প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশিত
Published: 21st, April 2025 GMT
গত বছর জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে ৯ দফা দাবি পেশ করেছিল, তার সপ্তম দফায় ছাত্র সংসদ চালু করার কথা বলা হয়েছিল। নির্বাচন না হলে ছাত্র সংসদ চালু করার সুযোগ নেই। ধারণা করা গিয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। প্রায় সাড়ে আট মাস পার হলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিয়াত্তরের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের অধীন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও বাকিগুলো অজ্ঞাত কারণে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। উল্লিখিত চারটির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ করা হয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তফসিল ঘোষণার কথা আছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন হবে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হলেও তফসিল ঘোষণা নিয়ে সংশয় আছে। কয়েকটি ছাত্রসংগঠন বর্তমান পথনকশা অনুযায়ী নির্বাচন চাইলেও বাকিরা গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ করা হয়। এতে জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে রাকসুর নির্বাচন হবে বলে জানানো হয়েছে। তারা তফসিল ঘোষণা করলেও বিধিমালা জারি না করায় নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১০ ডিসেম্বর চাকসু নীতিমালা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। ২৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। প্রশাসন ১৪ মে অনুষ্ঠেয় সমাবর্তনের প্রস্তুতি কাজে ব্যস্ত থাকায় নির্বাচনের বিষয়ে সময় দিতে পারছে না। তাদের মতে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে চাকসুর নির্বাচন হতে পারে।
উল্লিখিত চার বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। জাতীয় নির্বাচনের ধারা এখানেও লক্ষ করা যাচ্ছে। যারা মনে করে এখন নির্বাচন হলে জিততে পারবে না, তারা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। আর যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তারা অবিলম্বে নির্বাচন চায়। জয় নিশ্চিত হলে নির্বাচন করবে আর নিশ্চিত না হলে করবে না, এটা কোনো দায়িত্বশীল ছাত্রসংগঠনের কাজ হতে পারে না।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এত বিতর্কের প্রয়োজন নেই। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে, তাদের স্বাগত জানাই। কিন্তু যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়নি, সে কারণে নির্বাচন আটকে থাকতে পারে না।
অতীতে ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার সে রকম অবস্থান নেবে না বলে আশা করি। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অন্তত যাত্রাটা শুরু হোক।
দুটি কারণে এটা হওয়া উচিত। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যে নেতৃত্বের সংকট চলছে, তার অন্যতম কারণ তিন দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন না হওয়া। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত তথা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া আদায়ে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আদালত অবমাননা করে নিবন্ধন নিয়ে গড়িমসি করছে ইসি: রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গড়িমসি করে ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’কে নিবন্ধন দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে দলটি। তারা মনে করে, এর মধ্য দিয়ে কমিশন আদালতের সুস্পষ্ট রায় অবমাননা করে তাদের আগামী নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে তোপখানা দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভূইয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তৎকালীন নির্বাচন কমিশন কোনো সুস্পষ্ট কারণ না দেখিয়ে সেই আবেদন বাতিল করে দেয়। পরবর্তী সময়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হলে কমিশন জানায়, বিদ্যমান আইনে সেই সুযোগ নেই। পরে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলকে নিবন্ধন দেওয়ার আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আদালত শুনানি শেষে চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তাদের পক্ষে রায় দেন। রায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ডি ধারা অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালতের রায়ের পর দীর্ঘ সময় নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাঁরা গত ৩ অক্টোবর বিশেষ কাউন্সিল করেন। এরপর আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ৩ নভেম্বর তা কমিশনে জমা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, এরপরও নির্বাচন কমিশন কালক্ষেপণ করছে। মৌখিকভাবে দ্রুত আবেদন নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলেও চিঠিতে প্রায় সব কাগজপত্র আবারও চাওয়া হয়। সর্বশেষ ১ ডিসেম্বর প্রায় দুই হাজার পাতার নথি জমা দেওয়া হলেও গত ১০ দিনে কোনো কাজ এগোয়নি।
এতে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচন দ্বারপ্রান্তে। যেকোনো সময় তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সারা দেশে আমাদের দলীয় নেতা–কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে আগামী নির্বাচন এবং রাজনীতি থেকে বঞ্চিত করার উপক্রম করেছে। এমন কিছু হলে জাতীয় নির্বাচন ও আগামীর সংস্কার যাত্রা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, যা পতিত স্বৈরাচার ও সংস্কারবিরোধীদের উদ্দেশ্যই পূরণ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ঘোষিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। সংস্কার যাত্রা নিরঙ্কুশ করতে এই নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অন্যতম দাবিদার।
দ্রুত নিবন্ধন দেওয়া না হলে রাষ্ট্রীয় এবং জনতার আদালতে এই নির্বাচন কমিশনের বিচার চাওয়া হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।