বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি এইচইএম গ্র্যান্ড সেক্টরের ঋণ কর্মসূচিতে ২ হাজার ৯০০ কর্মী নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ডাকযোগে আবেদনপত্র পাঠাতে হবে।

১. পদের নাম: শাখা ব্যবস্থাপক

পদসংখ্যা: ২০০

যোগ্যতা: যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তরসহ কম্পিউটার পরিচালনায় পারদর্শী হতে হবে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা প্রার্থীদের এবং এমআরএ লাইসেন্সভুক্ত যেকোনো এমএফআইর শাখা প্রধানের দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মোটরসাইকেল চালনায় সক্ষমতা ও বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

বয়স: ১৮-৩৫ বছর। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

বেতন: প্রশিক্ষণকাল ছয় মাস। ওই সময়ে বেতন-ভাতা ২৫,০০০ টাকা। প্রশিক্ষণ–পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে এমএফআই টিএমএসএস স্কেল অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হবে, এ ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা সর্বসাকল্যে ৪১,৭১৫ টাকা। পিকেএসএফভুক্ত প্রথম সারির ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম এক বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁদের তিন মাস শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে স্থায়ীকরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকালে বেতন হবে ৩৭,৮০০ টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল শেষে বেতন হবে ৪১,৭১৫ টাকা।

২.

পদের নাম: শাখা হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর

পদসংখ্যা: ৫০০

যোগ্যতা: যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তরসহ কম্পিউটার পরিচালনায় পারদর্শী হতে হবে। বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বয়স: ১৮-৩৫ বছর। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

বেতন: প্রশিক্ষণকাল ছয় মাস। ওই সময়ে বেতন-ভাতা ২০,০০০ টাকা। প্রশিক্ষণ–পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে এমএফআই টিএমএসএস স্কেল অনুসারে নিয়োগ প্রদান করা হবে, এ ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা সর্বসাকল্যে ৩২,৮৮০ টাকা। পিকেএসএফভুক্ত প্রথম সারির ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে শাখা হিসাবরক্ষকের কাজে ন্যূনতম এক বছর অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁদের তিন মাস শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে স্থায়ীকরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকালে বেতন হবে ২৯,৪০০ টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল শেষে বেতন হবে ৩২,৮৮০ টাকা।

৩. পদের নাম: ফিল্ড সুপারভাইজার

পদসংখ্যা: ১৫০০

যোগ্যতা: স্নাতক/সমমান। স্নাতকোত্তর পাস প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বয়স: ১৮-৩৫ বছর।

বেতন: প্রশিক্ষণকাল ছয় মাস। ওই সময়ে বেতন-ভাতা ১৫,০০০ টাকা। প্রশিক্ষণ–পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে এমএফআই টিএমএসএস স্কেল অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হবে, এ ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা সর্বসাকল্যে ৩২,৪৪৫ টাকা। পিকেএসএফভুক্ত প্রথম সারির ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে একই কাজে ন্যূনতম এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁদের তিন মাস শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে স্থায়ীকরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকালে বেতন হবে ২৯,৪০০ টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল শেষে বেতন হবে ৩২,৪৮৫ টাকা।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলে ১২০ পদে চাকরির সুযোগ০৪ মে ২০২৫

৪. পদের নাম: সহকারী ফিল্ড সুপারভাইজার

পদসংখ্যা: ৫০০

যোগ্যতা: এইচএসসি বা সমমান পাস

বয়স: ১৮-৩৫ বছর।

বেতন: প্রশিক্ষণকাল ছয় মাস। ওই সময়ে বেতন-ভাতা ১৩,০০০ টাকা। প্রশিক্ষণ–পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে এমএফআই টিএমএসএস স্কেল অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হবে, এ ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা সর্বসাকল্যে ২৭,৮১০ টাকা। পিকেএসএফভুক্ত প্রথম সারির ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে একই কাজে ন্যূনতম এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁদের তিন মাস শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে স্থায়ীকরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকালে বেতন হবে ২৫,২০০ টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল শেষে বেতন হবে ২৭,৮১০ টাকা।

৫. পদের নাম: বিনিয়োগকর্মী

পদসংখ্যা: ২০০

যোগ্যতা: স্নাতক/ ফাজিল/ স্নাতকোত্তর/কামিল পাস । তবে স্নাতকোত্তর/কামিল পাস প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মোটরসাইকেল ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইসলামের মৌলিক বিষয়ের ওপর প্রাথমিক জ্ঞানসহ ইসলামি আদর্শের অনুসারী অধূমপায়ী হতে হবে।

বয়স: ১৮-৩৫ বছর।

বেতন: প্রশিক্ষণকাল ছয় মাস। ওই সময়ে বেতন-ভাতা ১৫,০০০ টাকা। প্রশিক্ষণ–পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে এমএফআই টিএমএসএস স্কেল অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হবে, এ ক্ষেত্রে বেতন-ভাতা সর্বসাকল্যে ৩২,৪৪৫ টাকা। পিকেএসএফভুক্ত প্রথম সারির ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে একই কাজে ন্যূনতম এক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে তাঁদের তিন মাস শিক্ষানবিশ কর্মী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন সাপেক্ষে স্থায়ীকরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশকালে বেতন হবে ২৯,৪০০ টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল শেষে বেতন হবে ৩২,৪৮৫ টাকা।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে আসছে কোটাবিহীন শিক্ষক নিয়োগের বড় বিজ্ঞপ্তি০৫ মে ২০২৫এআই/প্রথম আলো

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদ র ন ম ০০০ ট ক য গ যত

এছাড়াও পড়ুন:

তফাজ্জল হোসেন: উচ্চাকাঙ্ক্ষাজনিত ক্ষয় ও বিকৃতি থেকে মুক্ত ছিলেন

তফাজ্জল হোসেন। সকলের কাছে পরিচিত ‘মানিক মিয়া’ নামে। সাংবাদিক। তবে সুপরিচিত দৈনিক ‘ইত্তেফাকে’র সম্পাদক, প্রকাশক ও মুদ্রাকর হিসেবে। জন্ম ১৯১১ সালে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া গ্রামে। পড়ালেখা শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পিরোজপুর জেলা সিভিল কোর্টে। সেখানে জনৈক মুন্সেফের বাজে আচরণের প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে বরিশাল জেলার সংযোগ অফিসার হিসেবে যোগ দেন তদানীন্তন বাংলা সরকারের জনসংযোগ বিভাগে। এর কিছুদিন পর যোগ দেন কলকাতার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অফিস সেক্রেটারি হিসেবে। সংগঠনের রাজনৈতিক প্রচারের জন্য তখন প্রয়োজন ছিল একটি আনুষ্ঠানিক প্রচারপত্রের। সেই প্রয়োজন থেকেই ১৯৪৬ সালে আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশ পায় দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’। যার নেপথ্যে ছিল মানিক মিয়ার উদ্যোগ।

দৈনিকটির পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারি হিসেবে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে যোগ দিয়ে তিনি যুক্ত ছিলেন প্রায় দেড় বছর। এই সংযুক্তিই তার পথ নির্দেশ করে দেয়। লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। গণমাধ্যম জগতের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে দৈনিক ইত্তেহাদের হাত ধরে তা  শুধু তার সাংবাদিকতা জীবনেরই নয়, দেশ-জাতির জন্য আমাদের সংবাদপত্রের ভূমিকারও দিকনির্দেশক হয়ে দাঁড়ায়।  

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে চলে আসার আগে চেষ্টা করেন পত্রিকাটিও ঢাকায় নিয়ে আসার। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের বাধার মুখে সে চেষ্টা সফল হয়নি। তিন বার দৈনিক ইত্তেহাদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি এখানে পত্রিকাটি নিষিদ্ধও করা হয়। অগত্যা কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পত্রিকাটির প্রকাশনা। তফাজ্জল হোসেনও ফিরে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে। এ সময় অর্থাৎ, ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের রাজনৈতিক মুখপত্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক-এর।
পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্ব নেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এর দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৫১ সালের ১৪ আগস্ট পত্রিকাটির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেন তফাজ্জল হোসেন। দায়িত্ব নেওয়ার দু’বছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে ইত্তেফাককে সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রূপান্তর করেন। 

ছেলেবেলাতেই সহপাঠী ও বন্ধুদের কাছে দৃশ্যমান হয়েছিল তার সহজাত নেতৃত্বগুণ। তার সঙ্গে পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর কৌতূহল, প্রজ্ঞা ও সততা খুব সহজেই তাকে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। সাংবাদিকতার সুবাদে সরাসরি রাজনীতিতে না জড়িয়েও তিনি প্রভাবক হয়ে উঠতে থাকেন।  

ভারত ভাগের পর, নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রতি মুগ্ধতাও বাঙালিদের খুব দ্রুত কাটতে থাকে। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, স্বায়ত্বশাসনের দাবিসহ নানা বিষয়ে বাঙালির মধ্যে জাতীয়তাবোধ জেগে উঠতে থাকে। সেইসঙ্গে গড়ে উঠতে থাকে সামরিক শাসনের প্রতি মানুষের প্রতিবাদ-আন্দোলন। ষাটের দশকজুড়ে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশ ও ছয় দফার আন্দোলনের নেপথ্যে থেকেছেন তফাজ্জল হোসেন ও তার সম্পাদিত দৈনিক ইত্তেফাক। ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ নামে তিনি রাজনৈতিক কলাম লিখতেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর পাকিস্তানে রাজনীতি এবং রাজনীতি নিয়ে কথা বলা নিষিদ্ধ করে দিলে বন্ধ হয়ে যায় তার এ কলাম। পরবর্তীতে তিনি ‘রঙ্গমঞ্চ’ নামে কলাম লেখেন। এছাড়া ‘মোসাফির’ ছদ্মনামেও লিখতেন। 

আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা ও সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৯৫৯ সালে এক বছর জেল খাটেন। পরবর্তীতে আবারও গ্রেফতার হন। ১৯৬৩ সালে নিষিদ্ধ হয় দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা এবং বাজেয়াপ্ত হয় নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস। ফলে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রতিষ্ঠিত ঢাকা টাইমস এবং পূর্বাণী। কিন্তু গণআন্দোলনের মুখে একসময় ইত্তেফাকের ওপর দেওয়া বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার। ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আবার প্রকাশ পায় ইত্তেফাক। 

তফাজ্জল হোসেনের ‘রঙ্গমঞ্চ’ শিরোনামে কলাম লেখার পেছনেও রয়েছে নিজস্বতা। যার নেপথ্য কথা জানা যায় সাংবাদিক, কথাসাহিতিক ও একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলাম থেকে। দৈনিক সমকালের ‘কালের আয়নায়’ কলামে ‘এত ভঙ্গ বঙ্গদেশে তবু রঙ্গে ভরা’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয়তে তিনি লেখেন, ‘‘ইত্তেফাকের তখনকার সম্পাদকমণ্ডলীর কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিলেন, রঙ্গমঞ্চ নাটক-থিয়েটারের অভিনয় মঞ্চ। মানিক মিয়া তার কলামে দেশের নানা অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবেন, সেই লেখার শিরোনাম কেমন করে অভিনয় মঞ্চ অর্থাৎ ‘রঙ্গমঞ্চ’ হয়? মানিক মিয়ার কাছে যখন এ প্রশ্নটি তোলা হলো, তিনি বললেন, অভিনয় মঞ্চ আর রাজনীতির মঞ্চ কি অভিন্ন নয়? রঙ্গমঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মুখে রংচং মেখে অভিনয় করেন। আর রাজনীতিতে নেতারা মুখে রংচং না মেখে জনগণের সামনে অভিনয় করেন। পার্থক্যটা কী? রঙ্গমঞ্চের লোকদের বলা হয় অভিনেতা আর রাজনীতির মঞ্চের লোকদের বলা হয় নেতা।’’

মানিক মিয়া কলকাতার এককালের বিখ্যাত অভিনেতা শিশির ভাদুড়ীর একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নেতা ও অভিনেতাদের মধ্যে পার্থক্য নেই। আমরা অভিনেতারা মুখে রংচং মেখে একটা বদ্ধ ঘরে দু’পাঁচশ লোককে হাসাই-কাঁদাই। আর নেতারা মুখে রংচং না মেখেই জনসভার মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার লোককে হাসান এবং কাঁদান। শিশির ভাদুড়ীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতির মঞ্চ আর অভিনয়ের রঙ্গমঞ্চের মধ্যে পার্থক্য নেই বলেই আমার কলামের শিরোনাম ‘রঙ্গমঞ্চ’ দেওয়া চলে। যতদিন পাকিস্তানে সামরিক শাসন চলছিল, ইত্তেফাকে মানিক মিয়া তার কলাম লিখেছেন ‘রঙ্গমঞ্চ’ শিরোনামে।’ [৯ এপ্রিল, শুক্রবার, ২০২১]

গণআন্দোলনে ইত্তেফাক এবং তার লেখা ছিল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জন্য অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনামূলক। সাংবাদিকতার সুবাদে সরাসরি রাজনীতিতে না জড়িয়েও তিনি হয়ে ওঠেন রাজনীতির জন্য প্রভাবক। কেমন ছিল সেই প্রভাবকের ভূমিকা? যার বর্ণনা উঠে আসে সতীর্থ রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজৈবনিক বই ‘কারাগারের রোজনামচা’য়। এ বইয়ের একাধিক পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে মানিক মিয়ার প্রসঙ্গ। তফাজ্জল হোসেন সম্পর্কে তার সেই লেখা থেকেই খানিকটা উদ্ধৃতি করছি।

১৯৬৬ সালের ১৬ জুন, বৃহস্পতিবার শেখ মুজিবুর রহমান তার ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘তফাজ্জল হোসেন সাহেবকে ভোরবেলা নিয়ে এসেছে। ১০ নম্বর সেলে রেখেছে। আমার মনে ভীষণ আঘাত লাগল খবরটায়। এরা মানিক ভাইকেও ছাড়ল না? এরা কতদূর নেমে গেছে। পাকিস্তানের সাংবাদিকদের মধ্যে তার স্থান খুবই উচ্চে। তার কলমের কাছে বাংলার খুব কম লেখকই দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে তার রাজনৈতিক সমালোচনার তুলনাই হয় না। তার নিজের লেখা ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ পড়লে দুনিয়ার অনেক দেশের রাজনৈতিক অবস্থা বুঝতে সহজ হয়। সাধারণ লোকেরও তার লেখা বুঝতে কষ্ট হয় না। তাকে এক অর্থে শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী বলা যেতে পারে।

তিনি কোনো দিন সক্রিয় রাজনীতি করেন নাই। তাঁর একটি নিজস্ব মতবাদ আছে। সত্য কথা বলতে কাহাকেও তিনি ছাড়েন না। আইয়ুব খান সাহেবও তাঁকে সমীহ করে চলেন। তিনি মনের মধ্যে এক কথা আর মুখে এক কথা বলেন না। তিনি হঠাৎ রেগে যান, আবার পাঁচ মিনিট পরে শান্ত হয়ে পড়েন। কেহ ভাবতেই পারবেন না তাহার মুখ খুবই খারাপ, মুখে যাহা আসে তাহাই বলতে পারেন। অনেক সময় আমার তাঁর সাথে মতের অমিল হয়েছে। গালাগালি ও রাগারাগি করেছেন, কিন্তু অন্য কেহ আমাকে কিছু বললে, আর তার রক্ষা নাই, ঝাঁপাইয়া পড়েন। আমাকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। আমিও তাঁকে বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করি। কোনো কিছুতে আমি সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তাঁর কাছে ছুটে যাই। তিনিই আমাকে সঠিক পথ দেখাইয়া দেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মৃত্যুর পর তাঁর কাছ থেকেই বুদ্ধি পরামর্শ নিয়ে থাকি। কোনো লোভ বা ভ্রূকুটি তাঁকে তাঁর মতের থেকে সরাতে পারে নাই। মার্শাল ল’র সময়ও তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে নেওয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে গ্রেপ্তার করার পরেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবার আজও তাঁকে গ্রেপ্তার করে এনেছে। তাঁর ওপর অনেকেরই ঈর্ষা এবং আক্রোশ রয়েছে।

এরা অনেকেই মনে করে আমি যাহা করি সকল কিছুই তাঁর মত নিয়ে করে থাকি। আমার দরকার হলে আমিই তাঁর কাছে যাই পরামর্শের জন্য। তিনি কখনও গায়ে পড়ে কোনো দিন পরামর্শ দেবার চেষ্টা করেন নাই। তবে তাঁর সঙ্গে আমার মনের মিল আছে, কারণ ২৫ বৎসর এক নেতার নেতৃত্ব মেনে এসেছি দুইজন। অনেকেই সোহরাওয়ার্দী সাহেবের সাথে বেইমানি করেছেন। আমরা দুইজন এক দিনের জন্যও তাঁর কাছ থেকে দূরে যাই নাই। পাকিস্তানের, বিশেষ করে পূর্ব বাংলার জনসাধারণের জন্য ইত্তেফাক যা করেছে তা কোনো খবরের কাগজই দাবি করতে পারে না। এদেশ থেকে বিরুদ্ধ রাজনীতি মুছে যেত যদি মানিক মিয়া এবং ইত্তেফাক না থাকত। এ কথা স্বীকার না করলে সত্যের অপলাপ করা হবে। ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি হওয়ার পর থেকে হাজার রকমের ঝুঁকি লইয়াও তিনি এদেশের মানুষের মনের কথা তুলে ধরেছেন।

ছয় দফার আন্দোলন যে আজ এতো তাড়াতাড়ি গণআন্দোলনে পরিণত হয়েছে এখানেও মানিক ভাইয়ের লেখনী না থাকলে তা সম্ভব হতো কিনা তাহা সন্দেহ! আমি যাহা কিছু করি না কেন, তাহা মানিক ভাইয়ের দোষ, সরকারের এটাই ভাবনা। ভারতবর্ষ যখন পাকিস্তান আক্রমণ করল তখন যেভাবে ইত্তেফাক কাগজ সরকারকে সমর্থন দিয়েছে এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে ত্যাগের জন্য ও মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য, ইত্তেফাকের পাতা খুললেই তাহা দেখা যাবে। তবুও আজ তাঁকে ডিপিআরএ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন বুঝতে কারও বাকি নাই কেন সরকার জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করছেন না। দেশ রক্ষা করার জন্য যে আইন করা হয়েছিল সে আইন আজ রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। খবরের কাগজের স্বাধীনতার উপর পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করিতেছে। এমনকি মানিক মিয়ার মতো সম্পাদককেও দেশ রক্ষা আইনে গ্রেফতার করতে একটু লজ্জা করলো না। তফাজ্জল হোসেন সাহেব, যাঁকে আমরা মানিক ভাই বলে ডাকি তিনি শুধু ইত্তেফাকের মালিক ও সম্পাদক নন, তিনি আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউটের পাকিস্তান শাখার সভাপতি এবং প্রেস কোর্ট অব অনারের সেক্রেটারি।’ (পৃষ্ঠা : ৯৫-৯৭)

চিন্তার পরিক্রমা যা সাধারণের চোখে তো বটেই ঝানু রাজনীতিবিদদের চোখেও স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছিলেন সেখানে ব্যতিক্রম। দেশ ও মানুষের প্রতি অবিচল আনুগত্যই ছিল তার প্রধান সম্পদ। দেশের স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের ছয় দফার প্রশ্নে যখন মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন অনুঘটকের কাজ করেছেন তফাজ্জল হোসেন এবং তার ইত্তেফাক। অকুণ্ঠ সমর্থন জারি রাখেন ছয় দফার প্রশ্নে। 

কোনো মোহ নয়, তিনি সাংবাদিকতায় বুদ্ধিকে সতর্ক রেখেছিলেন। কলমকে ভয়হীন রাখতে পেরেছিলেন। রাজনৈতিক নেতা বা দলের প্রতি অন্তিম আনুগত্য জমা রাখেননি। সাংসারিক যে উচ্চাভিলাষ অথবা স্বার্থবুদ্ধিতে আমরা যেভাবে তলিয়ে যাই, আন্তরিক সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বকেও যেভাবে পণ্য হিসেবে ব্যবহারে অভ্যস্ত হই তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ছিলেন তার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনি নিজেকে এই স্রোতে ভাসিয়ে দেননি। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করে, তার মন ও মননকে উচ্চাকাক্সক্ষাজনিত ক্ষয় ও বিকৃতি থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলেন। জাগতিক সুবিধার প্রত্যাশা করেননি। নিজস্বগুণে নির্মোহ থাকার যে মূল্যবোধ, তাই তাকে আমৃত্যু আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা করেছে।

মামুন রশীদ : কবি ও সাংবাদিক
 

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রসূতির মৃত্যু: রাজবাড়ীতে রতন ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার সাময়িক বন্ধের নির্দেশ
  • পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের বহু ফ্লাইট বাতিল
  • কোচ নিয়োগের সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে, জানাল সিবিএফ
  • তফাজ্জল হোসেন: উচ্চাকাঙ্ক্ষাজনিত ক্ষয় ও বিকৃতি থেকে মুক্ত ছিলেন
  • ছয় বিভাগে তাপমাত্রা বাড়বে, কিছু এলাকায় বৃষ্টির আভাস
  • বরিশালে আদালত কর্মচারীদের ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি
  • টাঙ্গাইলে ৭৮ লাখ টাকা ডাকাতি, মূলহোতা সাগর বাড়ই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার
  • দ্বিতীয় দিনেও ক্লাসে যাননি কুয়েটের শিক্ষকরা, আজ বৈঠক
  • আমরা এটা সহ্য করব না, কঠোর প্রতিশোধ নেব: নেতানিয়াহু