মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বপ্ন গাজা উপত্যকা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়া এবং সেটাকে সমুদ্রতীরের আন্তর্জাতিক রিসোর্টে রূপান্তর করা। এর নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা তাঁরই জামাতা জেরেড কুশনারের একটি মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এক বছর আগে কুশনার বলেছিলেন, গাজার সমুদ্রমুখী এলাকা অত্যন্ত মূল্যবান। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে সুদৃশ্য স্থাপনা নির্মাণের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন এ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী।
গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা দখল ও সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। সেই সঙ্গে তিনি গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর মন্তব্যে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ পরিকল্পনার সমালোচনায় নামে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোই। ফিলিস্তিনের মানুষ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, তারা গাজায়ই বাঁচতে ও মরতে চান। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটা জাতিগত নিধনের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ।
এর আগেও ট্রাম্প গাজা নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। গত বছরের অক্টোবরে ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যথাযথভাবে গড়ে তুললে গাজা ধনকুবেরদের শহর মোনাকোর চেয়েও ভালো কিছু হতে পারে। ২০২৩ সালে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে একে একে এসব পরিকল্পনা সামনে আসতে থাকে। শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা কুশনারকে এসব বলতে শোনা যায়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি মার্কিন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত ছিলেন। তারই দূতিয়ালিতে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে আব্রাহাম চুক্তি সই হয়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হার্বার্ডের একটি অনুষ্ঠানে কুশনার বলেছিলেন, গাজার উপকূলীয় সম্পত্তি অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে, যদি সেখানে জীবিকা নির্মাণের দিকে মনোনিবেশ করা হয়। আরব-ইসরায়েল সংঘাত প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের দ্বন্দ্ব রিয়েল এস্টেট বিরোধ ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানের পরিস্থিতি কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক। ইসরায়েলের দৃষ্টিকোণ থেকে বলব, আমি হলে লোকজনকে সেখান (গাজা) থেকে বের করে দিতাম এবং তার পর জায়গাটি পরিষ্কার করতাম।’
সম্প্রতি ট্রাম্পও একই কথা বলেছেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দিতে চাচ্ছেন এবং সেখানের ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানাতে চাচ্ছেন। ট্রাম্পের মতো কুশনারও একজন প্রপার্টি ডেভেলপার। বিশ্লেষকরা মনে করেন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা তাদের দৃষ্টিতে গাজার পরিস্থিতি দেখছেন। তারা সম্পত্তি দেখছেন, সেখানকার ২২ লাখ মানুষ দেখছেন না।
গাজার বাসিন্দারা ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর চীন বলেছে, গাজার মালিক গাজার মানুষ। এটা ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিবিসির বিশ্লেষণ
গাজা থেকে বাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে এর দখল ও মালিকানা নেওয়ার ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়ন হওয়ার নয়। এটা করতে হলে আরব দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন, যা মিলবে না। এরই মধ্যে জর্ডান, মিসর, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোও। তবে এর দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব থাকবে। কট্টরপন্থি ইহুদিদের পরিকল্পনায় ট্রাম্পের এ প্রস্তাব হাওয়া দেবে।
ইউএনএইচআরসি ছাড়ল ইসরায়েল
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) ছেড়েছে ইসরায়েল। বুধবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার সামাজিক মাধ্যম এক্সে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, কেবল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ করেছে মানবাধিকার কাউন্সিল, যা ইরান, কিউবা, উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে আনা মোট অভিযোগের চেয়েও বেশি। এ ধরনের বৈষম্য ইসরায়েল মেনে নেবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের আগে প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, আগস্টের পর থেকেই বাড়ছে
প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে কোনো একক মাসে দেশে এত প্রবাসী আয় আসেনি। প্রবাসী আয়ের রেকর্ডের এই হিসাব গত বুধবার পর্যন্ত। এরপরের কয়েক দিনের প্রবাসী আয়ের হিসাব যুক্ত হলে মার্চ শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মার্চের শুরু থেকে প্রবাসী আয়ের যে ধারা, সেটিকে বিবেচনায় নিলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় মাস শেষে চূড়ান্ত হিসাবে তা ৩০০ কোটি বা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। সেটি হলে দেশের ইতিহাসে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছাবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫২ কোটি ডলার। মার্চে প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসার বাধাগুলো দূর করতে হবে। সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেমগত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম ঈদ সমাগত। এই ঈদ সামনে রেখে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় দেশে পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, মূলত অর্থ পাচার কমে যাওয়ায় প্রবাসীরা তাঁদের আয় পাঠাতে বৈধ পথকে বেছে নিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ, ডলারের বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক চলতি ও আর্থিক হিসাবেরও উন্নতি হয়েছে।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলছেন, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিরতা কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী আয়ের গতিধারা অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রবাসী আয় বেশি আসায় রিজার্ভের পতনের ধারা ঠেকানো গেছে। তবে রিজার্ভ এখনো স্বস্তির জায়গায় নেই। প্রবাসী আয়ের এই প্রবাহ ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। ঈদের পরও যেন বর্তমান ধারা ঠিক থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসার বাধাগুলো দূর করতে হবে।
মার্চ মাসের প্রবাসী আয়ের প্রবাহবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৬ কোটি ডলার। চার দিন পর অর্থাৎ ১৯ মার্চ ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ২২৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। আবার ১ থেকে ২২ মার্চ তথা মাসের প্রথম ২২ দিনে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪৩ কোটি ডলার, যা ২৪ মার্চ বেড়ে ২৭০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। আর ২৬ দিনে আয় বেড়ে হয় ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনেই ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার করে এসেছিল। পরের চার দিনে প্রবাসীরা অর্থ পাঠানো আরও বাড়িয়ে দেন।
চলতি মার্চের প্রথম ২৬ দিনে যে প্রবাসী আয় এসেছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩৩ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ৮২ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চের প্রথম ২৬ দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬১ কোটি ডলার।
আগস্টের পর প্রবাসী আয় বেড়েছেদেশে গত বছরের আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে সাত মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন প্রায় ২৫৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।
সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।
গত ৬৯ মাসের চিত্রবাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যভান্ডার ঘেঁটে গত ৫ বছর ৯ মাসের মাসওয়ারি প্রবাসী আয়ের চিত্র পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, চলতি মার্চ মাসেই সর্বোচ্চ ২৯৪ কোটি ডলার এসেছে। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ ২৬৩ কোটি ডলার এসেছিল। ২০১৯-২০ সালের পর মোট ২৪ মাস ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে প্রবাসী আয়ের ডলার কেনা এখন অনেকটা কমেছে। এর ফলে ডলারের দাম ১২৩ টাকার মধ্যেই রয়েছে। এতে পণ্য আমদানিতেও ডলারের দাম কম পড়ছে। ফলে আমদানি খাদ্যপণ্যের দাম সেভাবে বাড়েনি। আগে একসময় প্রতি ডলারের দাম ১২৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
প্রবাসে কর্মী যাওয়া বেড়েছে কিসরকারি সংস্থা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে বিদেশে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন ২০২৩ সালে। ওই বছর দেশ থেকে ১৩ লাখের বেশি কর্মী কাজের সন্ধানে বিদেশে গেছেন। এই ২০ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মী বিদেশে গেছেন ২০২২ সালে। ওই বছর ১১ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন কর্মসংস্থানের আশায়। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০ লাখের বেশি কর্মী গেছেন গত বছর। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বিদেশে কর্মী গেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিদেশে যেসব কর্মী গেছেন, তাঁদের বড় অংশই এখন দেশে আয় পাঠাতে শুরু করেছে। এ কারণে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
হুন্ডি ও অর্থ পাচার বন্ধের প্রভাব কীগত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অর্থ পাচার ও হুন্ডি কমেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, এ কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতাও কমে গেছে। জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের উৎস দেশের ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে পারছি। মধ্যপ্রাচ্যের বদলে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আয় প্রেরণকারী শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে। উৎস দেশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের এই পরিবর্তনের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। তবে প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের ক্ষেত্রে আমরা কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীলতা দেখতে পাচ্ছি, এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। সাধারণত ঈদের আগে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পায়। তার সঙ্গে এখন অর্থ পাচার ও হুন্ডির চাহিদা কিছুটা কম থাকায় বৈধ পথে আয় আসা বেড়ে থাকতে পারে।’
রিজার্ভ ও লেনদেন ভারসাম্যে প্রভাবএদিকে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে রিজার্ভ পরিস্থিতির মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। যদিও এ সময়ে আমদানি বেড়েছে। বাড়তি এই আমদানির জন্য ডলার জোগান দেওয়ার পরও গত মঙ্গলবার দিন শেষে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের ওপরে রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের আন্তর্জাতিক লেনদেন ভারসাম্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক চলতি ও আর্থিক হিসাবের উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৬ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারি শেষে সেটি ১৪২ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে চলতি হিসাবে ৪০৭ কোটি ডলার ঘাটতি ছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সেই ঘাটতি কমে ১২৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।