২০০ বছরের পুরোনো সম্পত্তি নাবালকের নামে ইজারা
Published: 5th, May 2025 GMT
ছেলের নামে ভিপি সম্পত্তির ৩ একর ৯৮ শতাংশ ইজারা নিয়ে প্রায় ৯ একর জমি কবজা করেছেন বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সবুর খান। বাইশারী ইউনিয়নের দত্তপাড়া গ্রামের ২০০ বছরের পুরোনো ‘সাতানি’ নামে বাড়িটি এখন সবুরের দখলে। এরই মধ্যে তিনি সেখানকার ৭০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছেন। ভেঙে ফেলছেন পুরোনো মন্দির।
সবুরকে বাড়িটি ইজারা দিতে পদে পদে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ১০ বছর আগের ইজারা দেখিয়ে গত ৫ জানুয়ারি সবুরের ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র মারুফ খানের নামে বাংলা ১৪৩২ সালের ইজারা নবায়ন করা হয়। অথচ ১০ বছর আগে মারুফের বয়স ছিল ৭ বছর।
এ ছাড়া ভিপি সম্পত্তি নিয়ে বানারীপাড়া সহকারী জজ আদালতে ১৯৯৮ সালে মামলা করে গৌরাঙ্গ সাহা গং। ২০০৫ সালে বাড়িটি দখলচেষ্টা হলে ওই বছরের ৩০ মে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। আদালতের স্থিতাবস্থা থাকলেও তা উপেক্ষা করে জমি ইজারা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ইজারা দেওয়ার পর ইউএনওর আদেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বসবাসকারীদের বাড়ি ছাড়তে হয়।
ভূমি অফিসের দেওয়া তথ্য বলছে, সাতানি বাড়ির ৮ একর ৯৯ শতাংশ জমির মধ্যে ৭ একর ৩৭ শতাংশ ভিপি সম্পত্তি। বার্ষিক ৩ লাখ ৫০ হাজার ২৪০ টাকা মূল্যে ইজারায় মুগডাল চাষের কথা বলা হয়েছে। অকৃষিজমিকে কৃষিজমি দেখানো হয়।
বাড়িটির মূল মালিকদের অন্যতম নিখিল সাহা দাবি করেন, ইজারা পেয়ে সবুর পুরো ৭ একর অর্পিত সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন। দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ প্রায় ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। পুরোনো মন্দির ভেঙে ফেলছেন।
সাতানি বাড়ির ভিপি সম্পত্তি মারুফকে ইজারা দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বানারীপাড়া ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মজিদ খান জানান, ১০ বছর আগে দখল দেখিয়ে সবুর ইজারা নবায়ন করেছেন। ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়ায় বয়স প্রমাণ করা যায়নি।
বরিশালের প্রবীণ আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, যিনি ইজারা নেবেন, তাঁর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
সবুর খান দাবি করেন, আগেও তাঁর নামে ইজারা ছিল। বকেয়া পরিশোধ করে ছেলের নামে নবায়ন করেছেন। তাঁর সঙ্গে আরও পাঁচজন সাতানি বাড়ির জমি ইজারা পেয়েছেন। স্থানীয়দের তথ্য বলছে, তারা সবুরের লোক। গাছ বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে সবুর জানান, দীপক ভৌমিক গাছ বিক্রি করে তাঁর ওপর দোষ চাপাচ্ছেন।
বানারীপাড়ার ইউএনও বায়েজেদুর রহমান বলেন, সাতানি বাড়ির ভিপি সম্পত্তি নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ২০১২ সালে। আমার জানামতে, জমির ওপর আদালতে মামলা কিংবা স্থিতাবস্থার আদেশ নেই। ইজারাগ্রহীতার বয়সের বাধ্যবাধকতা নেই। সবুর খানের দখল ও গাছ বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ তদন্তে গিয়ে সত্যতা পায়নি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাগমারায় মাটিতে পড়ে ছিল অসুস্থ ইগল, উদ্ধার করলেন কৃষক
অসুস্থ একটি ইগলকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে অনেকে ভয়ে উদ্ধার করেননি, পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন। তবে স্থানীয় কৃষক বাবু হোসেন সাহস করে সেটিকে উদ্ধার করেন। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি আমবাগান থেকে ইগলটি উদ্ধার করা হয়।
ইগলটি উদ্ধার করেন বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া গ্রামের কৃষক বাবু হোসেন (৫১)। তিনি বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মাঠে ঘাস সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলেন। খুঁজিপুর গ্রামের এক আমবাগানের ভেতর দিয়ে মাঠে যাওয়ার পথে একটি বড় ইগলকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। প্রথমে ওড়ানোর চেষ্টা করলেও ইগলটি উড়তে পারছিল না। কাছে গিয়ে দেখেন, ইগলটির বাঁ পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে তিনি সেটিকে ধরে লোকালয়ে নিয়ে আসেন। স্থানীয় প্রাণিচিকিৎসক আনোয়ার হোসেনকে ডেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসার পর ইগলটি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠে।
বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলামের কাছে ইগলটি হস্তান্তর করা হলে তিনি বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে পাঠানোর উদ্যোগ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুটি ইগল আকাশে লড়াই করতে করতে মাটিতে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একটি উড়ে গেলেও আরেকটি আহত অবস্থায় মাটিতেই পড়ে থাকে। ভয়ে তাঁরা কেউ উদ্ধার করেননি। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাবু হোসেন সাহস করে সেটি উদ্ধার করেন।
বাবু হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাখিটিকে বাঁচাতে পেরে তাঁর ভালো লাগছে।
পল্লি প্রাণিচিকিৎসক আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষক বাবু হোসেন তাঁকে ডেকে অসুস্থ ইগলের চিকিৎসা করান। ইগলটির বাঁ পায়ে ক্ষত আছে। দুই ইগলের মধ্যে লড়াইয়ের কারণে এমন হয়েছে। ইগলটির ওজন প্রায় চার কেজি।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইগলটির চিকিৎসা শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম। তিনি কৃষক বাবুর প্রশংসা করে বলেন, এখনো সচেতন মানুষ আছেন। তাঁর কারণে ইগলটি বেঁচে গেল।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ইউএনওর কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়ে ইগলটির চিকিৎসা করা হয়েছে। পায়ে আঘাত থাকায় এটি উড়তে পারছিল না।