করিডর দেওয়ার আগে বাংলাদেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলের রায় লাগবে: সারজিস আলম
Published: 8th, May 2025 GMT
পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় করিডর দেওয়ার আগে বাংলাদেশের জনগণের রায় লাগবে; বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল রাজনীতি করছে, তাদের রায় লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় মির্জাপুর ইউনিয়নে বার আউলিয়ার মাজারে বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন সারজিস।
সারজিস আলম বলেন, ‘করিডর ছোট কোনো বিষয় নয়। এর আগে পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, করিডরের নামে বিদেশি বা গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট এসেছে, বিভিন্ন দেশ ঢুকছে, ইউএন ঢুকেছে, ইউএনের নামে বিভিন্ন ধরনের সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাভাবনার মানুষ ঢুকেছে। এই সুযোগ বাংলাদেশে তৈরি হতে দেওয়া হবে না। এটি একটি জাতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একা নিতে পারে না।’
দেশের অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে মামলা–বাণিজ্যের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, দেশের জেলা, বিভাগীয় শহর, মেট্রোপলিটনসহ সব এলাকায় এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার হচ্ছে মিথ্যা মামলা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের নামে মামলা, বিচার ও দৃশ্যমান শাস্তি হবে। কিন্তু আমরা কখনো চাই না একজন নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হোক।’
মামলা–বাণিজ্যের কৌশল নিয়ে এই এনসিপি নেতা বলেন, প্রথমে মামলাটি সাজানো হয়। এরপর ৫ থেকে ৬ জনের একটি চক্রের সদস্যেরা মিলে একটি লিস্ট (তালিকা) করে; ওই লিস্টের লোকগুলোকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘আপনার নামটা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। যদি চান যে না দিই, তাহলে ২ বা ৫ লাখ টাকা দেন। একটা ব্যবসা গেল, যা প্রথম ধাপ। দ্বিতীয় ধাপে মামলায় নামটা যুক্ত করে, পরে ফোন দিয়ে জানায় ‘মামলায় নামটা আমরা কাটাব, এফআইআর করার আগে কাটানোর জন্য আপনি ২, ৫ বা ১০ লাখ টাকা দেন।’ এরপর মামলা যখন আদালতে চলে যায়, তখন আরেক ধাপে টাকা নেওয়া হয়। এই মামলা–বাণিজ্য সরাসরি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা করছেন। তাঁদের বিভিন্নভাবে সঙ্গ দিচ্ছে পুলিশ।
মামলা–বাণিজ্যের বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সারজিস বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী বা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী মানুষজনকে টার্গেট করা হয়। বলা হয়, ওই ব্যক্তি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শেল্টার দেবেন তাঁরা। এর বিনিময়ে তাঁদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়। মামলার নামে কোটি কেটি টাকার এই বাণিজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগের যে কয়েকজন সুবিধাভোগী বাংলাদেশে ছিলেন, এর মধ্যে তিনি (আবদুল হামিদ) অন্যতম। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি কত কিছু করেছেন, তার প্রমাণ অনেক জায়গায় আছে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে বলে জানান সারজিস আলম। তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে কখনোই পার্শ্ববর্তী দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগার বিষয়টি প্রত্যাশা করি না। উপরন্তু এই দুটি রাষ্ট্রই হচ্ছে পারমাণবিকভাবে শক্তিধর।’
সারজিস বলেন, ‘তাদের (ভারত-পাকিস্তান) সঙ্গে শুধু আমাদের বাণিজ্যিক-আন্তর্দেশীয় সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, পাশাপাশি পরিবেশটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখেছি, এর আগে পৃথিবীতে যেখানেই যুদ্ধ হয়েছে, পাশের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং আমরা চাই এটি যেন না হয়। তারা নিজেদের জায়গা থেকে ধর্মীয় উসকানিকে যেন ব্যবহার না করে।’
মাজারের বিষয়ে এনসিপি নেতা বলেন, ‘সত্যিকারের অলি–আউলিয়ার যেসব মাজার আছে, সেগুলোর প্রতি আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার জায়গা থেকে শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। আমার পছন্দ হচ্ছে না বলে আমি সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাব; সেটি নষ্ট করতে যাব—এগুলো কাম্য নয়।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের
সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচন আর চলবে না। ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচন দেশের জনগণ মেনে নেবে না। সরকারকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
আজ শনিবার সকালে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনের দায়িত্বশীলদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন এই জামায়াত নেতা।
সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, ‘দেশ ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। জনগণের মধ্যে আশাবাদী আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মৌলিক সংস্কার এখনো হয়নি। দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ চাই আমরা। কেউ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুয়াযযম হোসাইন। সভাপতির বক্তৃতায় মুয়াযযম হোসাইন বলেন, মানুষ অনেক দলকে দেখে হতাশ হয়েছে, এখন ইসলামী শাসন দেখতে চায়। জামায়াতই এখন জনগণের মনের চাওয়া।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম, বরিশাল মহানগর আমির জহির উদ্দিন, বরিশাল জেলা আমির আবদুল জব্বার, পিরোজপুর জেলা আমির তোফাজ্জেল হোসেন, ঝালকাঠি জেলা আমির হাফিজুর রহমান, ভোলা জেলা আমির জাকির হোসাইন, পটুয়াখালী জেলা আমির নাজমুল আহসান এবং বরগুনা জেলা আমির মহিব্বুল্লাহ হারুন।
২১ আসনে প্রার্থী ঘোষণাসমাবেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১টি আসনে জামায়াত মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়। জেলাগুলো হলো বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর।
২১ আসনে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বরগুনা-১ (বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী) মুহিবুল্লাহ হারুন, বরগুনা-২ (বেতাগী, পাথরঘাটা, বামনা) সুলতান আহমেদ; পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকি) নাজমুল আহসান, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) শফিকুল ইসলাম, পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা, দশমিনা) অধ্যাপক শাহ আলম, পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী) এম কাইউম; ভোলা-১ (ভোলা সদর) নজরুল ইসলাম, ভোলা-২ (দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন) মাওলানা ফজলুল করিম, ভোলা-৩ (তজুমদ্দিন, লালমোহন) মাওলানা আবদুল হক ও নিজামুল হক, ভোলা-৪ (মনপুরা, চরফ্যাশন) মুস্তফা কামাল; বরিশাল-১ (গৌরনদী, আগৈলঝাড়া) মাওলানা কামরুল ইসলাম, বরিশাল-২ (উজিরপুর, বানারীপাড়া) মাস্টার আবদুল মান্নান, বরিশাল-৩ (মুলাদী, বাবুগঞ্জ) জাহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, বরিশাল-৪ (মেহেন্দঅগঞ্জ, হিজলা) মাওলানা আবদুর জব্বার, বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর, সিটি করপোরেশন) মুয়াযযম হোসাইন, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) মাওলানা মাহমুদুন্নবী; ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর, কাঁঠালিয়া) হেমায়েত উদ্দিন, ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর, নলছিটি) শেখ নেমাতুল করিম; পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর, জিয়ানগর) মাসুদ সাঈদী, পিরোজপুর-২ (কাউখালী, ভান্ডারিয়া, নেছারাবাদ) শামীম সাঈদী ও পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) শরীফ আবদুল জলিল।