রং যে কেবল দেয়ালকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে, তা কিন্তু নয়; বরং দেয়ালের সুরক্ষার জন্য চাই রং। মনের মতো রঙে আপনি অন্দর-বাইরের দেয়াল রাঙিয়ে নেবেন নিশ্চয়ই। তবে রং করানোর আগেই আপনাকে দেয়ালের সুরক্ষার দিকটি মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় মেনে চলা হলে বছরের পর বছর ধরে দেয়াল থাকবে অক্ষত। দেখাবেও চমৎকার।
মানবদেহের ভেতরটাকে সুরক্ষিত রাখতে আবরণ হিসেবে যেমন কাজ করে ত্বক, তেমনি দেয়ালের আবরণ হিসেবেও প্রয়োজন রং। দেয়ালের গড়ন সুরক্ষিত রাখতে ঠিকঠাক রং বেছে নিতে হবে আপনাকে। পরিবেশের স্বাভাবিক কিছু উপাদানের কারণে দেয়ালের ক্ষতি হতেই পারে। এই যেমন বাড়ির বাইরের দেয়ালে রোদ, বৃষ্টি ও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত আর্দ্রতা অন্দরের দেয়ালের জন্যও ক্ষতিকর। ভালো মানের রঙের প্রলেপ না থাকলে বাহির ও অন্দর—দুই জায়গার দেয়ালেই ছত্রাক জন্মাতে পারে। শৈবালও জন্মায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে। নানান রকম দাগছোপ পড়েও দেয়াল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এত সব দিক সামলাতে দেয়ালের রং কেমন হতে হবে, এ প্রসঙ্গে নানান পরামর্শ দিলেন সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি তাসনিম তূর্যি।
রং করানোর আগে
* যে দেয়ালে আগে কোনো রং ছিল, নতুন রং করানোর আগে তা পুরোপুরি তুলে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
* নতুন-পুরোনো যেকোনো দেয়ালে রং করার আগে তা সিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে ঘষে মসৃণ করে তুলতে হবে।
* প্রয়োজনে পুরোনো প্লাস্টারের প্রলেপ সরিয়ে দিয়ে নতুনভাবে প্লাস্টার করিয়েও নিতে হবে। দেয়ালের কোনো অংশ আর্দ্রতার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে অবশ্যই সেটির প্রতিকার করতে হবে রং করার আগে। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নেওয়া ভালো। দেয়ালের ক্ষতির ধরন এবং মাত্রা অনুযায়ী তিনি পরামর্শ দেবেন।
* ভবিষ্যতে দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব প্রতিরোধ করার জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত রং করানোর আগেই। রঙের আগে দেয়ালে প্রাইমার এবং সিলার ব্যবহার করলে তা স্যাঁতসেঁতে ভাব প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হলে দেয়ালে রং বসে যায় মসৃণভাবে। আর দেয়াল ভালোও থাকে দীর্ঘদিন।
কোন ধরনের রং বেছে নেবেন
* মানসম্মত, টেকসই রং ব্যবহার করুন বাড়ির বাহির এবং অন্দর দুই জায়গাতেই। তাহলে রং করানোর পর দেয়ালের যত্ন নেওয়ার জন্য বাড়তি ঝক্কি থাকবে না।
* বাইরের দেয়ালের জন্য এমন রং বেছে নিন, যা দেয়ালকে রোদ, বৃষ্টি, আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষিত রাখবে। আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষা দেবে এমন রং অন্দরের জন্যও ভালো।
* দাগছোপ বসে যায় না, এমন রং বেছে নিতে পারেন অন্দরের দেয়ালের জন্য। ময়লা লেগে গেলে সহজে পরিষ্কার করা যায়, এমন রং অন্দরের জন্য সুবিধাজনক। অ্যাক্রিলিক ইমালসন রং করানো হলে প্রয়োজনে দেয়াল পানি দিয়ে ধুয়েমুছেও নেওয়া যায়।
* মানবদেহের জন্য নিরাপদ রংও পাওয়া যায় এখন, যা শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করে না। বিশেষত রং করানোর সময় বাড়িতে শিশু এবং বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি থাকলে এ ধরনের রং বেছে নেওয়া ভালো।
* রান্নাঘরের জন্য আগুনপ্রতিরোধী রং বেছে নিতে পারেন, দুর্ঘটনায় আগুন লেগে গেলেও তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
রং করানোর পর
* একেবারে দেয়াল ঘেঁষে আসবাব না রাখাই ভালো।
* দেয়াল মোছার প্রয়োজন হলে পাতলা, সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
* দেয়ালসজ্জায় এমন কোনো অনুষঙ্গ ব্যবহার করবেন না, যাতে পানি রয়েছে। দেয়ালসজ্জায় ব্যবহৃত সব অনুষঙ্গ নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
* রঙের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়তে থাকে। দেয়ালের রং নষ্ট হতে শুরু করলে কিংবা স্যাঁতসেঁতে ভাব দেখা গেলে অবশ্যই নতুনভাবে রং করিয়ে নিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র জন য এমন র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই নেতার উষ্ণ আলিঙ্গন
৮ মার্চ, ১৯৭৫। ২টা ৫৫ মিনিট। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের কাগমারী গিয়ে পৌঁছালেন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রথমে তিনি গেলেন মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ প্রাঙ্গণে। পুলিশ বাহিনী তাঁকে গার্ড অব অনার জানাল। গার্ড অব অনারের শেষ মুহূর্তে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মাওলানা সাহেবকে দেখেই বঙ্গবন্ধু অভিবাদন মঞ্চ থেকে দ্রুত নেমে এলেন। ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনের মুখে অনুপম হাসির দীপ্তি। এই দৃশ্য ধারণ করতে সংবাদপত্রের আলোকচিত্রীরা দৌড়ে এলেন। কেউ কেউ এই দৃশ্য ধরতে পারলেন। তবে বেশির ভাগই পারলেন না। একজন বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করলেন, ভাসানীকে আবার জড়িয়ে ধরতে। বঙ্গবন্ধু এবার শিশুর মতো নবতিপর মাওলানার বুকে মাথা রাখলেন। মাওলানা সাহেবও পরম স্নেহে বঙ্গবন্ধুর মাথায়-পিঠে হাত বুলিয়ে প্রাণভরে দোয়া করতে লাগলেন। মাওলানার চোখে আনন্দের অশ্রু। এ যেন দীর্ঘকাল অদর্শনের পর পিতা-পুত্রের এক হৃদয়স্পর্শী মিলনদৃশ্য। আলোকচিত্রীরা এই দুর্লভ ও মনোহর মুহূর্তকে ক্যামেরায় ধারণ করে চলছেন। মাওলানার বুকে মাথা রেখে বঙ্গবন্ধু এবার আলোকচিত্রীদের বললেন, ‘তোমরা জানো না, আমি তো হুজুরের বুকেরই মানুষ।’ মাওলানাও বললেন, ‘মজিবুর আমার কত প্রিয়, তোমরা তা জানো না।’
মাওলানা সাহেবকে দেখেই বঙ্গবন্ধু অভিবাদন মঞ্চ থেকে দ্রুত নেমে এলেন। ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনের মুখে অনুপম হাসির দীপ্তি। এই দৃশ্য ধারণ করতে সংবাদপত্রের আলোকচিত্রীরা দৌড়ে এলেন। কেউ কেউ এই দৃশ্য ধরতে পারলেন। তবে বেশির ভাগই পারলেন না।এরপর মাওলানা সাহেবকে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধু কাগমারী মোহাম্মদ আলী কলেজের শ্বেতপ্রস্তর নির্মিত উদ্বোধনী ফলকের আবরণ উন্মোচনের জন্য অগ্রসর হন। দুজনে একত্রে এই আবরণ উন্মোচন করেন। এই পর্ব শেষ করে এই দুই জননেতা রাষ্ট্রপতির গাড়িতে করে গেলেন সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাসানী ঘুরে ঘুরে রাষ্ট্রপতিকে দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। ছায়াঘেরা ক্যাম্পাসের চারদিকে লাল শিমুলের সমারোহ। দুজন পাশাপাশি হাঁটছেন। কথা বলছেন কখনো সহাস্যে; কখনো একান্তে। বঙ্গবন্ধু হঠাৎ ভাসানীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শহীদ সাহেব যে একটা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, সেটা কোথায়?’ ভাসানী তাঁকে নিয়ে গেলেন সন্তোষ মাতৃসদন ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের সামনে। বঙ্গবন্ধুকে দেখান একটা নবনির্মিত দোতলা দালান। নিচে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলক। তাতে লেখা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম। মাওলানা ভাসানীকে বঙ্গবন্ধু অনুরোধ করলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী’ কথাটি তুলে দিতে।
দুই নেতার উষ্ণ আলিঙ্গন [মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান, টাঙ্গাইল, ৮ মার্চ, ১৯৭৫]। আলোকচিত্র: রশীদ তালুকদার