোগটি আমি সাজিয়েছি ছয় সপ্তাহের পাইলট অনলাইন কোর্স দিয়ে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ ও সুবর্ণাকে

রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায়কে (৬০) চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে নিজ বাড়িতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার সকালে রহিমাপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তাদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে যোগেশ রায়ের মাথার পেছনে এবং সুবর্ণা রায়ের কপালে কোপ মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, যোগেশ চন্দ্র রায় উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও সাবেক প্রধান শিক্ষক। ২০১৭ সালে তিনি অবসরে যান। তার দুই ছেলে চাকরির কারণে ঢাকা থাকেন। ফলে স্বামী-স্ত্রী দুজনই গ্রামে একা থাকতেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার, মারুফাত হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘‘শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ২২ মিনিটে ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয় যোগেশের। রবিবার সকাল ৭টার দিকে দিনমজুর দীপক চন্দ্র রায় প্রতিদিনের মতো বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে সন্দেহ করেন। প্রতিবেশীদের ডেকে মই বেয়ে ভেতরে ঢুকে তিনি খাবার ঘরে যোগেশ রায়ের এবং রান্নাঘরে সুর্বণা রায়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে সুরতহাল শেষে বিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় ডিবি, সিআইডি, পিবিআই এবং র‍্যাব-১৩ এর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনাস্থলে গিয়েছেন রংপুর-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার এবং জামায়াতের প্রার্থী এটিএম আজহারুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত নেতাকর্মী ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা।

এটিএম আজহারুল ইসলাম জানান, নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে এভাবে কুপিয়ে হত্যা করা দেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম অবনতির ইঙ্গিত। তাই দ্রুত এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

এ দিকে দুপুরেই কর্মস্থল থেকে ছুটে আসেন পুলিশে কর্মরত নিহতের দুই ছেলে। মেঝেতে বাবা-মায়ের মরদেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তারা। তবে বড় ছেলের স্ত্রী কল্যাণী রায় বলেন, ‘‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। চাকরির সুবাদে আমরা ঢাকা থাকি। প্রতিনিয়ত তাদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হয় আমাদের। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই যখন শুনি তাদের হত্যা করা হয়েছে বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি।’’

শ্বশুর-শাশুড়িকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দ্রুত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন কল্যাণী রানী।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, বিজয়ের মাসে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রীকে এভাবে হত্যা করা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দ্রুত তদন্ত করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন বলেন, “চুরি-ডাকাতির কোনো আলামত নেই। বাড়ির উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে ঘাতকরা ঢুকতে পারে। খুব দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।’’

ঢাকা/আমিরুল//

সম্পর্কিত নিবন্ধ