কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূর সঙ্গে গ্রাম পুলিশের অনৈতিক সম্পর্ক থাকার অভিযোগ পেয়ে সালিশ বসায় গ্রামবাসী। এ সালিশে দু’জনের ফোনকলের অডিও শোনার পর ওই গৃহবধূকে তালাক দেন স্বামী। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জনতা ওই গ্রাম পুলিশের গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরায়। পরে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

গত রোববার উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোন্দাহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠা গ্রাম পুলিশের নাম সুশান্ত চন্দ্র দাস। তিনি সোন্দাহ দাসপাড়া এলাকার মৃত অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে ও নন্দলালপুর ইউপির গ্রাম পুলিশ।

ঘটনা নিশ্চিত করে নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, ঘটনার সময় তিনি বিশেষ কাজে উপজেলার বাইরে ছিলেন। রোববার দুপুরে ওই গ্রাম পুলিশকে দোকান ঘরে আটকে রাখার খবর পান তিনি। এ সময় তিনি সালিশকারীদের গ্রাম পুলিশকে পুলিশে সোপর্দ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য, ঘটনা যাই ঘটুক, আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী বলেন, গ্রাম পুলিশ সুশান্তের বিরুদ্ধে আগেও মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ছিল। এবারের ঘটনায় তার ফোন রেকর্ডে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই গৃহবধূর সঙ্গে গ্রাম পুলিশের প্রায় ২০০ মিনিট ফোনকলের অডিও পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন গ্রাম পুলিশকে জুতার মালা পরিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে।

অভিযোগ অস্বীকার করে গ্রাম পুলিশ সুশান্ত চন্দ্র দাস বলেন, ‘ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। মাঝেমধ্যে তাদের বাসায় যাওয়া-আসা করতাম। কিন্তু খারাপ কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও স্থানীয় মাতবর শামীম রেজা ও আবু তালহা রাসেল আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সালিশ বসান। এর পর কাজী ডেকে ওদের (স্বামী-স্ত্রীর) ডিভোর্স করান। পরে আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে সাদা কাগজে সই নিয়ে জুতার মালা পরিয়ে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার বাড়িতে পূজা চলছে। সে জন্য ইউএনও, ওসি বা চেয়ারম্যানকে কিছু জানাতে পারেননি। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি। 

অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় মাতবর আবু তালহা রাসেল বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা ওই গ্রাম পুলিশকে মারধর করার পাঁয়তারা করছিল। সে জন্য কৌশল অবলম্বন করে তাকে জুতার মালা পরিয়ে সেভ (বিপদমুক্ত) করা হয়েছে। তার ভাষ্য, গ্রাম পুলিশ সুশান্তের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ফোনকলে স্ত্রীর সঙ্গে গ্রাম পুলিশের অনৈতিক সম্পর্ক প্রমাণ হওয়ায় ওই নারীকে ডিভোর্স দেন তার স্বামী। এ সময় উভয়পক্ষের অভিভাবক ও শত শত জনতা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী সমকালকে বলেন, ‘আমার যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।’

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সোলায়মান শেখ বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমারখালীর ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। এ ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরক য় ঘটন য় গ হবধ এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।

এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।

তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।

মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।

পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।

পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’

জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয়, শেখাবেন ইংরেজি
  • আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
  • নারায়ণগঞ্জে ৩০ স্কুলে চালু হলো ‌‘মিড ডে মিল’
  • গাজীপুরে ১০ মাটি খেকোকে কারাদণ্ড
  • পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
  • দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন ইউএনও
  • রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ, লুট হওয়া বই ফেরত পেল পাঠাগার কর্তৃপক্ষ
  • মুদি দোকানে যৌন উত্তেজক ঔষধ, জরিমানা