গত বছর জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে ৯ দফা দাবি পেশ করেছিল, তার সপ্তম দফায় ছাত্র সংসদ চালু করার কথা বলা হয়েছিল। নির্বাচন না হলে ছাত্র সংসদ চালু করার সুযোগ নেই। ধারণা করা গিয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুততম সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। প্রায় সাড়ে আট মাস পার হলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিয়াত্তরের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের অধীন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুটা তৎপরতা লক্ষ করা গেলেও বাকিগুলো অজ্ঞাত কারণে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। উল্লিখিত চারটির মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ করা হয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তফসিল ঘোষণার কথা আছে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন হবে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হলেও তফসিল ঘোষণা নিয়ে সংশয় আছে। কয়েকটি ছাত্রসংগঠন বর্তমান পথনকশা অনুযায়ী নির্বাচন চাইলেও বাকিরা গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানাচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ করা হয়। এতে জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে রাকসুর নির্বাচন হবে বলে জানানো হয়েছে। তারা তফসিল ঘোষণা করলেও বিধিমালা জারি না করায় নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১০ ডিসেম্বর চাকসু নীতিমালা প্রণয়নে একটি কমিটি গঠন করলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। ২৬ জানুয়ারি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। প্রশাসন ১৪ মে অনুষ্ঠেয় সমাবর্তনের প্রস্তুতি কাজে ব্যস্ত থাকায় নির্বাচনের বিষয়ে সময় দিতে পারছে না। তাদের মতে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরে চাকসুর নির্বাচন হতে পারে।

উল্লিখিত চার বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। জাতীয় নির্বাচনের ধারা এখানেও লক্ষ করা যাচ্ছে। যারা মনে করে এখন নির্বাচন হলে জিততে পারবে না, তারা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী। আর যাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তারা অবিলম্বে নির্বাচন চায়। জয় নিশ্চিত হলে নির্বাচন করবে আর নিশ্চিত না হলে করবে না, এটা কোনো দায়িত্বশীল ছাত্রসংগঠনের কাজ হতে পারে না।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এত বিতর্কের প্রয়োজন নেই। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে, তাদের স্বাগত জানাই। কিন্তু যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়নি, সে কারণে নির্বাচন আটকে থাকতে পারে না।

অতীতে ক্ষমতাসীনেরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার সে রকম অবস্থান নেবে না বলে আশা করি। পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অন্তত যাত্রাটা শুরু হোক।

দুটি কারণে এটা হওয়া উচিত। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যে নেতৃত্বের সংকট চলছে, তার অন্যতম কারণ তিন দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন না হওয়া। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত তথা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া আদায়ে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আরও প্রকট হয়েছে উদীচীর সংকট

দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ রহমান সেলিমের অব্যাহতির ঘোষণা দিয়েছে একপক্ষ। তবে আরেক পক্ষ বলছে, সম্পাদকমণ্ডলীর নামে সভা ডেকে এ অব্যাহতির ঘোষণা অবৈধ। আগামী ২০ জুন অনুষ্ঠিতব্য ২৩তম অসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।  

গতকাল বুধবার উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর বিবদমান একপক্ষের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিপক্ষের দুই নেতাকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগঠনের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, অসাংগঠনিক তৎপরতা, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন, বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগে উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে সংগঠনের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২৩তম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি আগামী ২০ জুন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় সম্মেলনের অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ কাউন্সিল (নির্বাচনী) অধিবেশন আহ্বান করেন। তিনি বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে একপক্ষের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নেতৃত্বাধীন অংশের সমর্থন করেন।
অব্যাহতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিমসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগের তদন্ত চলমান। তদন্ত কমিটির সুপারিশে তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এ প্রধান দুই ব্যক্তিকে সংগঠনের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠন। এতে বলা হয়, আগামী ২৩ মে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তদের বিষয়ে ওই সভায় বিস্তারিত আলোচনা ও তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের বক্তব্য ও অবস্থান জানানো হবে।

বদিউর রহমানের সমর্থক অংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে সমকালকে বলেন, কোরামবিহীন সম্পাদকমণ্ডলীর সভা ডেকে এভাবে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না। উদীচীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পরিষদের সভায় সবার উপস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কাজেই এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগঠনতান্ত্রিক। 
অন্য অংশের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে সম্পাদকমণ্ডলী যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা গঠনতন্ত্রেই আছে। কাজেই এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রের কোনো বরখেলাপ হয়নি। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলন ডেকে বদিউর রহমান অসমাপ্ত জাতীয় সম্মেলন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তিনি এটা করতে পারেন না। আসলে বদিউর রহমান ও তাঁর সমর্থকরা উদীচী কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৩ মে কেন্দ্রীয় সংসদের সভায় যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেটাই কার্যকর হবে।
এর আগে উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শিশু একাডেমি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে দু’পক্ষের মধ্যে হৈহট্টগোল ও মারামারি ঘটে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরও প্রকট হয়েছে উদীচীর সংকট