Samakal:
2025-06-16@05:56:34 GMT

ট্রাম্পের মুখে জামাতার ভাষা

Published: 7th, February 2025 GMT

ট্রাম্পের মুখে জামাতার ভাষা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বপ্ন গাজা উপত্যকা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়া এবং সেটাকে সমুদ্রতীরের আন্তর্জাতিক রিসোর্টে রূপান্তর করা। এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা তাঁরই জামাতা জেরেড কুশনারের একটি মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এক বছর আগে কুশনার বলেছিলেন, গাজার সমুদ্রমুখী এলাকা অত্যন্ত মূল্যবান। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে সুদৃশ্য স্থাপনা নির্মাণের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন এ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী।

গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। সেই সঙ্গে তিনি গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর মন্তব্যে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ পরিকল্পনার সমালোচনায় নামে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোই। ফিলিস্তিনের মানুষ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তারা গাজায়ই বাঁচতে ও মরতে চান। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটা জাতিগত নিধনের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।

এর আগেও ট্রাম্প গাজা নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। গত বছরের অক্টোবরে ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যথাযথভাবে গড়ে তুললে গাজা ধনকুবেরদের শহর মোনাকোর চেয়েও ভালো কিছু হতে পারে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে একে একে এসব পরিকল্পনা সামনে আসতে থাকে। শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা কুশনারকে এসব বলতে শোনা যায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি মার্কিন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত ছিলেন। তারই দূতিয়ালিতে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে আব্রাহাম চুক্তি সই হয়। 

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হার্বার্ডের একটি অনুষ্ঠানে কুশনার বলেছিলেন, গাজার উপকূলীয় সম্পত্তি অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে, যদি সেখানে জীবিকা নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করা হয়। আরব-ইসরায়েল সংঘাত প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের দ্বন্দ্ব রিয়েল এস্টেট বিরোধ ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানের পরিস্থিতি কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক। ইসরায়েলের দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, আমি হলে লোকজনকে সেখান (গাজা) থেকে বের করে দিতাম এবং তার পর জায়গাটি পরিষ্কার করতাম।’  

সম্প্রতি ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দিতে চাচ্ছেন এবং সেখানের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানাতে চাচ্ছেন। ট্রাম্পের মতো কুশনারও একজন প্রপার্টি ডেভেলপার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা তাদের দৃষ্টিতে গাজার পরিস্থিতি দেখছেন। তারা সম্পত্তি দেখছেন, সেখানকার ২২ লাখ মানুষ দেখছেন না। 
গাজার বাসিন্দারা ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর চীন বলেছে, গাজার মালিক গাজার মানুষ। এটা ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বিবিসির বিশ্লেষণ

গাজা থেকে বাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে এর দখল ও মালিকানা নেওয়ার ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়ন হওয়ার নয়। এটা করতে হলে আরব দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন, যা মিলবে না। এরই মধ্যে জর্ডান, মিসর, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোও। তবে এর দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব থাকবে। কট্টরপন্থি ইহুদিদের পরিকল্পনায় ট্রাম্পের এ প্রস্তাব হাওয়া দেবে।

ইউএনএইচআরসি ছাড়ল ইসরায়েল

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) ছেড়েছে ইসরায়েল। বুধবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার সামাজিক মাধ্যম এক্সে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কেবল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ করেছে মানবাধিকার কাউন্সিল, যা ইরান, কিউবা, উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে আনা মোট অভিযোগের চেয়েও বেশি। এ ধরনের বৈষম্য ইসরায়েল মেনে নেবে না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত: বিবিসি

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফলে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জনে পৌঁছেছে। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি।

অন্যদিকে আল জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ