পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় করিডর দেওয়ার আগে বাংলাদেশের জনগণের রায় লাগবে; বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল রাজনীতি করছে, তাদের রায় লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় মির্জাপুর ইউনিয়নে বার আউলিয়ার মাজারে বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন সারজিস।

সারজিস আলম বলেন, ‘করিডর ছোট কোনো বিষয় নয়। এর আগে পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, করিডরের নামে বিদেশি বা গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট এসেছে, বিভিন্ন দেশ ঢুকছে, ইউএন ঢুকেছে, ইউএনের নামে বিভিন্ন ধরনের সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনার মানুষ ঢুকেছে। এই সুযোগ বাংলাদেশে তৈরি হতে দেওয়া হবে না। এটি একটি জাতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একা নিতে পারে না।’

দেশের অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে মামলা–বাণিজ্যের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, দেশের জেলা, বিভাগীয় শহর, মেট্রোপলিটনসহ সব এলাকায় এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে মিথ্যা মামলা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের নামে মামলা, বিচার ও দৃশ্যমান শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা কখনো চাই না একজন নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হোক।’

মামলা–বাণিজ্যের কৌশল নিয়ে এই এনসিপি নেতা বলেন, প্রথমে মামলাটি সাজানো হয়। এরপর ৫ থেকে ৬ জনের একটি চক্রের সদস্যেরা মিলে একটি লিস্ট (তালিকা) করে; ওই লিস্টের লোকগুলোকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘আপনার নামটা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। যদি চান যে না দিই, তাহলে ২ বা ৫ লাখ টাকা দেন। একটা ব্যবসা গেল, যা প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে মামলায় নামটা যুক্ত করে, পরে ফোন দিয়ে জানায় ‘মামলায় নামটা আমরা কাটাব, এফআইআর করার আগে কাটানোর জন্য আপনি ২, ৫ বা ১০ লাখ টাকা দেন।’ এরপর মামলা যখন আদালতে চলে যায়, তখন আরেক ধাপে টাকা নেওয়া হয়। এই মামলা–বাণিজ্য সরাসরি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা করছেন। তাঁদের বিভিন্নভাবে সঙ্গ দিচ্ছে পুলিশ।

মামলা–বাণিজ্যের বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী বা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী মানুষজনকে টার্গেট করা হয়। বলা হয়, ওই ব্যক্তি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শেল্টার দেবেন তাঁরা। এর বিনিময়ে তাঁদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়। মামলার নামে কোটি কেটি টাকার এই বাণিজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন সুবিধাভোগী বাংলাদেশে ছিলেন, এর মধ্যে তিনি (আবদুল হামিদ) অন্যতম। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি কত কিছু করেছেন, তার প্রমাণ অনেক জায়গায় আছে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে বলে জানান সারজিস আলম। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে কখনোই পার্শ্ববর্তী দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগার বিষয়টি প্রত্যাশা করি না। উপরন্তু এই দুটি রাষ্ট্রই হচ্ছে পারমাণবিকভাবে শক্তিধর।’

সারজিস বলেন, ‘তাদের (ভারত-পাকিস্তান) সঙ্গে শুধু আমাদের বাণিজ্যিক-আন্তর্দেশীয় সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, পাশাপাশি পরিবেশটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি, এর আগে পৃথিবীতে যেখানেই যুদ্ধ হয়েছে, পাশের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং আমরা চাই এটি যেন না হয়। তারা নিজেদের জায়গা থেকে ধর্মীয় উসকানিকে যেন ব্যবহার না করে।’

মাজারের বিষয়ে এনসিপি নেতা বলেন, ‘সত্যিকারের অলি–আউলিয়ার যেসব মাজার আছে, সেগুলোর প্রতি আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার জায়গা থেকে শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। আমার পছন্দ হচ্ছে না বলে আমি সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাব; সেটি নষ্ট করতে যাব—এগুলো কাম্য নয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বরগুনার পূর্বের তিনটি আসন পুনর্বহাল দাবি 

বরগুনার পূর্বে বিদ্যমান তিনটি আসন পুর্নবহালের দাবি জানিয়েছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বরগুনার তিনটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

এ সময় লিখিত বক্তব্যে বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, “এ জেলায় প্রায় ১১ লাখ ভোটার। অষ্টম জাতীয় নির্বাচনের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কিছু সুবিধাভোগী নেতা বরগুনাবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তিন আসনকে বিলুপ্ত করে দুটি আসন করে।”

তিনি বলেন, “এই দাবি শুধুই একটি জেলার পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন পুর্নবহালের দাবি নয়, এটি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের কণ্ঠস্বরের দাবি।আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বরগুনার পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন ফেরত দেন, বরগুনার অধিকার ফিরিয়ে দেন। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন এবং অবহেলিত বরগুনা জেলাবাসীর সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেন।”

শাহীন বলেন, “আমরা আমাদের ন্যায্য দাবিতে হাইকমিশনারে রিট করেছি। প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার এই ১১ লাখ ভোটারদের দাবি আমলে নিয়ে এ জেলায় তিনটি আসন পুনর্বহাল করবে।”

তিনি বলেন, “বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা, নয়টি খরস্রোতা নদীবেষ্টিত এক অনন্য জেলা বরগুনা। এই জেলার নদী, খাল, উপকূল, কৃষি ও মৎস্য সম্পদ শুধু বরগুনার নয় বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্লু-ইকোনমির ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বরগুনা জেলার নির্বাচনি সীমানা পরিবর্তনের কারণে আমরা পূর্বের তিনটি সংসদীয় আসন হারিয়েছি। সংসদে বরগুনার জনগণের প্রতিনিধিত্বের অধিকার হারিয়েছি, উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছি।”

শাহীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আমরা বরগুনাবাসী কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করব, ইনশাআল্লাহ।”

সংবাদ সম্মেলনে জেলার রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন পেশাজীবি এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত: নাহিদ ইসলাম
  • বাগেরহাটে আসন বহালের দাবিতে ফের বিক্ষোভ 
  • ‘নির্বাহী আদেশে নয়, আ.লীগকের আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে’
  • হাসিনা আমলের পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প এখনো কেন চলছে
  • সরকার একটি দলের পকেটে ঢোকার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম
  • ‌দূষণকারীদের নাম প্রকাশে আনুন, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের মনের ভাষা বুজতে হবে: গয়েশ্বর রায়
  • যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক 
  • পিআর পদ্ধতি চাইলে জনগণের কাছে যান: ডা. জাহিদ
  • বরগুনার পূর্বের তিনটি আসন পুনর্বহাল দাবি